শ্রোডিংগারের প্রেমিকরা
সে শহরের উঠতি লেখিকা। সে যখন প্রথম প্রেমিকের সাথে চ্যাট
করে তখন জুঁই-এর সুবাস দেওয়া আতর মাখে। আর যখন দ্বিতীয় প্রেমিকের সাথে প্রেম করে
তখনও জুঁই-এর সুবাস দেওয়া আতর ব্যবহার করে। আর আতরের গন্ধ এতো তীব্র যে যখন সে কোন
প্রেমিকের সাথে চ্যাট করে না, পোষা বরকে খেতে দেয়, তখনও জুঁই-এর সুবাস বাতাসে ম ম করে। খেতে খেতে বর বলে, এই গন্ধে শ্রোডিংগারের বেড়ালের দশা আমার। বাপরে, মরে
আছি না বেঁচে বুঝতে পারছি না। আসলে জুঁইয়ের গন্ধে বেশ ঘুম হয়।
বাচ্চাটা বড় হয়ে চাকরি করতে চলে গেল। তারপরে খুব একা। বাচ্চার মাথাটা বুকের মধ্যে
নিয়ে আদর করতে খুব ভালো লাগে। বড় মায়া। মনে হয় এখনই ওর জন্ম হল। সে কতদিন পরে আসবে
ঠিক নেই। খুব ইচ্ছে কোনও এক প্রেমিককে ওমনি করে বুকে চেপে ধরে। আর তার বুকের মধ্যে
প্রেমিকের শ্বাস আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে একটা গোটা কবিতা হয়ে উঠুক।
সোমবার ছিল শিবরাত্রি। সেই খুশীতে সে তার প্রথম প্রেমিককে
থেমে যাওয়া টারবাইনের খোলের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। প্রথম মাঝরাতে কোনও এক হলুদ রঙা টারবাইনের
ফোটো হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিল। টারবাইনের ভেতর সে জুঁই ফুলের গন্ধ পাবে তার
স্থির বিশ্বাস। টারবাইনের ওপর সারারাত সে সবুজ পাতা আর সাদা ফুলের ছাপ দিয়ে দেয়। ম্যাড়ম্যাড়ে
মরাটা যাতে জ্যান্ত হয়ে ওঠে। একটা টারবাইনের সাথে আর একটা জোড়া থাকে। তাই সে তার
দ্বিতীয়জনকে অন্য টারবাইনটার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। কোনো টারবাইনের তৃতীয় একটা অংশ
থাকে। তৃতীয় অংশে অন্য জনকে ভরতে হবে। টারবাইনের নাম ছাড়া এতো ডিটেলস সে তার
প্রেমিকের কাছ থেকে শুনেও মনে রাখতে পারে না। সে ভাবে তার বুকে যখন আতর মাখে তখন
শুধু জুইয়ের গন্ধ। কোন দিকে কম বা বেশী নয়। বুকে মুখ গুঁজে কেউই বলে নি একটা জুঁই
অন্যটা বেলি। বেলি ফুল একটুও পছন্দ হয় না। বড় ভোঁতা। শুনলেই মনে পড়ে বিকেলে
ফেরিওয়ালার ডাক, রাবীন্দ্রিক সময়ের কিছু প্রাচীনার আলসেমি। তবে টারবাইনের সংখ্যাটা তিন না হয়ে পাঁচ
হলেই ভাল হতো। বেশ দ্রৌপদী দ্রৌপদী মনে হত। কে কখন বাঁচছে, কে মরছে কিছু বোঝা যেত
না।
আপাতত বুকের ওপর থেকে ঘুমন্ত বা মৃত মুখটাকে সরিয়ে সে
বাথরুম যেতে যেতে থমকে দাঁড়ায়। চুলের ভেতর থেকে ঘাম গড়িয়ে থমকে আছে ভুরুর ওপর। মনে
পড়ে গত তিন দিন সে ঘুমায় নি বসন্তের কুয়াশা দেখবে বলে। কুয়াশায় কলম ডুবিয়ে লিখতে
তার খুব ভালো লাগে। কবিতারা আবছায়া মেখে উড়াল দেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন