ঝুরোগল্প |
বাতাসপুর
খোয়াইকে মনে পড়ে লাবণ্য’র। লাবণ্য’র মনে পড়ে খোয়াইকে। প্রথম যে’বছর
খোয়াইয়ের
কবিতা বেরুলো বইমেলায় – লাবণ্যের খুশির অন্ত ছিলো না। প্রকাশনা সংস্থা থেকে
লেখক-কপিটা সংগ্রহ করে বেরোতেই, খোয়াইয়ের হাতদুটোকে কী অসম্ভব একটা স্নেহে
ভালোবাসায় সে জড়িয়ে ধরেছিলো। বড় বড় চোখ মেলে সে তাকিয়েছিলো খোয়াইয়ের
চোখদুটোয়। একটা অসম্ভব গভীরতা। লাবণ্য যদি আজকের সব কথাগুলোকে গুছিয়ে
গুছিয়ে,
ধরে ধরে, একটা একটা করে লিখে রাখতে পারতো! লাবণ্য মুখ নামায়, ওর হাতের উপরে
খোয়াইয়ের হাত...
লিটল ম্যাগাজিনের সাজানো চত্বরটা তখন জমজমাট। খোয়াই মাথা নীচু করে
দাঁড়িয়েছিলো
একপলক। মেলার সাউন্ডবক্সে রবীন্দ্রনাথের গান বাজছিলো তখন। ‘দূরে কোথাও দূরে
দূরে’
হারিয়ে যাবার গান। লাবণ্য অল্প রাগ দেখায়, “কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি তোমার
জন্য,
তোমার পাত্তা নেই”। খোয়াই তার হাতদুটোকে
চেপে ধরলো হঠাৎ। একুশ শতকের শারদ
সংখ্যায় লাবণ্য’র আঁকা ছবি বেরিয়েছে – সাদাকালোর কোলাজে। একাডেমিতে ওদের
গ্রুপ
শো রয়েছে সেপ্টেম্বরে। খোয়াই তখন শহর ছেড়ে যাবেই না কোথাও...
সব চরিত্র কাল্পনিক। মিলনমেলার তিন নম্বর গেটের ওপাশটায়, যখন সেই সাততারা
হোটেল-বাড়িটা একটু একটু করে মাথা তুলছিলো – যখন সেই উঁচু হয়ে ওঠা ক্রেনের
আলোতে বইমেলা উদ্ভাসিত হয়ে উঠতো হঠাৎ, লাবণ্য’র মনে পড়ে সেই সব দিন। তখনও
খোয়াইয়ের সাথে আলাপ হয়নি তার। খোয়াইও তখন খুঁজে
পায়নি তার শান্তিনিকেতন।
এরপর, একেকটা করে বছর কাটবে – বইমেলা উঠে আসবে সেন্ট্রাল পার্কের আশ্রয়ে।
লাবণ্য’র সাথে তার ‘পূর্বপল্লী’র দেখা হবে হঠাৎ। দখিন হাওয়ার বারান্দায়,
ঝলমলিয়ে উঠবে
ফুল, হলুদ চন্দ্রমল্লিকা অথবা রঙবেরঙের ক্রীসানথীমাম – নীলের ওপরে সাদার
ছোপ,
বসন্তকালের গান...
“তুমি লাবণ্য হবে আমার ?” ময়ূরাক্ষীকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো অনিমেষ। ৩১শে
ডিসেম্বর,
২০১৯ – এবারের বইমেলাতেও লেখা বেরুবে অনিমেষের। ময়ূরাক্ষী ওর মুখের দিকে
তাকায়।
মুখ নামিয়ে নেয়। “লাবণ্য যদি তোমায় অপ্রস্তুত করে কোনোদিন? কোনোসময়?”
অনিমেষ
জ্বলজ্বলে চোখে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। “ময়ূরাক্ষী, আমিই তখন বাতাসপুর হবো
তোমার!”
অনিমেষ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, তার পলক পড়ছে না। “তাহলে লাবণ্য নয়, ময়ূরাক্ষীই
আমার নাম – সেটাই থাকুক বরং,” এইটুকু বলেই মেয়েটি চুপ করে গেলো। অনিমেষ তখন
একটা ছাপা বই তার হাতে তুলে দিলো। ঝকঝকে নতুন মলাটের
উপরে বড়ো বড়ো হরফে
নামটা জ্বলজ্বল করছে, ‘বাতাসপুরের কবিতা’ – আর ভেতরে উলটিয়ে মেয়েটি দেখলো,
উৎসর্গপত্রে লেখা রয়েছে...
‘ময়ূরাক্ষীকে, খোয়াই...’
বইটাকে বুকে চেপে ধরে
চোখ বুজলো মেয়েটি। অনিমেষ গঙ্গার দিকে তাকায়...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন