অরণ্যদেব
আমি আর সায়নী। সায়নী বলে, লজ্জা করে না তোমার? সুর করে গাই,
মগর জী নহীঁ সকতে তুমহারে বিনা—!
থাক খুব হয়েছে।
সায়নী হাসে। আমার ব্যাগে জয়দা’র ‘পাগলি তোমার সঙ্গে’। সায়নী অন্য রাজ্যে বড় হয়েছে। বাংলা পড়ে বানান করে না হলেও,
আটকে আটকে। জয়েণ্ট এণ্ট্রান্স সুবাদে দুজনের এক কলেজ। আমি শোনাই, পথ বেঁধে দিল
বন্ধনহীন গ্রন্থি—। ও মানে বুঝতে চায়, রাগ করি না। ওর হীনমন্যতা আছে বাংলা জানে না
বলে। আমার গানের গলা ভালো সকলে বলে। হিন্দীগান গাইলে সায়নী বোঝে, বেশি খুশি হয়। আমার হাতটা নিয়ে বলে, তুমি বড্ড দুব্লা। আজকাল সবলোগ জিম করে, তুমি কর না কেন?
আমি গুম হয়ে থাকি। মাথার
ভেতরে শব্দ করে পাখি চেঁচায়। বলি না যে, আমার মা জন্মের ক’মাস পরে যেন মরে গেছে।
বাচ্চা বয়সে কঠিন অসুখ করেছিল, আরও অনেক কিছু। বলি, তুমি অরণ্যদেব পড়েছ?
অরণ্যদেব কে?
উত্তর না দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। ও পাশে পাশে। হলদিয়া পোর্টের গা ঘেঁষে আমরা অনেক দূরে হেঁটে যাই। নদীর
বাতাসে আরাম লাগে। সায়নীর স্টেপকাট চুল ওড়ে আগল-পাগল হয়ে। কী ভালো লাগে আমার!
সেদিন সন্ধ্যে লেগেছে। সায়নী বলল, জব উই মেট্ দেখেছ?
আমি উত্তর দেবার আগে হঠাৎ তিনটে ছেলে সামনে। দুজন পেচ্ছাপ
করছিল পেছন ফিরে, দেখেছিলাম। প্যাণ্টের জিপ লাগায়নি। এদিকে তাকিয়ে হিন্দীতে কথা
বলছে। হাসছে বিচ্ছিরি করে। ভাষাটা তত বুঝি না। সায়নী আমার পেছনে এসে আড়াল খুঁজছে। একজন
এসে নোংরা শক্ত হাতে আমাকে পিছমোড়া করে টেনে ধরল। আমার কব্জিতে জোর নেই। চেষ্টা
করেও ছাড়াতে পারছি না। সায়নী ভীষণ কাঁদছে। ওরা সায়নীর টিশার্ট তুলে ফেলেছে। ব্রেসিয়ার দেখা যাচ্ছে। জিন্স নামিয়ে দিয়েছে,
প্যান্টি। চোখ বুজে ফেলেছি। ও চেঁচিয়ে কাঁদছে, অত্রিইইইই—!
চমকে উঠেছি। পেছন থেকে আচমকা প্রচণ্ড গোঁত্তা খেয়ে আমার
হাতটা ছেড়ে দিয়েছে গুণ্ডাটা। বিদ্যুতের
গতিতে ত্রাতা এগিয়ে গেছে সায়নীর দিকে। দমাদ্দম লাথি আর রদ্দা চালাচ্ছে ছেলেদুটোকে।
আমার গা গুলোচ্ছে, বমি আসছে। বসে
পড়েছি মাটিতে। চোখের সামনে দেখছি তিনটে ছেলে জঘন্য নোংরা গালি দিতে দিতে ছুটে
পালাচ্ছে।
ও ইমতিয়াজ। আমাদের একক্লাস সিনিয়ার। দেখেছি, পরিচয় নেই। প্রায় ছ’ফিট লম্বা,
চওড়া কবজি। সলমন খান। আমার
চোখের সামনে ওর বুকে নেতিয়ে আছে সায়নী, আমার সায়নী। ওর পিঠে অরণ্যদেবের আলতো হাত
টোকা মারছে।
বহুৎ ডর গয়ী থী?
অরণ্যদেব চওড়া হাসছে। একটু সরে গিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে সায়নী
নিশ্চিন্তে জামাকাপড় ঠিক করে নিচ্ছে। আমি দেখছি। আমি অত্রি। আমার আর সায়নীর একসাথে
গতমাসে ঊনিশবছর পূর্ণ হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন