আগুন আগুন
(কিছুদিন আগে বনানীতে এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার সময় লেখা,
কিন্তু মনে হয় যে কোনো সময় সে বিভীষিকা ফিরে আসতে পারে আবার।)
আগুনের
লেলিহান শিখা তুমি কখনো দেখোনি
দপ
করে জ্বলে উঠলো অফিসের এসিগুলো
একে
একে জানালার পর্দা, দেয়ালের ডেকোরেশন
ইস্তাম্বুল
থেকে আনা কার্পেট
ডেস্কটপ,
ফাইল, কাগজপত্র
আগুন
তোমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো
কিছু
চিৎকার, আর্তনাদ, বোবা কান্না
একজন
বাইরের দিকের কাচ ভেঙে ফেললো
তার
অর্ধেক শরীর কাচের বাইরে
দুহাত
নেড়ে বাঁচার আকুতি
পাশ
দিয়ে চলে গেলো ফায়ার সার্ভিসের মই
কেউ
তোমাদের আর্তনাদ শুনতে পেলো না
অসংখ্য
যুবক, শিশু, বৃদ্ধ
সবাই
সয়লাব হয়ে আছে সামনের রাস্তায়
কিছু
মানুষ পাশের বিল্ডিং দিয়ে বেরিয়ে গেলো
তাদের
চোখে-মুখে ভয়ঙ্কর বিভীষিকা
মৃত্যুকূপ
থেকে ফিরে আসার চিহ্ন
হেলিকপ্টার
একজন মানুষকে তুলে নিলো ছাদ থেকে
ফায়ার
ব্রিগেডের পানির ফোয়ারায় ভেসে যাচ্ছে
ভেসে
যাচ্ছে ভেতরের সবকিছু
কালো ধোঁয়ায় তোমার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো
যে
মানুষটি কাচের ভেতর থেকে হাত নাড়ছিলো
তার
শরীর নিস্তেজ হয়ে এসেছে
পাশ
দিয়ে একজন ইলেকট্রিক তার বেয়ে নামছিলো
হঠাৎই
তার ছিঁড়ে রাস্তার পিচে
এসব
দৃশ্য দুর্বল চিত্তের মানুষদের দেখা নিষেধ
কেউ
একজন তোমাদের অফিসে এসে ঢুকেছে
তুমি
শুনতে পাচ্ছো পায়ের শব্দ
কাছে
এগিয়ে আসছে, চিৎকার করছে
তোমার
নিঃশ্বাস বন্ধ
হয়ে আসছে
চারদিকে
কালো ধোঁয়া
মাথাটা
ফাঁকা হয়ে আসছে
একটু
একটু করে সব অন্ধকার হয়ে এলো
তোমার
প্রাণশূন্য দেহ টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গের দিকে
কোটি
কোটি লাশ তোমাকে ঘিরে ধরলো
কারো অর্ধেকটা পোড়া , কারো জ্বলন্ত পা
মাথার
মগজ বেরিয়ে গেছে কারো
তুমি
একটু একটু করে উঠে দাঁড়ালে
সাত
আসমান থেকে লাফ দিলে অনন্ত শূন্যে
প্রয়াত প্রেমিক
ছোট
একটা চিঠি
একপাশে
তোমার নাম লেখা
অন্যপাশে
আমার
আজ
যে কেউ বদলে দিতে পারি
আমাদের
প্রয়াত দিনের স্মৃতিকে
মুখোশ
শো
শো বাতাস বইছে। সারাদিনের কড়া রোডের পর চারদিক থেকে ঝড়ো হাওয়া ছুটে এলো। শাহবাগের
রোড-লাইটগুলো জ্বলতে শুরু করেছে, পাবলিক লাইব্রেরিতে অনেক লোক, তাদের চোখে-মুখে
আনন্দ চিহ্ন, মুখে উৎসবের রং মেখে ঘুরছে সবাই। তুমি কাউকে চিনতে পারছো না,
সবার মুখে একই ধরনের মুখোশ, হলুদের মধ্যে কালো ডোরাকাটা, মাথায় ময়ুরের
পালক আর সকলের কোমর থেকে নিচ অব্দি সজারুর কাঁটার মতো গাঁথা। একজন মুখোশওয়ালা
তোমার পিছন পিছন ঘুরছে, তার পিছনে আরেকজন। তার পেছনে
আরেকজন। পুরো এলাকা জুড়ে ঘন বর্ষণ শুরু হলো, সকলের মুখের রং ধুয়ে যাচ্ছে, গা থেকে
খসে পড়ছে সজারুর কাঁটা। তুমি চোখ ঢেকে দৌড়ে চলে এলে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়ামে। স্ক্রিনের পুরোটা জুড়ে পুরনো আমলের বেনারসি শাড়ি।
তোমার হাত ধরে বসে আছে অশোকনগরের ছেলে। একটা মৃদু সুগন্ধ। তোমরা জলে ভাসছো,
চারদিকে নীল-পদ্ম, আমাজান লিলি, শালুক। একটা নাচের ঘূর্ণন জলে, ফরাসি চিত্রকর লা দু
মালের পেইন্টিং শোভা পাচ্ছে জলের ফ্রেমে।
হৃদযন্ত্র
তোমার
ঘরের পাশেই আরেকটি ঘর
তার
পাশে আরেকটি
তার
পাশে আরেকটি
দালানের
ফুসফুস গলে রক্ত ঝরছে
তোমরা
ভাবছো তোমাদেরই শুধু ফুসফুস আছে
হৃদয়বান
শুধু তোমরাই হতে পারো-
প্রতিটি
ইট, কাঠ, বৃক্ষ, লতা, নদী সাগর
তারাও তো
তোমাদের মতো বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো
কারখানার
রঙিন জলে তাদেরকে করে তুলেছো মৃত্যু পথযাত্রী
ইটভাটার
চিমনির ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে সমস্ত আকাশ
এখন
সময় হয়েছে
তোমাদের
চোখ উপরে নেয়ার
ধর
থেকে মাথাকে আলাদা করার
কিলোমিটার
জুড়ে ইমারতের সারি
তারা
আজ সকলেই মৃত
তোমরা
যারা ওখানে বাস করো তারাও কি মৃত?
তোমাদেরও
কি আছে একজোড়া হৃদয়যন্ত্র-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন