বুধবার, ১ মে, ২০১৯

পদ্মাবতী রায়চৌধুরী




স্পর্শ

বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে তুমি একবার 
ছুঁয়ে দেখতে চাইছিলে আমার চাঁদ...
আর অন্ধকার খুঁজতে খুঁজতে আমি 
দুধ দুধ চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাচ্ছিলাম, 
পিষে ফেলতে চাইছিলাম তোমার
দানা দানা মহুয়া...

আচমকা দুনিয়ার দোর খুলে গেল,
অন্ধকার মুছে গেল,
কড়াইতে ছিটকে উঠল পাঁচফোড়ন...

এরপর 
আমরা দুজনেই জানি...
চাঁদ ঢেকে যাবে ইলেকট্রিকের ধোঁয়ায়,
হলদেটে রান্নাঘরের বালবের নীচে
আমি চাল ধুয়ে নেবো,
আর তুমিও...
চেনাশোনা নির্বিকারে উল্টে চলবে,
বাসি খবরের কাগজের কালচে মেঘ...

আমরা আবার অপরিচিত হয়ে যাবো,
অন্তত আরও একটা বৈশাখী পূর্ণিমা
না আসা পর্যন্ত...



অনুপ্রবেশ

তোমার ঘুমন্ত মুখে আলো খেলা করে,
তুমি জানো না...
চিবুক থেকে গড়িয়ে পড়ে রোদ৷
রোম রোম বুকের ওঠাপড়ায় 
মায়াযুদ্ধ চলে,
তুমি জানো না...
চুলের ডগা থেকে স্নানজল ঝাড়তে ঝাড়তে,
আঙুলের রেখা থেকে গরম ভাতের
গন্ধ মুছতে মুছতে,
অন্ধ বারান্দায় ভিজে ভিজে 
পাঞ্জাবীর জলের টুকরোতে, 
নিষিদ্ধ গহীনে নামতে থাকা
খণ্ড খণ্ড বৃষ্টি হয়ে,
তোমার যাবতীয় ক্রোধেরাও 
আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে,
তুমি জানো না...

আমরা একে অপরের 
পাপ ক্ষমা করতে করতে,
আদর আর অবহেলার 
আলোজলে গলে যাচ্ছি,
তুমি জানো না...

আমার অবৈধ দৃষ্টিতে তুমি 
সোনা হয়ে গেছো...
তুমি জানো না...



সিসিফাস

ঝড়ে জলে রোদে মেঘে পুড়ে যাওয়া রাত...
আর আকাশ জুড়ে জ্বলতে থাকা
জ্বলন্ত শোকের মত 
অধবা চাঁদকে গলতে দেখছে
এই ভরা এপ্রিলের মাঝরাত৷
পোড়া ঝুরঝুরে বিছানায় 
একটা পায়রা এসে হাসলো,
তুই কি ভাত খুঁজছিস না ভালোবাসা?

আসলে হয়ত কিছুই না...
তোমাকে তো মোটেও না...
ভাত ও ভালোবাসার উপরেও থাকে কিছু...
আসলে হয়ত নিজেকে

তারপর থেকে আজন্মকাল সিসিফাস ধূলায়
গড়াচ্ছে... উঠছে... উঠছে... গড়াচ্ছে...
অথচ জ্যামিতি আর অঙ্ক বলছে, 
তোমার সরণ শূন্য...
হাঁটতে শেখোনি আজও...
হোঁচট যতখানি শিখলে ৷



1 টি মন্তব্য: