পুনর্মিলন
তপস্যা
দিনটার কথা মনে রাখার জন্য বলেছিল সায়ন্তনকে। সায়ন্তন কথা দিয়েছিল, সে মনে রাখবে দিনটার কথা। আসলে এই দিনটা দুজনের জীবনেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ
দিন। বিষাদেরও দিন। বছর পাঁচেক আগে এই দিনেই তারা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তাদের বিগত
পাঁচ বছরে অতিবাহিত লিভ ইন সম্পর্কের ইতি টেনে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। আর সেদিনই ঠিক
হয়েছিল, আগামী পাঁচ বছর তারা কেউ কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। কোনো যোগাযোগ
রাখবে না। যে যার নিজের মতো জীবনের এই পাঁচটা বছর কাটাবে। যেমন খুশি কাটাবে। কোনো
দায়বদ্ধতা থাকবে না। কোনো জবাবদিহি থাকবে না। কোনো দোষারোপ থাকবে না। শৃঙ্খলা বা
বিশৃঙ্খলার কোনো শর্তও থাকবে না। আর ঠিক পাঁচ বছর পরে ঠিক সেই দিনটিতেই আবার
নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হবে এবং বিগত পাঁচ বছরের অতিবাহিত জীবনের কথা পরস্পরের
কাছে সততার সঙ্গে শেয়ার করে জীবনের পরবর্তী বছরগুলি একত্রে থাকার অথবা না থাকার
সিদ্ধান্ত নেবে।
না, কথার খেলাপ কেউ করেনি। তপস্যা ও সায়ন্তন
নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হলো পাঁচ বছর পরে। এটা একটা
দুপুরের ভাতের হোটেল। কাছাকাছি যে সরকারী
অফিস ও তার সংলগ্ন দোকানপাট আছে, তারই কর্মচারীরা এই হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেয়।
সায়ন্তন ও তপস্যা দুজনেই এই হোটেলের গ্রাহক ছিল। এই হোটেলেই তাদের আলাপ, পরিচয় ও
ঘনিষ্ঠতা। তারপর একদিন এই হোটেল থেকেই
সরাসরি সায়ন্তনের এক কামরার ভাড়া বাড়িতে তপস্যার আগমন ও রাত্রিযাপন।
বিগত
এই পাঁচটা বছর কিন্তু দুজনেই স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল। ছন্দপতন
ঘটেছিল দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। কথাটা দুজনেরই দুজনের কাছে স্বীকার করল নিঃসংকোচে।
সায়ন্তন সরকারী কৃষি দপ্তরের একটি অফিসের জুনিয়ার একাউন্ট্যান্ট ছিল। কোনো একটা প্রোজেক্টের আর্থিক
গরমিলে তারও কিছুটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু
তার ওপরই যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দিয়ে সহকর্মীরা নিজেদের আড়াল করেছিল। আর অনন্যোপায়
সায়ন্তনকে কারচুপির দায় মাথায় নিয়ে যেতে হয়েছিল গরাদের আড়ালে। তপস্যা কথাটা চুপচাপ
শুনল। সায়ন্তনের পরিচয় যে এখন জেলখাটা
আসামী, এটা তাকে কি স্পর্শ করল? তবে তার বর্তমান স্থিতিটাও লজ্জাজনক। যদিও অনায়াস ভঙ্গিতেই সে সায়ন্তনকে
জানালো যে, টলিউডের একটি বাংলা চলচ্চিত্রে সহ অভিনেত্রীর চরিত্রে সুযোগলাভের জন্য তার
শরীরটাকে ব্যবহার করতে হয়েছে। হয়তো
ভবিষ্যতেও করতে হবে। কথাটা
বলে তপস্যা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো সায়ন্তনের মুখের দিকে। কোনো বিকার কি ধরা পড়ল না
সায়ন্তনের মুখে? ঠিক বুঝতে পারল না।
সায়ন্তন
ও তপস্যা বেরিয়ে এলো হোটেল থেকে। হাতে আর সময় ছিল না। দুজনকেই ফিরে যেতে হবে নিজের
নিজের কর্মস্থলে। সায়ন্তনের সরকারী চাকরিটা আর নেই। এখন কাজ করে একটা ছোট বেসরকারী
অফিসে। তপস্যা একটা বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষিকা। পড়ানোর পাশাপাশি অভিনয়কে
পেশাগতভাবে গ্রহণ করার জন্য মরিয়া। সায়ন্তনকে এখন ফিরে যেতে হবে অফিসে। তপস্যাকে
ছুটতে হবে স্টুডিয়োতে।
আগামী সপ্তাহে আবার এখানেই মিলিত হবে, এই প্রতিশ্রুতি
দিয়ে তপস্যা ও সায়ন্তন পরস্পরকে বিদায় জানালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন