ঝুরোগল্প |
একদিন প্রতিদিন
রসগোল্লাটা
মুখে আস্ত পুরে দিতেই বৃষ্টি শুরু হয় অথবা বৃষ্টি শুরু হতেই আমি রসগোল্লাটা খেতে শুরু
করি। ভালো লাগার একটা কাঠিদৌড় শুরু হয়। বৃষ্টির লাবণ্য নিয়ে আমাদের পক্ষপাতিত্ব মাত্রাতিরিক্ত।
এই যেমন যে মেয়েটা পরিপাটি করে মাথা আঁচড়িয়েছে,
তার যত্ন করা চুল যাবে ভিজে। যে মেয়েটা টিফিনক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে ছুটছে, তার
হেঁটে গেল চলত, এখন ছুটতে হবে ভিড়বাসের দিকে। ঢাকা শহরে মেয়েদের বাস চড়া মানেই হলো
কারও না কারও গায়ে হাত দেয়া।
এই
মেয়েটার একটা এক্সট্রা দায়িত্ব আছে। কারখানায় তাকে নিজের খাবারের অতিরিক্ত সুপারভাইজারের
জন্য খাবার নিতে হয়। সুপারভাইজার কারণে অকারণে চাকরি খাবার ভয় দেখায়।
রসগোল্লাটা
মুখে থাকার সুবিধাটা হলো সমস্ত স্বাদটুকু একসাথে উপভোগ। বৃষ্টি কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের
নোংরা বের করে দেবে, শুরু হবে অ+সহনীয় জলাবদ্ধতা। মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে, তাতে কিছু
আসে যায় না। নির্বাচনী অফিসে ধাড়াক্কা ধুমগান বাজছে, বিবর্ণ চেহারার দুটো ছোট মেয়ে
বেখাপ্পা নাচছে তালে। বৃষ্টি ছাপিয়ে লোকজন মজা নিচ্ছে। লোকজনদের হাতে মোবাইলে ফোন। জানালা দিয়ে
দেখতে পাচ্ছি ছবি তুলছে বা ভিডিও করছে। বৃষ্টির তীরে থেমে নেই কিছু।
কোন এক মোল্লা কাজী নজরুলকে স্বপ্নে দেখেছেন তার ওয়াজ ফেসবুকে
ভাইরাল হয়েছে। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে মন বসছে না। এই বৃষ্টিতে কে যেন দরজায় খটখটাচ্ছে।
ভুল শুনিনি তো? কান ছুঁড়ে দিলাম বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে দরজার শব্দের দিকে।
দরজা খুলতে দেখি কমিশনার পদপ্রার্থী এক মোলায়েম লোক ভোট চাইতে
এসেছেন। যদি ঢাকা শহর থেকে ডেঙ্গুজ্বর, দুর্নীতি আর লুটপাট সরাতে চাই তাহলে যেন তাকে
ভোট দিই। হবু কমিশনার দলে বলে চলে গেলেন। আমি দরজা খুলে সেদিকে
তাকিয়ে থাকি। মানুষের আগমন আর প্রস্থানে ব্যাপক পার্থক্য আছে। মুখে আর রসগোল্লাটা নেই,
স্বাদ আছে মিষ্টির। একবার মনে হলো আগমনের একটা সৌন্দর্য আছে, চলে যাবার মাঝে বিষণ্ণতা।
আবার ভাবি সূর্যের মতোই হয়ত এই আসা যাওয়া। আমার কাছ থেকে চলে যাওয়া মানে অন্য কারো
কাছে আগমন। তার মানে আসা যাওয়া নেই কোথাও। সবকিছু চলমান। বহতা।
দরজা বন্ধ করে টেবিলের উপর পড়ে থাকা খবরের কাগজটা চোখে পড়ে আবার।
কাগজটা তুলে খেলার পাতা উল্টাই। ভারতীয় ক্রিকেটারদের এক বছরের চুক্তি নবায়ন হলো। তিনজন
ক্রিকেটার বছরে ৭ কোটি রুপি করে পাবেন। টাকার অংকটা আবার পড়লাম।
একজন বয়াতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আচ্ছা আগে কখনো কি কোন বাউলবয়াতি
গ্রেফতার হয়েছে? মনে পড়ে না।
বিস্কুট টেক্সট করেছে সে ক্যাম্পাস
থেকে গা ঢাকা দিয়ে আছে। ওর নাম বেলাল। আমরা ওকে বিস্কুট বলে ডাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের
গণরুমে বড়ভাইদের টর্চার নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করাতে বড় ভাইরা ওকে খুঁজছে। টেক্সট পড়ে
একটা ভয়ের সুরলহরী ছড়িয়ে পড়ে আমাদের চারপাশে। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। যাবারই কথা। অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়ল ঘরে। পেপারটা আর পড়ছি না।
মনের মানুষ না হলে এরকম লেখা যায়!
উত্তরমুছুন