সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

অচিন্ত্য দাস




সমু


সমু এবার ক্লাস ফাইভে উঠল। ওর ভালো নাম সমুদ্রজিৎ। নামটা যেমন বড় ওদের থাকার ফ্ল্যাটটাও। বি ব্লকের পুরো দোতলাটাই ওদের, অনেকগুলো ঘর। সকালের খাবার বানায় মা আর ওর ইস্কুলের টিফিন ভরে দেয় মন্টুকাকা। বাবা থাকলে গাড়িতে ইস্কুল পৌঁছে দেয়, না তো ড্রাইভার স্বপনদা নিয়ে যায়। বাবা  একটা কোম্পানীর ‘বিগ বস’ – বেশির ভাগ দিনই ‘ট্যুর’এ থাকেন, তাও আবার বিদেশে। সমুর মা’র প্রায় রোজই দুপুরে কোথাও-না-কোথাও লাঞ্চ থাকে। উনি  খুব ব্যস্ত। অনেকগুলো এন-জি-ও আর মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত। ওনার ফিরতে  রাত্তির সাড়ে নটা–দশটা হয়ে যায়।   

ইসকুল থেকে ফিরে ব্যাগটা কোনোরকমে বাড়িতে রেখে সমু চলে যায় ডি ব্লকের সামনের মাঠটায় – ওখানে ওর ক্লাসের শাক্য, আরও অনেক ছেলেরা খেলতে আসে। শাক্যর সঙ্গে সমুর খুব ভাব — ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সন্ধ্যে হলে শাক্য  বাড়ি আসে। মন্টুকাকা বিকেলের আর রাত্তিরের খাবার টেবিলে ঢাকা দিয়ে রেখে দেয়। খাবার টেবিলের দেয়ালে একটা বেল আছে, ওটা দিয়ে ডাকলে মন্টুকাকা কিংবা ওর মেয়ে শীলা এসে খাবার গরম করে দিয়ে যায়। সেদিক দিয়ে ব্যবস্থা ভালো, অসুবিধে নেই।

সেদিন ফুটবল খেলাটা খুব জমেছিল, অন্ধকার হব হব তাও খেলা চলছিল খানিকক্ষণ। খেলা শেষ হলে শাক্য বলল, “আ্যই, মা ডেকেছে তোকে, কেক বানিয়েছে”
সমু গেল শাক্যদের বাড়িতে। দরজা খুলেই শাক্যর মা বললেন, “শাক্য, বলেছি না, সন্ধ্যের পর বাইরে থাকবে না। সময় মত বাড়ি ফিরতে হয় সব সময় এই সমু, তুই বোস, এই খাবার টেবিলেই বোস”

আন্টি মানে শাক্যর মা একটা প্লেটে কেক এনে রাখলেন। একভাগ সমুর, এক ভাগ শাক্যর। সমু কীরকম যেন চুপচাপ হয়ে বসেছিল। শাক্যর মা বললেন, “কী রে সমু, তোর কি শরীর খারাপ, না কেকটা ভালো হয়নি?”
সমু তাও চুপ।
“বল আমাকে, কী হয়েছে রে তোর?” সমুর পিঠে হাত বুলিয়ে শাক্যর মা  বললেন।
গলার কাছে উঠে আসা হালকা কান্নাটা চেপে ধরা গলায় সমু বলল, “শাক্য দেরি করে ফিরলে তুমি ওকে কী সুন্দর বকো, আমি অনেক দেরি করে বাড়ি এলেও  কেউ তো আমায় বকে না...”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন