তেপান্তর
তোমার জন্য অনেকদিন লিখিনি,
রাগ করেছো তাই,
ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিও রোজ,
আমার মন কেমন করবে,
মনে পড়বে সেই পুকুরতলায়,
যখন দেখা হতো আমাতে-তোমাতে,
বিভূতিভূষণের গল্পগুলোর মতোই
আমার কবিতায়, পিছুটান থাকে বেশি,
আমার কবিতা সামনে এগুতে পারে না,
ঘাটের সিঁড়িতেই, পা ডুবিয়ে থাকে বসে,
কানের কাছে বিনবিন করেন, রবীন্দ্রনাথ,
তুমি বোষ্টমী হবে আমার?
আমি দু’চোখ ভরে দেখবো তোমাকে,
রসকলিতে রাঙাবো মুখ,
দোতারাতে সুর উঠবে ঠিক,
পায়ে পায়েই পেরুবো তেপান্তর
সিঁড়ি
সিঁড়ি বেয়ে বহুদূর উঠে গেছি,
নজরে পড়েনি দূরত্বটুকুকে,
আঁচল ভরে এসেছে গান,
পিছু ফিরে চাইতেও ইচ্ছে করেনি,
আজ হঠাৎ, এতদিনের পরেও,
চাইলেম ফিরে,
আর দেখতে চাইলেম,
সেই নটে শাকের গাছ - মালঞ্চ ফুল,
জানলা বেয়ে ওঠা,
নয়নতারার কুসুমগুলিকে,
আমি মাটির গন্ধ নিয়েছি
থানকুনি পাতার গাছটাকেও,
মনে পড়ছে আজ,
জ্বরে অথবা শরীর খারাপে,
পাতে পড়তো রোজ,
মায়ের হাতের আঙুল-ছোঁয়াচ,
রূপকথারা ভেসে আসতো ঠিক,
মাটির কথাটুকুই মনে পড়ছে খুব,
সিঁড়িটাকে ভুলতে চাইছি,
সমুদ্র গর্জনের খবরে,
নদীতে মিশেছে জল,
জোয়ার এসেছে,
আজ ফের,
যেন আকাশে আকাশ হয়ে উঠতে চাই
বল্লভপুর
হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাদূর গিয়েছি,
বোলপুর, শান্তিনিকেতন ছাড়িয়ে,
রাখালের চারণভূমিতে,
হাইরাইজগুলো গিলতে আসেনি,
বাংলোর কাচের পর্দাতে,
ঢাকা পড়েছে বেঠোফেনি সুর,
আর গেলাসের আওয়াজ,
খোয়াইয়ের ঝুরঝুরে মাটি,
আর উইঢিপি-সংকীর্ণ পথে,
বল্লভপুরে পৌঁছিয়ে গেছি,
সূর্য তখন ঢলে পড়েছে বেশ,
গিরিমাটির উজ্জ্বল রঙে,
নেশা লাগলো কেমন,
চোখ চেয়ে দেখলাম,
ধরিত্রীকে - আমার সবচাইতে বড় সুখ,
মনে মনে মুঠো করে নিলাম হাত,
কোপাই নদীকে মনে পড়লো খুব,
পাকসাট খেতে থাকা, সাপেদের মতো,
গেরুয়া-রঙা জলে,
একেকটা সাইকেল ছায়া ফেলে গেছে,
বল্লভপুরের রোদ,
গোধূলিতে নিঃশ্বাস নিলাম,
হাঁড়িতে-কুড়িতে সংসার আমাদের,
কাঁধে থাকবে বারোয়ারি হোল্ডলের জিনিস,
চিঁড়ে গুড়ের ভরসাতেই,
বল্লভপুর পার হয়ে গেলাম,
শালবন চিরে যাওয়া,
রাজপথে একা একা, হেঁটে হেঁটে চলে গেছি কয়েক কিলোমিটার,
ঝিঁঝিঁ-ডাকা সন্ধ্যাতে, সরসর হাওয়া দেবে,
শীত আসে, রোদ আসে,
ঋতুচক্র বয়ে যাবে বল্লভপুর তখন চিঠি লিখবে ঠিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন