মমতা
শনিবারের সকাল। মনোহরা দোতলার এক চিলতে
ব্যালকনিতে চা খেতে খেতে ভাবছিল আজ শপিংএ বেরোতেই হবে। কি কি কিনে দিলে বউ খুশি হবে
এই আমেজে মশগুল ছিল, এমন সময় সেকেন্ড স্যাটারডের ছুটির
আমেজে কাবাবে হাড্ডি। সরকারি কোয়ার্টারগুলোর নিচে ময়দান জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গোটা
বিশেক লেপার। সমবেত চিত্কারএ বাবু এ বাবু এ বাবু দে বাবু দে বাবু দে বাবু। শনিবারে ওদের ভিক্ষের পারমিশন। ওদের
কি ঠান্ডা ফাণ্ডা লাগে না? এই হাড় হিম করা শীতের সকালে ওদের বাতাস
চেরা কাতর ভিক্ষে চাওয়া। মনোহরার সারা গা আনচান করে। সারা
শরীর জুড়ে
দয়াভাব জাঁকিয়ে বসছে। এই এক রোগ। মানবিক
সামাজিক চেতনার অবক্ষয়। কয়েক দশক আগে অভিশপ্ত ছায়া
মাড়ানোর ভয়ে সমাজ কোনো পরিত্যক্ত অন্ধ কোণায় ফেলে রেখে দিতো, অবাধে বাড়তে দিতো শয়তানী রোগ। ঘৃণার
কতো যে রকমফের ছিল। এখন আর সেই ঘৃণা আগের মতো নেই। এখন
ওরা সুস্থ মানুষের মমত্ব কাড়ে। ফ্ল্যাট বাসিন্দাদের মাথার
ভিতরে ঢুকে বংশ বিস্তারের জন্য আপ্রাণ চিত্কার। দে বাবু দে বাবু দে বাবু দে বাবু।
সেন্টিমেন্টাল এক্সপ্লয়টেশন।
নারীত্ব ও স্নেহের মত এক প্রাচীন বিবশতা মমত্ব। যে মানুষে এই মমত্ববোধ জাঁকিয়ে ভর করে তার চরিত্র আর বশে
থাকে না। তাকে রোগে ধরে। অফিস পলিটিক্স ছিঁড়ে খায়।
সর্বত্র শোষিত হয়। তাকে কে কি না করে! পোকামাকড় পাখপাখালি অণু থেকে বৃহৎ সবাই মানসিক ভাবে খাবলে খেতে
চায়। বহুবার আগ বাড়িয়ে দয়া দেখাতে গিয়ে ভয়ানক ঠকেছে আর ঠকছে। তবু। সপ্তাহ জুড়ে অনেকগুলো কয়েন জমা হয়েছে। সির্ফ আজের জন্য। নিচে বাচ্চা কোলে ক্ষয়ে যাওয়া রক্তমুখী হাতের বাটি উঁচু করে
সমানে চিত্কার করে যাচ্ছে লেপার বউটা। চা এখনো হাফ কাপ বাকি। শরীর মন প্রবল উঠি উঠি করছে।
মনোহরা উঠতেই যাবে, বাধা দিল বউ। ‘বোসো আমি নিয়ে এসেছি’। মনোহরা দেখলো ওর হাতে খুচরো পয়সার পোঁটলা। অন্যহাতে একটা লাল সোয়েটার। মনোহরা বিরক্ত হয়। আমি যদি ঊনিশ তো এ আবার বিশ। বউ ব্যালকনির বারান্দায় ঝুঁকে
বলতে লাগলো, দ্যাখো দ্যাখো ওই ভিখিরি বৌটার
কোলের বাচ্চাটাকে? ওমা কি সুন্দর ফুটফুটে
বাচ্চা। অই অইগো, দাঁড়াও যেও না। তোমার
জন্যে পয়সা নিয়ে আসছি। আর এইটে। তোমার বাচ্চাটার জন্যে বুনলাম। পরিয়ে দেব। হাঁ হাঁ করতে করতেও বউ তক্ষুনি নিচে। বাঁজা
বউ। বাচ্চা দেখলেই লাফায়। মনোহর উদ্বিগ্ন হয়ে দেখে বউ
লেপারেরবাচ্চা কোলে তুলে হামি খাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন