ফোকাসবিন্দু
কিঞ্জল খবরটা পেয়েছিল বেশ বয়স্ক এক পরিচিত
ব্যক্তির থেকে যাকে দাদা বলেই ডাকে ও মানে। 'কিছুই না' করে দিতে গিয়েও অনেকটা সময় মধুশাকে নিজেরই অজান্তে ভেবে ফেলেছে। তখন
নিজেকে ও অপরকে রাঙানোর দিন, সেই পঞ্চাশের দোরগোড়ায়
দাঁড়ানো বয়স যেটাকে তারুণ্যের সেন্ট্রিফিউগাল অবস্থান বলে মানা হয়। কিঞ্জলের এক
সমপেশাধারির মাসতুতো বোন মধুশা। হিসাবতত্ত্বে সাম্মানিক স্নাতক। যে কোন কর্পোরেট
অফিসে ওকে দু’হাজার ওয়াটের বাল্ব হিসেবে
ফিট করে দেওয়া যাবে। কিন্তু সেভাবে চাকরি করছে না। এক বিজনেস ম্যাগনেটকে
বিয়েটিয়ে করে বাচ্চা করে কীভাবে ঘরবন্দী করে রেখেছে নিজেকে সেটা
ভেবেই তখন আশ্চর্য বোধ করতো কিঞ্জল।
মধুশার কন্যাশিশু প্রেমের পথ তৈরি করে দিয়েছিল। কারণ কিঞ্জল শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ঠিক একরাত্রির সম্পর্ক হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না পরবর্তী জার্নিটাকে। কিঞ্জলের নিজের মেয়ের চাইতে বাচ্চাটা দশ বছরের ছোট। আর মধুশা কুড়ি বছরের ছোট কিঞ্জলের চাইতে।
মধুশা যথার্থ উর্বশী। পাছা যথার্থ হিপ হিপ হুররে। কোমর ও পাছার দিকে নিষ্পলক যুগযুগান্ত তাকিয়ে থাকা যায়। লাস্যময়ী বললেই যথেষ্ট। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের মামলা চলছে। ঐ সময়টা মধুশা পুরো স্বাধীনচেতা। নিজের নার্সারির ব্যবসা খোলার ইচ্ছে। বাপের বাড়িতে থাকে। মামলায় জিতে কয়েক কোটি টাকা পাবে স্রেফ গৃহবধূর উপর অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে। ক্ষতচিহ্ন বিলুপ্ত করার জন্য কসমেটিক সার্জারির নানা উপদেশ সহ একগাদা সাহায্য কিঞ্জল করে দিয়েছিল। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে মহাকাশযানের সমান প্রবল গতিসম্পন্ন দুর্নিবার প্রেম শিকড় থেকে শিখর পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত হল শরীরে ও মনে।
চমকপ্রদ ছিল ওদের লং জার্নিগুলো। প্রত্যেকটা এপিসোড হলিউডি তন্ত্রমন্ত্র মেশানো। বাৎসায়নীয় যাদু আচ্ছন্ন। অথচ 'ভবিষ্যত' বলতে 'সাফল্য' বলতে যেটা বোঝায় সেটাই নেই। প্রতিবার ও নতুন অভিনেত্রী হয়ে উঠত। সেলফোনে সেলফির যুগল বসন্তোৎসব। কিঞ্জল প্রথম বলেছিল ব্যবসা ট্যবসা ছাড়ো, মডেল হয়ে যাও। এত ফোটোজেনিক ফেস! ঐটাই ছিল ফোকাস বিন্দু। হেনরি আইল্যান্ডে মধুশা মন্দিরের ভাস্কর্য মূর্তির মতো মেলে ধরেছিল নিজেকে। কিঞ্জলের তোলা ছবিতে (যদিও ও প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নয়) ও নবজন্ম লাভ করল। অ্যাকোয়াটিকায় মধুশা মৎস্যকন্যা হয়ে গিয়েছিল। ভেদিক ভিলেজে শকুন্তলার ব্লু আইলাইনার টানা জগৎ তৈরি করেছিল। কিঞ্জলের পারিবারিক অশান্তিগুলো ঘরে পারদবলের মতো লাফাত। তবু মধুশার সবটা কিঞ্জল গিলে নেয় নি। কত অনুরাগীদের সঙ্গে কিঞ্জলের সামনেই ফোনে আলাপপ্রলাপ করে গেছে। কিঞ্জলের মনের পাঁচিলের একদিক জানত লাগাম পরানোর ঘোটকী এ নয়। একেকদিন পারিবারিক অশান্তি আপাদমস্তক গায়ে মেখে কিঞ্জল বসে থাকত। জেনারেশন গ্যাপ ঢুকে পড়ত অজান্তে।
আচমকা একদিন ফোনে কথা বন্ধ করে দিল মধুশা। হাজার চেষ্টা করেও বাড়ি গিয়েও কোনো লাভ হয় নি। মধুশা ততদিনে বিজ্ঞাপনের জগতে পা রেখেছে। টিভিতে সিনেমায় দেখা যায়।
আজ কিঞ্জলের ষাটতম জন্মদিন।
বাড়িতে একটু হৈচৈ মাছ মিষ্টি টাকিলা সহযোগে। খবর এল মর্মান্তিক। বেছে নেওয়া শেষ মুক্তির জগতে সে চলে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন