শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

কাজল সেন




উত্তর-দক্ষিণ


তিথির রীতিমতো আপত্তি ছিল উত্তরমুখো ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে। দক্ষিণমুখো  ফ্ল্যাট না হলে, সেটা আবার ফ্ল্যাট নাকি! এই ছিল তিথির অভিমত। উত্তরমুখো  ঘরে রোদ ঢোকে না, হাওয়া ঢোকে না, শীতকালে কষ্ট, গরমকালেও কষ্ট, সেই ফ্ল্যাটে কখনও থাকা যায় নাকি! নীলেন্দু বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, হ্যাঁ তো, তুমি যা বলছ সবই ঠিক। কিন্তু ফ্ল্যাট তো আমরা কিনেছি প্রমোটারের কাছে। যখন বুক করেছি, তখন একটাও দক্ষিণমুখো ফ্ল্যাট খালি ছিল না, সব  আগেভাগেই বুক হয়ে গেছিল। কী করব বলো! বাধ্য হয়ে উত্তরমুখো ফ্ল্যাটই বুক  করতে হয়েছিল। তিথির তর্ক ছিল, কেন, এই ফ্ল্যাটবিল্ডিং ছাড়া শহরে আর কোথাও ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছিল না? নীলেন্দু আরও যত্ন করে তিথিকে বোঝাতে চেয়েছিল, আহা! হবে না কেন! সারা শহর জুড়েই ফ্ল্যাট হচ্ছে। কিন্তু তুমি ভেবে দেখ তিথি, আমাদের এই ফ্ল্যাটবিল্ডিং-এর গা ঘেঁষে মামনির স্কুল। মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমার অফিস এখান থেকে দু’মিনিটও লাগে না বাজারে যেতে। পাশেই বিগ বাজার, তোমার পছন্দের বিউটি পার্লার। এবার তুমিই বল, এত সুখ সুবিধে ছেড়ে অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট নিলে কি কোনো লাভ হতো?

তিথি তবুও তার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে নারাজ। রীতিমতো দুঃখিত গলায় বলল, এর আগে আমরা কী সুন্দর দক্ষিণমুখো ফ্ল্যাটে থাকতাম! কত আলো বাতাস। তুমি তো  দেখেছ, বাবা শীতকালে সারা সকালটা বারান্দায় রোদে বসেই কাটিয়ে দিত। মা কতরকমের আচার তৈরি করে রোদে রেখে দিত। তাছাড়া জন্মের পর মামনিকে বারান্দার রোদে শুইয়ে রেখে সারাগায়ে তেলমালিশ করত মা আর হাওয়া কী  দিত! হু হু হাওয়া ঢুকে ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে দিত। কখনও কখনও পাখা চালানোর কোনো প্রয়োজনই হতো না। বাইরের হাওয়াতেই কাজ চলে যেত।

তিথি যখন কথা বলে, তখন তার কথার মাঝে কেউ কথা বললে খুব রেগে যায়।  সুতরাং নীলেন্দুকে অপেক্ষা করতে হয় কখন তিথি তার কথা শেষ করবে এক্ষেত্রেও তাই হলো, তিথি গড়গড় করে তার দক্ষিণমুখো ফ্ল্যাটের সুখের  বারমাস্যা শোনানোর পর নীলেন্দু তিথিকে মনে করিয়ে দিল, তুমি একদম ঠিক বলেছ তিথি, সত্যিই খুব ভালো ছিলাম আগের ফ্ল্যাটে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, ওটা তো আমাদের নিজেদের ফ্ল্যাট ছিল না, ওটা ছিল ভাড়ার ফ্ল্যাট। সুতরাং সেজন্য কোনো দুঃখ করে লাভ নেই। বরং যে ফ্ল্যাট আমাদের নিজস্ব, সেখানেই মানিয়ে নিতে হবে আমাদের।


1 টি মন্তব্য: