আয়রনি
সদ্যজাত
শিশুদের কোরাস। পোস্ট ন্যাটাল ওয়ার্ডে আজ মহোত্সব। বাতাসে ফিনলের গন্ধের সাথে
মাতৃদুগ্ধের মিশ্রিত গন্ধে ভিজিটরদের শৈশব ফিরে আসে। আর যাই রীতিনীতি পৃথিবীর
মানুষের চলুক একটি ধ্রুব সত্য যে মৃত্যু অন্ধকারের নিরানন্দ
অনুভুতি আর জন্ম আনন্দ আলোর ফোয়ারা। পোস্টন্যাটাল করিডোরে সাদা পোশাকের যাওয়া আসা।
মা’দের স্তন এখন শুধুমাত্র শিশুদের জন্য।
একজন
মা : (সিস্টারের প্রতি) দিদি ও দিদি, আমার বাচ্চাটা দুধ টানছে না যে? দেখুন না মুখটা সরিয়ে নিচ্ছে।
সিস্টার
চুপচাপ। স্মিত হেসে বলে তোমার প্রথম সন্তান তাই একটু হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে
ও এডভাইস দেয়।
আরেকজন
মা : দিদি আমার... আমার বোঁটা নেই যে? কী করি?
সিস্টার
: (মুখ ঝামটা ও খিস্তি) মাই টেপ। দুধ বেরোবে। বাচ্চাটাকে ধরা দুধ।
মরণ আর কী!
অপর
একজন মা : দিদি আমার বোঁটা এরকম ফেটে ফেটে গেছে কেন?
সিস্টারের
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও এডভাইস।
অন্য
একজন মা : দিদি ওই বউটাকে দেখুন? ওর পাঁচ পাঁচ কিলো মাই অথচ সারারাত গরম জলে গুঁড়ো
দুধ গুলেছে আর ঢেলেছে।
সিস্টার
: এই! তুমি কী গো?
তোমার তিনটে বাচ্চা,
জানো না? বাচ্চাটাকে মায়ের প্রথম দুধটা খাওয়াতেই হয়?
অন্য
এক মা’র চোখে জল,
মুখ নিচু।
সিস্টার
: এই! তোর কী হলো?
বাচ্চাও কাঁদে আর মাও কাঁদে? কী হল কি?
উত্তর
: আমার (ঢোক গিলে) আমার বুক ছোট যে!
সিস্টার
: তোর মাথা। ও বুঝেছি। এখানে এতোগুলো মোষ দেখে তোর ইয়ে হচ্ছে, না? খোল বলছি বুকের কাপড়। ধরা বাচ্চাটাকে দুধ। ওরে!
বাচ্চাকে দুধ না খাওয়ালে তোকে মা বলে চিনবে কী করে?
এভাবেই
কেউ সলাজ কেউ অভ্যস্ত মমতাময়ী মা’দের পার করে করিডোর দিয়ে এগিয়ে যায় রেস্টরুমে।
রেস্টরুমে ঢুকে স্টাফ টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে। আয়নার সামনে টপ ও বক্ষবন্ধনী
খোলে। ডান বুকে একটা ফোমের প্যাড খুলতেই আয়নাতে এক গভীর ক্ষত প্রতিবিম্বিত হয়।
শুধু বিসদৃশ বীভত্সতা নয়, আয়না থেকে নিরন্তর হাহাকার অসম্পূর্ণতা ও চিকিত্সা
শাস্ত্রের এখনো অব্দি ব্যর্থতার করুণ ছবি বিচ্ছুরিত হতে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন