কালিমাটির ঝুরোগল্প |
বেড়াল
পাঁচিলের ওপর দিয়ে বেড়ালটা গদাইলশকরি চালে হেঁটে
আসছিলো। ভাবখানা এমন যে, বিশ্বসংসার ঘুরে
দেখতে বেরিয়েছেন। বেশীদূরে যেতেও হবে না - ওই কার্ণিশটার উপরে পৌঁছতে না পৌঁছতেই
ধপাস হয়ে যাবেন। ল্যাজটি গুটিয়ে কুন্ডলী হয়েই নিশ্চিন্ত দুপুরের ঘুম।
মার্জার-মার্জারিণীর সুখ।
মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকদের নিয়ে জনগণের দরদ দেখে আর
বাঁচিনে. বছরের পঁচিশটা করে সপ্তাহেই সিসিডি-কি-বারিস্তার নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে বেড়ে
ওঠা একেকজন, ইমোশনাল বুলি কপচাচ্চে খুব। সোশ্যাল এ্যাক্টিভিজমের নামে বাপ-বাপান্ত হচ্ছে
নেতাদের। এদল-ওদলে কান পাতা যাচ্ছে না।
বেড়ালদের গায়ে লাগে না এসব।
নেতারাও তো বুঝি বা ওই বেড়ালদের মতোই। সারাটাবছর
শীতঘুমের পর, কেবল ওই ভোটপাব্বণের
সময়টিতে এসেই গলবস্তর হয়ে ঘুরে বেড়ানো, চেলাচামুন্ডা পরিবেষ্টিত হয়ে হাতজোড় করে
দাঁড়ানো। বেড়ালেরা অবিশ্যি গোষ্ঠী পছন্দ করে না একেবারেই। সাফসুতরো একেকজন ধবধবে
চকচকে নেতাকে দেখলে পরেই কেন জানিনা আমার,
একেকটা পুরুষ্টু হুলোবেড়ালের কথা মনে পড়ে। থাবা চাটছে বলে মনে হয়।
পাঞ্জাবীর উপরে দুহাত-ভাঁজ করে লরিতে চাল ওঠার
তদারক করছিলো দুএকজন। চোখের উপরে নরম সানগ্লাসের আবরণ। রোদ পড়লেও যেন বা পিছলিয়ে
যায়। ত্রাণ যাবে, অনেকটা দূরের পথ। আজ রাতের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া চাই। ডিএম
সাহেবকেও বলে দেওয়া হয়েছে। রোয়াকের উপরে বসে থাকা রোমশ কাবুলীটিও জিভ বের করে
করে, ঠোঁট চাটে কেমন। সামনের থাবা দুখানিকে বের করে বসে। আজ রাতে মাংসের ভোজ হবে।
বেড়ালবাহিনীর সুখের সময় আজ।
নেমকাহারামের দল বলে ওদের গালাগালি দাও যতই, আদরে
সোহাগে ওরাই ঠিক কাজ আদায় করে নেবে। আবার ওদের মধ্যেই একেকজন, বেঘোরে গাড়ির তলাইয়...
ক্রীইইইইঅচ! মৃত্যু তো জীবনের মতোই, স্তরবিশেষ - লেয়ারড একেকটি সত্যের উপলব্ধি কেবল।
পাঁচিলের ওপর দিয়ে বেড়ালটা গদাইলশকরি চালে হেঁটে
আসছিলো। দুপুরের রোদ পড়ে গেছে। অতটাও গরম নেই। সামনের পাদুখানিকে টান করে নিয়ে, পুরুষ্টু ল্যাজটিকে নিশ্চিন্তে পেটের তলায়
ঢুকিয়ে থেবড়িয়ে বসতে চাইলো। ফুরফুরে
গোঁফগুলিও সেই হাওয়াতে মাথা দোলায়। চকচকে দুখানি চোখ। মানুষের মতোই,
দুধ-মাছ-আদরের লোভ। এদেরকে চিনে নিতেও অসুবিধে হয় না আজ। পাঞ্জাবীর ওপরে
দুহাত-ভাঁজ করে রাখা একেকজন মানুষ – তাদের পিছনেই বা আরো কোনও বড় নক্ষত্রের হদিস? আকাশের
দিকে তাকাই, অজস্র দুচোখের মতো অজস্র ফুটফুটে তারাদের, আলোদের বেনজির সমাহার দেখি
- যেন বা জড়োয়া জমিতে গয়নার মতো - যেন বা বালুচরীর খোলা আঁচলটুকুতে, চুমকির
অলঙ্কার। অজস্র বেড়ালের চোখ। মিটমিট করে কেবল...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন