কবিতা |
তেরোনাম্বার রুমে তেরোশত নদীর গল্প
তেরো নাম্বার রুমে কবিতা নিয়ে ওঠেছে অচেনা কৃষক
এবারের বইমেলায় কবিতা নিয়ে যাইনি আমি
এবারের বইমেলায় কবির ছায়া নিয়ে গিয়েছি
তেরো নাম্বার রুমে, রাত দেড়টায়
সমগ্র শহর ঘুরে
তেরো নাম্বার সিগনাল পেরুতে পেরুতে
তেরোবার, তেরোশত নদীর দেশে
কবিতা নিয়ে যাইনি, কবির জামা, কবির
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে এসেছি
পৃথিবীর কবিরা কি ঘুমিয়েছিল তখন? রক্তাক্ত প্যালেস্টাইন, উদ্বাস্তু, মায়ানমার, কাশ্মীর?
রূপসা থেকে তেঁতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন
শাহবাগ, কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান?
সুরমা কিংবা কুশিয়ারার তীরে, সোমেশ্বরী পুনর্ভবার জলের কিনারে?
তেরোনাম্বার রুমে তেরোটি মোমবাতি জ্বালিয়ে এসবই দেখতে চেয়েছি আমি
কবিতাকে দেখতে চেয়েছি কবিতার স্বরূপে, ভেতরে-বাহিরে
তখনও ঢাকা শহর ঘুমোয় নি
তখনও জেগেছিল রাজধানীর কুকুর
নিয়নবাতি, দূরপাল্লার বাস, তেরোরকম মানুষ
ঘুণেধরা ক্ষীয়মান সন্তাপ!
আমি পাড়াগাঁ থেকে নিয়ে এসেছি, আমার, আমাদের অমল অতীত
নিয়ে এসেছি হাজার বছরের প্রাচীন পবিত্রলিপি, মানুষের মহত্বের শিলালিপি
এদেশ ধানের দেশ, কবিতার দেশ
অথচ, এদেশে কবিরা অনাহারে থাকে, কবিতা ও বিবেক হারিয়ে যায়, জায়নবাদী মনোবৃত্তির কাছে, পরিবর্তনশীল পলায়নবাদিতার কাছে
এদেশ গানের দেশ, ছবির দেশ
এদেশে ছবিরা অন্ধকারে মানুষের মত কাঁদে
আমি যত অপচয় করেছি সময়
আমি যত বুকে বিঁধে নিয়েছি কাঁটা
যত রক্তপাত হয়েছে আমার নিঃশ্বাসের, নৈঃশব্দ্যের
আর যত জল গড়িয়েছে গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গার
অন্ধকারে যত আগুন জ্বলেছে ঠোঁটে
সব সব ফুটে আছে পৃথিবীতে মানুষের ভাষা হয়ে, আরক্তিম অবয়ব হয়ে
আমার দুঃখগুলো পাতাঝরা সকাল
আমার কষ্টগুলো শীতার্ত বিকেল, আরতি সন্ধ্যার
ব্রিজ থেকে ব্রিজের, দেরিদা থেকে ফুকোর, ধ্বনিপুঞ্জের আর্তচিৎকার!
আমার কোনও ঘর নেই, প্রকৃত কোনও বাড়িও নেই
একশিবির থেকে আরেক শিবিরে আমি রক্তাক্ত পিঠ ঠেকিয়ে অব্যক্ত আর্তনাদ
করি, দিনমান সমস্ত কান্না, সমস্ত বেদনা পুড়িয়ে পুড়িয়ে অতঃপর পথচলি।
সবুজ ধানের ক্ষেত আমি বুকে নিয়ে এসেছি, নিয়ে এসেছি চিরন্তন সবুজ-শ্যামল হাওয়া
সবুজ হাসি, সবুজ শিশুর মুখ শহরের দেয়ালে দেয়ালে, গলিতে গলিতে সার সার বৃক্ষের শাখায় লুকোনো রয়েছে, আমি সেই হাসি, সেই সরল আত্মগরিমা খুঁজি
আর তেরোনাম্বার রুমে তেরোটি প্রদীপ জ্বালিয়ে কবিতার কথা বলি, ব্রাত্যজীবনের অনন্য অহম ওড়াই
যখন বিষাদ ছুঁয়ে নামে, আর যখন গোধূলি হয়, কালোমহিষের মত ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দেয়, অন্ধ তার আস্ফালন
আমি সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিই
ঝড়ের কবল থেকে, অপরিনামদর্শী অমঙ্গল থেকে নিজের জবান খোলে প্রকৃতির পাঠ নিই
কী বাহারি ঢেউ আমার দেশের হেমন্তের সোনারমোহরদানা
কী অপরূপ ঝিঁলিক ঠোঁটের অমল সন্ধ্যা বেলা
আমি সেসব তেরোনাম্বার রুমের দেয়ালে দেয়ালে এঁকে নিয়েছি কবিতা করে আমার মায়ের ছবি করে
অই দ্যাখো, তেরোনাম্বার রুম তেরোটি শালিক হয়ে, তেত্রিশকোটি বছর ধরে তেরোশত নদীর গল্প সাজাচ্ছে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন