বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

অগ্নি রায়




অলৌকিক পার্চমেন্টের ঘ্নাণ





তোমার বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে আমার বরাবরই দেরি হয়ে যায়। হাজার বছরের মনীষার আলো অন্ধকার টানেল পার হয়ে অন্ধের মত হাতড়ে হাতড়ে যাওয়া তো! একটি অক্ষর থেকে অন্য অক্ষরে পা দিয়ে, বড় সাবধানে চলার এই  টানেলের পাশে জংলা ঘাসের মত প্রতিষ্ঠানের প্রমাদ। পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনার মধ্যেই মিশে থাকে অচেনা হাতের বরাভয়। উতরোল এই উৎসবের মধ্যে চা রঙের বিকেল হল। ক্লান্ত অ্যানাউন্সমেন্ট থেকে উড়ে যাচ্ছে সুসংবাদ। যত ভিড় ততোই নাছোড় হয়ে চেপে বসছে এই আকেলাপন। তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে সোজা এসে একশো বিয়াল্লিশ নম্বর স্টল পার হলেই দেখবো তুমি বাইরে বসে আছো। সেলফিপ্রাণ মানুষ ঘিরে রেখেছে তোমার আভাতিবেলা লবণাম্বুরাশে!  লাতিন আমেরিকার স্টলে কলঙ্করেখার মত জেগে উঠছে জাদুবাস্তবতার রাত। রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে অ্যাপ বিক্রি করছে ডেনিম যুবতী।     

এ সবের মধ্যে শৈশবের বই কেনার রোমাঞ্চ নিয়ে ফিরে এলে তো পারো পতঙ্গপ্রাণ! মৃত কবিরা তাকিয়ে আছেন টের পাই। পিঠের কাছে কার যেন হাত। শিরশির করে স্নায়ুকলকারখানায়। মায়াকুচির মত শীত লেগে থাকা বাতাসে ঝরা ফুলের মত পংক্তিমালা ছুঁড়ে মারছেন তাঁরা। কোথাও ধুলোশিশির আড্ডা চলছে। মাটি ফুঁড়ে উঠছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুমুখ। কোথাও নতুন টেরাকোটা কানের দুল অথবা কাঁধে বিড়ম্বিত ট্যাটু-র উৎকন্ঠা। কোথাও কেউ আজ যেন মেরুন বাইলুম হয়ে আকাশে বইয়ে দিয়েছে আঁচল। গিল্ডের সামনে কেউ কি আমার জন্য অপেক্ষা করে ছিল? জানা যাবে না কখনই।

বই-শিকারিদের সঙ্গে ভিড়ে স্টলের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে জানি বাবার হাত ফিরে আসবে কখনও। অন্তত একবার। ইতস্তত আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবে মলাট। নাগরদোলার মতন সময়ের এ এক বৃত্তপাক যেন। মেলা তো কখনও একা আসে না। তোমাকে নিয়ে আসে। আনে অসুখ আর ক্লান্তি, বিপণন, মস্করা, বিরহ-বিপ্লব, কফি সভ্যতা, পায়ের ব্যথা আর অলৌকিক পার্চমেন্টের গন্ধ। পান্ডুলিপির ধার ঘেঁষে আমাকে পাহারায় বসিয়ে চলে গেছে বসন্ত সময়, রচনাকৌশল, গিটারের নীল রিড। আমি হাতে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কোথাও পৌঁছাতে পারছি না। কোথাও কি পৌঁছানোর ছিল? এই মেলা আমাকে পুরোপুরি আত্মস্মাৎ করে ফেলার আগেই আমি তাকে বোতলের লিমকায় মিশিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে থাকি।

৩টি মন্তব্য: