নারীকল্যাণ
দুর্গানগর নারী কল্যাণ সমিতির
ডাকসাইটে, দুঁদে প্রেসিডেন্ট, তথা নর্থ সিটি ইন্টারন্যশানাল স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল,
পঞ্চাশোর্ধ, দীর্ঘাঙ্গী, উচ্চশিক্ষিতা, মিস মহামায়া মজুমদারের আটতলার ফ্ল্যাটে তখন
মিটিং চলছে। লোক্যাল কাউন্সিলার থেকে শুরু করে আরো বেশ কিছু ক্লাব আর এন জি ও’র
মাথারা লিভিংরুমে এসি’তে বসে নারী মুক্তি তথা তাদের শোষণ, শাসন, বঞ্চনা, অবমাননা,
অসম্মান, দারিদ্র ইত্যাদি প্রভৃতি থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার ব্যাপারে তুমুল এবং
গুরুগম্ভীর আলোচনায় ব্যস্ত। মধ্যে মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ধূমায়িত চাও শীতল সরবত
সহযোগে সাহিত্য, রাজনীতি, খেলাধুলা এবং রঙ্গমঞ্চ বিষয়ক আলাপচারিতাও তুঙ্গে।
শঙ্করী কলিংবেল টিপল। ‘কী ব্যাপার, তুই? এখন?’-- মিস
মহামায়া মজুমদারের গলায় স্পষ্টতই বিরক্তির সুর।
‘দিদি, ওই আসলে ঘরের মানুষটার বড় অসুখ, তোমায় সেই গেল
হপ্তায় বলেছিলুম নি?... তো সেই আর কি...
ও’মাসের টাকা ক’টা পেলি আমার লোগটারে এট্টু ডাগতারের কাছে নে যেতুম গো! তুমি তো
সগগাল সগগাল কাজে বেইরে যাও, তখন আর চাইতে
পারি নে... ওই জন্যি ভাবলুম, এখন এলে যদি মাইনেটা...’
‘এখন হবে না। দেখছিস না, ব্যস্ত আছি! কাল মা’র কাছে রেখে যাব,
নিয়ে নিস!’
ঘরের দরজা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল।
‘কী গোওও! পেলেএএ?’-- ঘরের ভিতর থেকে একটা ভাঙাচোরা কফ ওঠা
ঘড়ঘড়ে আওয়াজ।
‘নাহ!’
‘সে কি!... আজও দিল নি! মাস শেষ হতি গেল যে! এভাবে আমাদের
চলবে কী করি বল দিকি? বলছি শোন, কাল থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করি দাও। আমার ওষুধ পথ্যি... সে যা হোক একটা ব্যবস্থা হবে
খন। গায়ে গতরে সারা মাস খেটে, ঠিক সময় পয়সাটুকু দেওয়ার কথাখান মনি থাকে না...
দরকার নেই, এমন বেয়াক্কেলে মানুষের বাড়ি ঠিকে কাজের’।
শঙ্করী কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে খেতে খেতে ক্লান্ত গলায় বলল, ‘দেবে
গো দেবে, ঠিক দেবে! দিদির কত কাজ, রোজ ভোর ভোরই স্কুলে বেরিয়ে যায়, রেতের বেলায়
বাড়ি ফিরে লেখালিখি, মিটিংপত্তর, দিদির কী আর এসব ছোটখাট জিনিস নে ভাবলি চলে!
মানুষটা বে থা করেনি। ঘরে অমন আধ-পঙ্গু
বুড়ো মা, আমি হঠাৎ করি কাজ ছেড়ি দিলি, মানুষ দুটো বড্ড বিপদে পড়ি যাবে গো...! সে
হয় নে! তুমি ঘুম যাও, রাত হলো, আমি তোমার বুকে ত্যালখান মালিশ করি দি...!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন