অপেক্ষা
(১)
আজ শহর
রোদে পুড়ে গলদঘর্ম
সারাটা
দুপুর চলেছে ওর করুণ-ক্ষীণ বিলাপ
আর পড়শী
আকাশ ছিল নিশ্চুপ-নির্বিকার!
অথচ-
আশেপাশ
থেকে উড়ে আসা ছোট্ট ছোট্ট ঠোঁট,
ক্লান্ত
অবশ ডানাগুলো ভেজানোর আশায়
রেখেছিলাম
ভাঙা পাত্রে খানিক জল —
কয়েক ফোঁটা
শান্তি আর তৃপ্তির ঝটাপটি
চললো বেশ
কিছুক্ষণ!
দেখে মনে
হল যেন মালা থাকে খসে পড়া
এক একটা
মুক্তদানা ছড়িয়ে পড়ছে দুধসাদা মার্বেলের মেঝেময়।
তারপর-
বিকেলের
হাওয়ায় বয়ে আসা কিছু মেঘ
এখনও ঠায়
দাঁড়িয়ে !
বৃষ্টির
অপেক্ষায় ---
(২)
উপকূল
জুড়ে সারিবদ্ধ পাম গাছেদের
সবিশেষ
পত্রালাপ;
এদিকে
নির্বান্ধব সৈকত ,
একা
দাঁড়িয়ে আকণ্ঠ তেষ্টায়!
অথচ ছুঁই
দূরত্বে নীল জলচ্ছ্বাস -
এ যেন এক
নিষিদ্ধ অপারগতা,
না কি
নীরব অভিমান!
(৩)
হ্যামলিনের
মায়াবী বাঁশির সুরে
ভাসতে
ভাসতে প্রতিদিন রাত আসে।
আর দেবলোক
থেকে ধেয়ে আসা
সুরবীণার মূর্ছনায়
বুঁদ হয়ে থাকা কমলিকা
আজও
বিনিদ্র রাত জাগে -
সেই
অভিশপ্ত শাপ মোচনের অপেক্ষায় -
অরুণেশ্বরের
সম্মুখ সাক্ষাৎ , শেষে
আলো - আঁধারে জারিত মিলনের রাত!
(৪)
লাল হলুদ
ট্যাবলেটের মতো আস্ত কয়েকটা কথা গিলে ফেলার পরে গলার কাছে জমে আছে,
আমল না
দেওয়া শব্দগুলো, দলা পাকিয়ে!
গুঁড়ো
এন্টিব্যাওটিকের বোতলে কিছুটা অধিকার আর মেকি হাসি নিয়েছি মিশিয়ে,
এবার একটু
ঝাঁকিয়ে -
দাগে দাগ
মিলিয়ে,সেবন সকাল-সন্ধ্যে-য়
নিয়ম করে।
রোগ
নিরাময় হবেই এমন জব্বর পথ্যে।
এরপর
সুস্থ হলে কথা হবে শুধু জলের সাথে,
একপ্রকার
নিরুত্তাপ - নীরব ধারাবাহিক যে সে!
(৫)
রোজের চলা’ফেরায় খড়ি’র দাগ মুছে যাচ্ছে ক্রমশ
ধরে নাও, পরিধি বাড়ছে!
ছোঁয়াছুঁয়ি
খেলা চলছিল অনায়াস
আজ কেমন
সব শান্ত!
হাওয়া আছে, নেই উতরোল - নেই স্পর্শ!
জানি
এভাবেই চলে যাবে এ যাবৎ বছর।
চলছে
প্রস্তুতি, হবে উদযাপন’ও
একটা
নির্লোভ বিকেল শুধুমাত্র বাদ পরে যাওয়া কথা’দের জন্য
তবে সব
পার্বণেই থাকে অপেক্ষার গল্প
শেষ থেকেই
শুরু —
আবার ফিরে
পাওয়া - অনাবিল ইচ্ছেগুলো!
(৬)
মাঝে মাঝে
নিঃশব্দে এসে দাঁড়াই
বয়ে চলা
নদীটির পাশে!
খরস্রোত
দেখে ভাবি কত দাম্ভিক,
স্বার্থপরের
মতো
ভেঙ্গেচুরে
এগিয়ে যায় নিজের মতো!
দূর থেকে
ভেসে আসা ভাটিয়ালী সুরে
উড়িয়ে দি
শব্দের ছই, জালকাঠি বাঁধি,
আসলে
অপেক্ষায় থাকি, থাকতে হয়
আমার যে
বিস্তার এইটুকু’ই——
(৭)
তোমার কাছে চাওয়ার ছিল অনেক’টা!
বেশী কিছু না হলেও -
একটু ভালোবাসা, অপার স্নেহ আর পাশে
থাকার নিঃশর্ত অঙ্গীকার,
তুমি যে আমার জীবন’ভোরের কৌলীন্য।
শরীরে-মনে-মজ্জায়,
ছত্রে ছত্রে যে আজন্মের দাগ কেটেছো,
উপেক্ষার নয়!
বারেবার এসেই এভাবে চলে যাও,
মেনে নিয়েছি এ আমার ভবিতব্য;
থরে থরে গুছিয়ে রাখি রোজ,
খুঁটে বাঁধা টুকরো জীবন।
আসবে জানি ফিরে - অপেক্ষাতে’ই কাটে
আমার একলা যাপন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন