প্যাঁচার ছায়া
সকাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছি উড়ন্ত পাখির ছায়া ধরব বলে। আজ
শ্রাবণের এক তারিখ। জ্যৈষ্ঠ মাস ৩২ দিনে হয় দেখেছিলাম। সকালে খোলা আকাশের নিচে
আসার আগে দেখলাম শ্রাবণও ৩২ দিনে। দেখেই মেজাজ তিরিক্ষে। মাস তিরিশ দিনের বেশি হওয়াই উচিৎ
নয়। অতি ব্যবহারে দীর্ণ লাগে।
তিরিশের মাসগুলোতে পাখিরা হাল্কা
চালে ডানা ঝাপটায়। চলার মধ্যে একটা স্থির রাজকীয়তা থাকে। পাঠকেরা আরাম করে বুঝে
নিতে পারে। এখন এই বত্তিরিশের শ্রাবণে বৃষ্টি
নেই। মেঘ আছে, এখানে সেখানে। ছায়া আছে, আছে চিড়চিড়ে গরম। গায়ে রোদ্দুর লাগলেই
জ্বালা করে ওঠে। দেখলাম কর্পোরেশানের ভ্যাটের
পাশে একটা মৃত বেড়াল। গায়ের ওপর মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে। তুমি ফোন করলে – এখনো রোদ্দুরে
ঘুরে বেড়াচ্ছো? এমন ভান করলে যেন গাছের ছায়াতে বসে পাখির ছায়া খুঁটে নিতে পারব। পাখি
আর গাছের নিবিড়তা বড় অদ্ভুত। তুমি বারবার বলছ এবার পাখি ছেড়ে গাছের ছায়াতে বোসো। আমাদের সেই পুরনো সময়ের মতো। জারুলের ছায়া ছেড়ে অশথের
ছায়াতে বসা।
আজকাল প্রেমিকারা ছায়া নয় শপিং মল
ঘুরে বেড়ায় একথা তোমার জানা নেই। ডিজাইনার পোশাক, আইসক্রিম পারলার, পেডিকিওর,
হুক্কাবার হয়ে হাত ধরাধরি করে বাড়ি। তুমি কি বলছিলে বোঝা যাচ্ছিল না, আমাদের সেইসব
গাছ আর নেই। ফোন ছেড়ে মনোযোগটা বেড়ালের দিকে। কারণ ঠিক সেই সময়ে মৃত বেড়াল একবার থাবা
চেটে আমার সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে অন্যদিকে চলে যায়। আমি অবাক হয়ে সেদিকে
তাকিয়ে চলতে গিয়ে জোর ধাক্কা খাই। দেখলাম সামনে একটা কম বয়সি উষ্কখুষ্ক ছেলে। দুটো
হাত একবার জড়ো করছে, একবার খুলছে। অবাক হয়ে দেখলাম হাতের মধ্যে বেড়ালের গতিময়তা আর মৃত্যুর স্থবিরতা। বেড়ালটা অতি সাবলীলভাবে
খেলা করছে তার হাতের মুঠোর মধ্যে। বললাম, তোমার হাতে তো অদ্ভুত জাদু।
- না দাদা। পাখির ছায়ারা আপনার কাছে
যেমন অদ্ভুতভাবে ধরা দেয়, তেমন নয়।
- তুমি আমাকে চেনো?
- আপনার পাখির ছায়া কে না চেনে!
মন খুশীতে নেচে ওঠে। ছেলেটা একটু
উদাসীনভাবে বলে ওঠে - আমাকে একটা প্যাঁচার ছায়া দিতে পারেন দাদা?
আমি অবাকই হলাম – প্যাঁচার ছায়া?
- হ্যাঁ, নক্ষত্রের শিশিরে ভেজা
প্যাঁচা এক উড়ে যাবে। শ্রাবণী পূর্ণিমা রাতে।
বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে।
নীলকণ্ঠের ডানার নিচে দশমীর ছায়া মনের ভেতর জেগে ওঠে। নিঃশব্দ ডানাদুটো বুকের ভেতর শব্দ করে ওঠে। তখনি তোমার ফোন, এই শুনছ, খুকুর বেবিফুড শেষ হয়ে
গেছে। একটু তাড়াতড়ি নিয়ে আসবে।
বুঝলাম পাখির ছায়ার তেমন কোন উপযোগিতা
নেই। একটা বয়সের পর প্যাঁচার ছায়া খোঁজা বৃথা। স্বাতী নক্ষত্রের নীলাভ আলো ঝাপসা
চোখে দেখা যায় না।
বেবিফুড
কিনে বাড়ি ফিরে এলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন