কবিরা আমাদের সম্পত্তি, আগ্রাসনের অস্ত্র নন : রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কের সাম্প্রদায়িকীকরণ
আমাদের ব্লকের সেক্রেটারিমশায়
হপ্তাদুয়েক আগে বললেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ও সুকান্ত, এই তিন কবিকে নিয়ে কিছু
অজানা কথা লিখতে। দূর! তাই হয় নাকি! এখানে সবাই শিক্ষিত। আর এই অতিজানা কবিদের
বিষয়ে কার কী জানা, অজানা, আমি কী করে জানবো? কালিমাটির কথনবিশ্বে তো ব্যাপারটা আরো ঘোরালো। এখানে সবাই সব জানেন।
তাও ওঁদের যা জানালাম তার রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক অংশটির অনেকটা অনেক আগে কালিমাটিতে
লিখেছিলাম। একটু চর্বিতচর্বণ দিয়ে শুরু করি।
অনেক আধুনিক বাঙালিই হয়তো জানেন না যে রবীন্দ্রনাথ নোবেল
প্রাইজ পাওয়ার পঁচিশ বছর পরেও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর বাংলা রচনার একটি উপযোগিতাই
খুঁজে পেয়েছিলেন। তা হলো বাংলা এম এ পরীক্ষায় শুদ্ধ বঙ্গানুবাদ করতে দেওয়ার জন্য তাঁর
অশুদ্ধ বাংলার নমুনা প্যাসেজ হিসেবে? (দ্রঃ E. P. Thompson, Alien Homage: Edward Thompson and Rabindranath
Tagore (Delhi: Oxford University
Press, 1993, পৃঃ
৫৩-৫৪, ৬৬)। আর নীরদচন্দ্র চৌধুরীর মত ছিল যে রবীন্দ্রজন্মোৎসবের সোচ্চার
বাৎসরিকের গণ্ডগোলের মধ্যেই তাঁকে, মানে তাঁর লেখাকে ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়া আরও
বীরগতিতে চলবে। রবীন্দ্রনাথ
১৯১৩ সালের আগের তেরো বছর ধরে নোবেল পাওয়া সবার অনেক উপরে, একদিকে গ্যেটে আর এক দিকে বিত্তর উগো-র মাঝখানে
থাকবেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কখনো তাঁর রসোপলব্ধির প্রাপ্যটা পাবেন না।
সমস্যাটা কেবল অংশতঃ তাঁকে যে কোনো ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করার কষ্টসাধ্যতা। কিন্তু
আরো বড় সমস্যা হলো তিনি বঙ্গদেশেও ‘নিরাপদ’ নন। বঙ্গদেশে ‘তাঁর আসল ব্যক্তিত্বটি দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মৃত হবে
না। আর তাঁর সাহিত্যকর্ম এক মাটির নিচে পোঁতা হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর মত রয়ে যাবে।
বেঁচে থাকবে কেবল এই জড়মোহটা, বাঙালিদের গলার চারদিকে ঝুলে, কোলরিজের
কবিতার প্রাচীন নাবিকের গলায় ঝোলা অ্যালব্যাট্রস-টার মতো, পাপের শাস্তি হিসেবে। নিজের
জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ সহ-বাঙালিদের অধিকাংশের দ্বারা প্রায় পরিত্যক্ত হয়েছিলেন, কারণ তিনি যা লিখতেন সেটা তাঁদের
মাথার উপর বেরিয়ে যেতো। এমন কি যে অল্পসংখ্যক অনুরাগী তাঁর বিগ্রহায়ন করতেন তাঁরাও
সেটা বুঝতেন না। এখন অবস্থাটা আরো খারাপ, কারণ বাঙালি জীবন আর সাহিত্যিক ঐতিহ্য এত আলাদা হয়ে
গেছে যে, তাঁর লেখ্যবিষয় আর তার শৈলী
সমসাময়িক বাঙালিদের কাছে অল্পবিস্তর অনধিগম্য হয়ে গেছে।’ তাঁর প্রবন্ধে একটু পরেই নীরদচন্দ্র বলছেন, অদূর
ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন রবীন্দ্রনাথের
কাব্যেসাহিত্যে অর্থ ও সম্পদ খুঁজতে পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক খনক লাগাতে হবে (দ্রঃ
Nirad
C. Chaudhuri,Thy Hand, Great Anarch! : India
1921-1952, London: Chatto
&Windus, 1987, পৃঃ
৬৩-৬)। তার ফলে পাঠক খুঁজতে রাজশেখর বসুর ভাষায় ‘কাকদন্তগবেষণ’ তথা ‘কাগের
দাঁত কটা আছে’, তার পথ ধরতে হবে (
তাতে ক’রে কি আমাদের রবীন্দ্রনাথকে
নিয়ে, নজরুলকে নিয়ে মাতামাতি করতে, তাঁদের জাতীয় সম্পত্তি ক’রে নিতে, পরস্পরের
বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে অসুবিধে হয়েছে? হয়নি, কারণ গ্রন্থের অপঠিত প্রভাব পঠিত
প্রভাবের চেয়ে কম নয়। বিশ্ববিখ্যাত, প্রবাদপ্রতিম পোস্টস্ট্রাকচারালিস্ট চিন্তাবিদ
জ্যাক দেরিদাকে ১৯৯২ সালে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিগ্রি দেওয়া
নিয়ে ঝড় উঠেছিল। The
Monist জার্নালের সম্পাদক Barry Smith-এর সঙ্গে ১৭ জন দার্শনিক বলেছিলেন,
ওঁর লেখা দর্শন পদবাচ্যই নয়। José Benardete (১৯২৮- ২০১৬) ২০১৬ সালের ২রা মার্চ তাঁর একটি পোস্টে
বলেছিলেন, ‘It is sometimes noted that it is
extremely unlikely that most of the signers had read much more of Derrida than
I had by the time I left graduate school. What is not noted is that it is extremely
unlikely that these signers had read much of each other’ (https://digressionsnimpressions.typepad.com/digressionsimpressions/2016/03/the-letter-against-derridas-honorary-degree.html, অদ্য ৩১শে জুলাই ২০১৯ প্রবিষ্ট)। যদিও পরে
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে দেওয়া তাঁর ভাষণকে অনেক
শ্রোতার মতো Candida Clark শুনে
বলেছিলেন, ‘Cambridge epiphany’ (‘Jacques
Derrida, a Cambridge Epiphany’, https://www.opendemocracy.net/en/2181/,অদ্য ৩১শে জুলাই ২০১৯ প্রবিষ্ট)। তাই
দেখে আরেক পোস্টস্ট্রাকচারালিস্টNicholas
Royle, বলেছিলেন ‘a writer’s work can be received without being read:
texts have without being read’ (After Derrida, Manchester: Manchester
University Press, 1995, pp. 2-7, 160)। সমসময়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থা
সহ-বাঙালিদের কাছে এর থেকেও খারাপ ছিল। নোবেল পেয়েও; না পেলে যে কী হতো তা তাঁর
ছবির গল্প থেকেই সবাই জানেন।
ভুল বকছি? কজন বাঙালি জানেন যে, সেই সময়কার এক বরেণ্য সাহিত্য-সমালোচক আর বিদ্বান দীনেশচন্দ্র
সেন অনামা থাকার শর্তে ই.জে.টি (টমসন)-কে লিখলেন যে, বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথকে
ইউরোপের হাতে তুলে দেয়নি। বরং ইউরোপই
তাঁকে দিয়েছে বাঙালিদের হাতে। ফলে তাঁকে প্রশংসা করে’ ইউরোপীয় পণ্ডিতরা নিজেদের ‘দান’-এরই প্রশংসা করছে। আরো দুঃখের কথা, তিনি
ই.জে.টি.কে লিখলেন যে,
তিনি রবীন্দ্রনাথের আগ্রাসী ভক্তদের যত ভয় করতেন, ততটা বোধ হয় ইংলণ্ডে টোরিরা হুইগদের বা ক্রমওয়েলের
আয়রনসাই্ডসদেরও করতেন না। ভদ্রলোক হিসেবে ই.জে.টি. তাঁর ১৯২৬ সালে লেখা Tagore
বইয়ের প্রথম পরিশিষ্টে চিঠিটির
কিয়দংশ নাম না করেই উদ্ধৃত করেছেন। সেটি
আবার ই.পি.টি উদ্ধৃত করেছেন তাঁর বইতে (দ্রঃ Dineshchandra [Sen]to E.J. Thompson, তারিখবিহীন (1922) and 6
November 1922; EJT,Tagore (1926), parts of Sen’s Letter in Appendix A,
pp. 307-08; যত্র উদ্ধৃত E. P. Thompson, Alien Homage: Edward Thompson and Rabindranath
Tagore, Delhi: Oxford
University Press, 1993, পৃঃ ৫৩-৫৪)। সব্বাই হয়তো এত লুকোছাপাও করেন নি। সুজিতকুমার
সেনগুপ্তর লেখা জ্যোতির্ময় রবি ও কালো মেঘের দল বইতে লিখছেন যে, কালীপ্রসন্ন
কাব্যবিশারদ তাঁর মিঠেকড়া বইতে বলেছেন, কেবল
বাপের টাকার জোরে তাঁর ওইসব লেখা বিকোলো। আর বাংলা গোয়েন্দা গল্পের আদিপুরুষ
পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিলেন যে,
রবীন্দ্রনাথের সব লেখাই বিদেশি সাহিত্যের অঋণস্বীকারী নক্লি! ই.জে.টি. বোধহয় জানতেন না এঁদের নাম।
জানলে বেচারা দীনেশবাবুকে নিয়ে পড়তেন না।
কিন্তু ওই যে বললাম, গ্রন্থের
অপঠিত প্রভাব পঠিত প্রভাবের চেয়ে কম নয় (‘texts have without being read’)। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে মাতামাতি করার জন্য আমাদের ক’জনের
জানতে হয়েছে যে, যে গীতাঞ্জলি-কে লিয়ে নোবেল পেরাইজ পেয়েছিলেন (সেটাও তো হারিয়েই ফেললাম!),
তার সঙ্গে বাংলা গীতাঞ্জলি-র মিল খুব কম! বাংলা গীতাঞ্জলি-র ১৫৭টি
গান/কবিতা থেকে ইংরেজি গীতাঞ্জলি-তে (Song
Offerings) মাত্র
৫৩টি রবিন্দরনাথ ঠাঁই দিয়েছিলেন। Song Offerings-এর ১০৩টে কবিতার বাকি পঞ্চাশটা নৈবেদ্য আর খেয়া
থেকে নেওয়া। আর সেগুলো গদ্যানুবাদ কেবল নয়, প্রায় আলাদা কবিতাই। আম
বাঙালিরা শেষ সপ্তক, পরিশেষ, পুনশ্চ-র কটা
কবিতা পড়েছেন? উইলিয়াম
রাদিচের গীতাঞ্জলি সহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের ও গল্পগ্রন্থের অনুবাদ (William Radice, (trans.) Rabindranath Tagore,
Selected Poems (Harmondsworth: Penguin Books, 1985; Radice, (trans.) Rabindranath Tagore, Selected Short
Stories (Harmondsworth: Penguin Books, 1991); কেতকী কুশারী ডাইসনের নির্বাচিত
কবিতার অনুবাদ (Rabindranath
Tagore: I Won’t Let You Go, Selected Poems, New Delhi: UBS Publishers’
Distributors Ltd., 1992); মার্কিন কবি
ওয়েন্ডি বার্কার ও শরনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যুগ্ম সম্পাদনায় শেষ সপ্তকএর
কবিতাগুলির অনুবাদ (Wendy Barker and
Saranindranath Tagore, Rabindranath Tagore: Final Poems (New York: George
Braziller Inc, 2001); দত্ত ও রবিনসন-এর
রবীন্দ্রগল্পের অনুবাদ (Krishna Dutta and Andrew Robinson, Rabindranath Tagore: The
Myriad Minded Man (London: Bloomsbury, 1995); ইত্যাদির (আরো কয়েকটি আছে) উপর করে’ ভর করে’ রবীন্দ্রনাথ অবশেষে নোবেলের পরেই তাঁর নিজের এবং তাঁর
বেছে নেওয়া চক্রের (coterie)-র জঘন্য অনুবাদের ফলে হারিয়ে যাওয়ার রাহুদশা কাটিয়ে আবার
বিদেশে নিখাদ কবি হিসেবে কিছু কল্কে পেলেন। আর আমরা সিরিয়ালে, পাড়ার ক্লাবে, ব্লকের অনুষ্ঠানে, ফেসবুকে, কবির
সেই সব বালখিল্য কবিতা নিয়ে আদিখ্যেতা করছি, যেগুলোকে নিয়ে তিনিই হয়তো পরে লজ্জিত ছিলেন।
এবার আসি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্কের
প্রসঙ্গে।
নজরুল
যাঁরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ,
ইত্যাদি করেন, তাঁরা জানেন যে কিছুকাল ধরে ওই বাংলায়, এমনকি এই বাংলায় বেশ কিছু
মুসলিম উগ্রবাদী একটি পোস্ট ছড়াচ্ছেন। এঁদের একজন আব্দুল হাকিম আবির, ১০ই মে,
বিকেল ৪-৪০-এ লিখছেন, আমি উদ্ধৃত করছি,
হুবহু, ভুল বানান, যতিচিহ্নের গণ্ডগোল, বন্ধনীর মধ্যে লিঙ্ক সমেত। তারিখ থেকে
বুঝতেই পারছেন রবীন্দ্রজয়ন্তীর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে--
“কাজী নজরুল ইসলাম কে
পরিকল্পিতভাবে বিয়ে করানো হইছিল এক হিন্দু মেয়ের সাথে। সেই মেয়ে নজরুলের লেখাগুলো চুরি
করে রবীন্দ্রনাথকে দিত। ঐসব চুরি করা লেখা দিয়েই ত রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাইলো। আর
নজরুল যাতে এসব কথা প্রকাশ করে দিতে পারে তাই তাকে ধুতুরা ফুল খাইয়ে পাগল করে রাখা
হল সে হিন্দু মেয়ের সাহায্যেই। এসব সত্য ইতিহাস আজ প্রকাশ করার সময় এসেছে”। (‘https://www.facebook.com/photo.php?fbid=639425896540836&set=a.148423462307751&type=3&theater)।
এক
সজ্জন বাংলাদেশি ফেবুবন্ধুর কাছ থেকে পেয়ে আমি এটা প্রবল হেসে পোস্ট করলাম ফেবুতে।
অম্নি কিছু হিন্দু উগ্রবাদী ধেয়ে এলেন। বাংলাদেশ হওয়ার আগে ওখানকার তৎকালীন
পাকিস্তানিরা নজরুলের সম্মানে কী করেছিল; নজরুল যে আসলে ভারতের; আর পাকিস্তান আগে
ও পরে বাংলাদেশ তাঁকে ডাকাতি করে নিয়ে গেছে; ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে বলতে। ব্যস!
পড়ে গেলো ছাঁচে! কারুর মাথায় এলো না যে ২৫শে মে ১৮৯৯ সালে জন্মানো নজরুল
রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার সময় তেরো বছরেরটি ছিলেন। তাঁর কবিখ্যাতি তুঙ্গে ওঠে বিদ্রোহী
প্রকাশ পাওয়ার পর, ১৯২২ সালে। আর তাঁর
প্রথম বিয়ে হয়েছিল ১৮-ই জুন ১৯২১-এ (বা মতান্তরে হয়নি, দেখুন তাঁর নাতনির কথা, https://www.anandabazar.com আনন্দ প্লাস, ১৩ই মার্চ, ২০১৫) দৌলতপুরের নামী প্রকাশক আলী
আকবর খানের ভাগনি নার্গিস আসার খানম তথা সায়েদা খাতুন-এর সঙ্গে। নার্গিস নামও নজরুলের
দেওয়া। সে যাইহোক, বিয়ের রাত্রেই আলী সাহেব বিয়ের চুক্তিপত্রে তাঁর আজীবন দৌলতপুরে
থাকার শর্ত মেনে নিতে প্রকাশ্যে পীড়াপীড়ি করায় নজরুল ওই বাড়ি থেকে চলে আসেন। এর
পিছনে অবশ্য অন্য কারণও থাকতে পারে। ১৯২১-এ কুমিল্লায় গিয়েই ব্রাহ্ম সমাজের আশালতা
সেনগুপ্তা ওরফে দোলোনা সংক্ষেপে দুলী ওরফে প্রমীলা দেবীর সঙ্গে আলাপ হয় দুখু
মিয়াঁর! তাঁর জন্ম ১০ই মে, ১৯০৮। প্রমীলা নামও নজরুলের দেওয়া। পরে ১৯২২-এ কোনও সময় প্রণয়। আর
পরিণয় ২৫শে এপ্রিল ১৯২৪। এই ‘অসামাজিক’ বিধর্মী বিবাহের ফলে নজরুল এবং প্রমীলা
দুজনেই গোঁড়া মুসলিম আর গোঁড়া ব্রাহ্ম সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সামনে পড়েন। ব্রাহ্ম
সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রবাসী পত্রিকা অফিস থেকে প্রধানত নজরুল-বিরোধিতার
জন্য সাপ্তাহিক শনিবারের চিঠি প্রকাশ করা হয়। নজরুলের ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায়
এই ঘটনায় দুঃখের প্রকাশ আছে--
গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা।
প্রতি শনিবারই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি-’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন, আড়ি চাচা!
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা।
মৌ-লোভী যত মৌলভী আর 'মোল-লারা' ক'ন হাত নেড়ে,
'দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!'
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
'আম পারা'-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!’
হিন্দুরা ভাবে, 'পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা'ত-নেড়ে!
সেই আক্রোশ এখনও চলছে। বেচারা
প্রমীলা! সারাজীবন স্বামীর শুশ্রূষা করে মরার পর এক বয়োজ্যেষ্ঠ কবির নিজের বিয়ের
এগারো বছর আগে পাওয়া নোবেলের জন্য মাত্র সাড়ে চার দশক আগে থেকে শুরু হওয়া কবিতা
পাচার করার অপবাদ সইতে হচ্ছে। ১৯০৮-এর জাতিকা প্রমীলা নজরুলের ১৯০১ সালের নৈবেদ্য,
১৯০৬ সালের খেয়া, আর ১৯১০ সালের গীতাঞ্জলির কবিতা সাপ্লাই করছেন, যাতে
রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নজরুলের বারো কি তেরো বছরে নোবেল প্রাইজ পান। বেড়ে নয়?
বরং কিছু অপবাদ পেতেও পারতেন রাণু
সোম, নজরুলের আরেক আগেকার প্রেম, প্রসিদ্ধ গায়িকা, পরে প্রতিভা বসু নামে
প্রসিদ্ধতর লেখিকা, কবি বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী! ঢাকার মেয়ে রাণু সোম, আর ঢাকার তখন
আরেক নাম ছিল ‘সোনার গাঁ’। ফলে নজরুল তাঁর সঙ্গে দেখা হতেই গান লিখলেন ‘কোন কূলে
আজ ভিড়লো তরী, এ কোন সোনার গাঁয়’; আর রাত না পোয়াতেই ছটফট করে’ তাঁকে বাড়ি এসে
শিখিয়ে গেলেন। রাণুর সঙ্গে নজরুলের আদি প্রণয়ের জ্বালা ও মর্মব্যথা আর তার
উত্তরণের গল্প আছে বুদ্ধদেব বসুর রাত ভরে বৃষ্টি (১৯৬৭) উপন্যাসে। কিন্তু বুদ্ধদেব
বসু নজরুলকে সাহিত্য ক্ষেত্রে মর্যাদা দিয়েছিলেন। নজরুল স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার দশ বছর
পরে ১৯৫২ সালে বুদ্ধদেব বসু ‘রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরসাধক’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘‘নজরুলের দোষগুলি
সুস্পষ্ট, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য সমস্ত দোষ ছাপিয়ে ওঠে; সব
সত্ত্বেও একথা সত্য যে রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম মৌলিক কবি। নজরুল
ইসলাম নিজে জানেননি যে, তিনি নতুন যুগ এগিয়ে আনছেন; তাঁর রচনায় সামাজিক রাজনৈতিক
বিদ্রোহ আছে, কিন্তু সাহিত্যিক বিদ্রোহ নেই”। কিন্তু নজরুল প্রতিভা বসুর
গানের প্রতিভাকে বাড়তেও দেন নি! বুদ্ধদেব
বসুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভালো সম্পর্ক ছিল, যদিও কল্লোল যুগের অন্যান্য কবি
সাহিত্যিকদের মতোই তিনিও রবীন্দ্রনাথের ‘মায়াজাল’ কেটে বেরোতে চেয়েছিলেন। আর রাণুর
স্বামীও ছিলেন। তাহলে রাণুর হাত দিয়েই রবীন্দ্রনাথের কাছে নজরুলের কবিতা পাচার হতে
পারতো, আব্দুল হাকিম আবিরবাবু!
কিন্তু সেখানেও তো মুশকিল। ১৯১৩-তে
বুদ্ধদেব বসুর বয়স পাঁচ! আর রাণুর বয়স মাইনাস দুই! ১৯০১ সালের নৈবেদ্য, ১৯০৬
সালের খেয়া, আর ১৯১০ সালের গীতাঞ্জলি-র কবিতা পাচার করার পক্ষে
বড্ড কম।
বন্ধু, আব্দুল হাকিম আবিরের এই আজব
কথাগুলো লিখলাম এই কারণে যে, আমরা কবিকে, তাঁর কবিতাকে না পড়েই নিন্দে প্রশংসা সব
করি। আব্দুল হাকিম আবির আমাদের মধ্যেও আছেন, সব দিকেই, উঁচু জায়গাতেই! কেউ বিদ্যাসাগরের
সহজ পাঠ-এর কথা বলেন; কেউ মাহেশের রথে রাধারানীর প্রসঙ্গে কপালকুণ্ডলা-কে
আনেন। কী আর করা যাবে? একথা বলছি না যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সম্পর্কের মধ্যে
টানাপোড়েন ছিল না। কোন সমসাময়িক মহারথদের মধ্যে না থাকে! তবে সেটা এমন ছিল না যে ডস্টয়েভস্কি আর টুর্গেনিভের কোনোদিনই পরস্পরের
মুখ না দেখার মতো। যেটুকু সমস্যা ছিল তার
কিছুটা তাঁদের কাব্যাদর্শের তফাতের কারণে, আর কিছুটা সমসাময়িক কবিদের চুকলির
কারণে। ঠিকই যে বিদ্রোহী-বিপ্লবী কবিতা লিখতে গিয়ে নজরুল ‘তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা
শুরু করেছে(ন)’। কিন্তু সে তো এই কারণে যে রবীন্দ্রনাথ চাইতেন না যে, নজরুল তাঁর কবি প্রতিভাকে যথার্থ
সৃষ্টি কাজে না লাগিয়ে অন্য বিষয়ে নষ্ট করেন। এজন্যই নজরুলকে তিনি একদিন (সঙ্গে
ছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর) তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচতে নিষেধ করেছিলেন। এই কথায় নজরুল
ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এই অভিযোগে নজরুল লেখেন, ‘গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা’। কিন্তু
সেই সময়টা নজরুলের দ্বিতীয় বিবাহের পরের পরের সংক্ষুব্ধ সময়, ওই ‘আমার কৈফিয়ত’
কবিতাতেই তাঁকে লিখতে হচ্ছে, ‘প্রতি শনিবারই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, “তুমি হাঁড়িচাঁচা”’। কিন্তু
সেখানেও তো তিনি বলছেন ‘মাথার উপর রয়েছেন রবি’! যদিও হয়তো কল্লোল গোষ্ঠির কথা ভেবে
‘রয়েছে সোনার শত ছেলে’-ও বলেছেন।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের
আরেকবার সমস্যা হলো যখন নজরুলের রক্ত অর্থে ‘খুন’ শব্দ
ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথ সমালোচনা করেছেন, এ কথা রটিয়ে দেওয়া হলো, আর তাতে ব্যথিত হয়ে নজরুল বললেন, ‘বড়র পিরিতি বালির বাঁধ’। তাতে আবার ব্যথিত হলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু
পরে যখন রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন যে, তিনি নজরুলকে সে কথা বলেননি, তাঁর মন্তব্য ছিল কোনো উদীয়মান কবির জন্য, তখন মিটে যায় এই
সমস্যা। মনে রাখতে হবে যে শনিবারের চিঠির সজনীকান্ত দাস ও মোহিতলাল মজুমদারেরা সেই সময় নজরুলকে অপদস্থ করতে উদ্গ্রীব।সন্জীদা
খাতুন বলেন, ‘১৯২০- ১৯৪১ পর্যন্ত রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কে এই একটি ‘খুনের মামলা’ অভিমান পর্ব ছাড়া আর কোনো ছেদ চোখে
পড়ে না’। কারণ, অস্বীকার করা যাবে না যে তাঁরা দুজনেই একযোগে ১৯২৬
সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদ করেছিলেন। নজরুল তাঁর ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’ কবিতায় ‘“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?’ লেখার পর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব;/ ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ’।’ অথবা ১৯২৩ সালে নজরুল যখন জেলে রবীন্দ্রনাথ বসন্ত নাটকটি
উৎসর্গ করলেন তাঁকে তাঁর ধামাধরা অনেকের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে। তাঁর বক্তব্য ছিল, জাতির
জীবনে বসন্ত এনেছেন যে নজরুল, এ নাটকটি তাঁকে উৎসর্গ
করাই সমীচীন। এর পরে জেলারের অত্যাচারের প্রতিবাদে নজরুল অনশন শুরু করেন। কলকাতার
পত্রিকায় খবর বের হয় যে, ১৯২৩-এর ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু ক’রে ১৪ দিন ধরে তিনি অনশনে
আছেন। এ খবর পেয়ে রবীন্দ্রনাথ টেলিগ্রাম করেন নজরুলকে, ‘অনশন ছেড়ে দাও। আমাদের সাহিত্যে তোমাকে দরকার।’ কিন্তু সে টেলিগ্রাম ইংরেজরা পৌঁছে
দেয় নি নজরুলকে।
১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর
দেশে চলে যান। ব্যথিত নজরুল ‘রবিহারা’ কবিতাটিতে, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্ত-পথের কোলে’ লেখা ছাড়াও গানে লিখলেন, ‘ঘুমাইতে
দাও শ্রান্ত রবিরে’, আর রবীন্দ্রনাথের শেষ যাত্রার ধারাবিবরণী
নজরুল স্বকণ্ঠে দিলেন আকাশবাণী কলকাতা থেকে (ঋণস্বীকার — ‘পাঠচক্র, রবীন্দ্র-নজরুল:
সম্পর্কের টুকরো গল্প’, https://www.prothomalo.com
বাংলাদেশ › বিবিধ, ২৯শে
আগস্ট ২০১৫, ৩১শে জুলাই ২০১৯ প্রবিষ্ট)।
এর অনেক আগে হাবিবুর রহমান স্বপন যেমন বলছেন: ‘রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ‘১৪০০ সাল’ কবিতা লেখেন
১৩০২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষের পরের পাঠককে
বসন্তের পুষ্পাঞ্জলি পাঠিয়েছেন।’ উত্তরে কাজী নজরুল ইসলাম ১৩৩৪ সালের আষাঢ় মাসে তাঁর ‘১৪০০ সাল’ কবিতায় এর
উত্তর লেখেন। তাতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভক্তি। আজি হ’তে শতবর্ষ আগে/ কে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদেরে/ শত অনুরাগে,/ আজি হ’তে শতবর্ষ আগে!’ হাবিবুর আরো
লিখছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে যে কী স্নেহ করতেন তার আরেকটি উদাহরণ - রবীন্দ্রনাথ
রচিত ‘গোরা’ উপন্যাস
অবলম্বনে তৈরি ছায়াছবিতে নজরুল ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এতে
বাধা সাধলে রবীন্দ্রনাথ তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নজরুলকে সঙ্গীত পরিচালকের’ ভার
দেন।
হাবিবুর রহমান আরো জানিয়েছেন যে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে
নজরুলের সরাসরি দেখা হয়েছিল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে। তখন
নজরুলের বয়স ২২ বছর। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিলেন।
বোলপুর স্টেশনে কাজী নজরুল ইসলাম এবং ড. শহীদুল্লাহকে অভ্যর্থনা জানান রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের একান্ত সচিব কবি সুধাকান্ত রায়চৌধুরী। নজরুল সেদিন রবীন্দ্রনাথের কাছে
একটি কবিতার আবৃত্তি শুনতে চেয়েছিলেন। কবিগুরু বললেন, ‘সে কি? আমি যে তোমার
গান ও আবৃত্তি শোনবার জন্যে প্রতীক্ষা করে আছি, তাড়াতাড়ি শুরু করে দাও।’ নজরুল
আবৃত্তি করেছিলেন ‘অগ্নি-বীণা’র ‘আগমনী’ কবিতাটি। এছাড়াও তিনি কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান।
নজরুলের অনুরোধে সেদিন রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করে শোনান, ‘মাধবী হঠাৎ কোথা হতে, এল ফাগুন দিনের স্রোতে, এসে হেসেই বলে
যাই যাই।’... এরপর বেশ কয়েকবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সাক্ষাৎ হয়।
১৯২১-এর ডিসেম্বর মাসে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করে নজরুল সরাসরি চলে যান জোড়াসাঁকোর
ঠাকুর বাড়িতে। উচ্চকণ্ঠে ‘দে গরুর গা
ধুইয়ে’
গাইতে গাইতে নজরুল ঠাকুর বাড়িতে প্রবেশ করে ডাকলেন, ‘গুরুদেব
আমি এসেছি’। উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতে থাকেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। তিনি
রবীন্দ্রনাথকে বলেন, গুরুদেব আমি
আপনাকে খুন করবো। রবীন্দ্রনাথ ‘বিদ্রোহী’ কবিতা শুনে কবিতার প্রশংসা করেন এবং নজরুলকে জড়িয়ে ধরে বলেন
‘সত্যিই তুই আমাকে খুন করেছিস’। ১৯২২-এর
২৫ জুন কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরিতে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে কবি সত্যেন্দ্রনাথ
দত্ত স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঐ স্মরণসভায় নজরুলকে ডেকে পাশে
বসিয়েছিলেন। নজরুল আবৃত্তি করেছিলেন ‘সত্যকবি’ কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ
এভাবে নজরুলকে স্নেহ বন্ধনে আবদ্ধ করায় তখনও কবি-সাহিত্যিকরা ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন’
(‘গুরু-শিষ্য সম্পর্ক : রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল’, https://www.risingbd.com/travel-news/50763, ২৩শে মে ২০১৪ ৩১শে জুলাই ২০১৯ প্রবিষ্ট)।
নজরুল অনেকদিন তাঁর কাছে না গেলে নিজে ডেকে পাঠিয়েছেন।
কতদিন তাঁর তপোবনে (শান্তিনিকেতন) গিয়ে থাকবার কথা বলেছেন। ‘হতভাগা আমি তাঁর পায়ের তলায় বসে মন্ত্র গ্রহণের অবসর করে উঠতে
পারলাম না। বনের মোষ তাড়িয়েই দিন গেল’। (‘রবীন্দ্র স্মরণ রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ক’, https://www.risingbd.com/travel-news/50763,৭ই মে, ২০১৬, ৩১শে
জুলাই ২০১৯ প্রবিষ্ট)।
বন্ধু, আব্দুল হাকিম আবির ও তাঁর সহযোগী কিছু ‘হিন্দু’,
যাঁরা রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের সম্পর্কের প্রশ্ন এলেই পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে
লেগে যান, তাঁদের জন্যে এই সম্পর্কের তথ্য বাংলাদেশি কাগজ থেকে দিয়েছি। তাঁরা নিজ
নিজ মসজিদে/মন্দিরে চলে যান, আর শতহস্ত দূরে থাকুন এঁদের থেকে। এঁরা আপনার, আমার,
আমাদের সম্প্রদায়ের, দেশের, রাষ্ট্রের নন, বসুন্ধরার সম্পত্তি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন