যে সমুদ্র ঢেউ গুণতে শিখেছিল
(১)
আমি হাঁটবো
তুমি চাও বা না চাও
আমি হাঁটবোই
যে সমুদ্র একবার ঢেউ গুণতে শিখেছে
সেই জানে কতখানি
লবণাক্ত তার হৃদয়
চারপাশে ঘোলাটে আকাশ
অন্ধ শব্দ হাতড়ে বেড়ানো নামীদামী সড়ক
যতদিন না পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়ে উঠছে
ততদিন লবণেই তাঁর অজস্র দেবতার চোখ
আলুথালু শিশুর মতো খেলা করে
বুকের ধূসর চামড়া
সভ্যতার বড়াই মানেনি কখনো
মৃত্যুর মুঠো খুলে বরং দেখিয়েছে বারবার
ঘুণ ধরা আয়ুর কারসাজি আর
দাঁতাল শূকরের বিষ্ঠা চেটে চেটে খাওয়া
একই প্রতিযোগিতার এপিঠ ওপিঠ
আমি হাঁটব
আমি ততদিন হাঁটব যতদিন না
আগুনের নাগাল পাচ্ছে মানুষ
সেই আগুন
যাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে
ঘন ঘন মাছি ওড়া আত্মার নিচে
(২)
বোধহয় জানতে না
এমন দুঃসময় মানবেতিহাসে বারবার এসেছে
যখন অন্ধের মতো মানুষ বিশ্বাস করেছে সবকিছু
আর তারপর ঠকে গেছে জলের দরে
খুব বেশি দূরে নয়
এই তো সেদিনও
মানুষ মানুষকে চিনত মানুষের গন্ধে
জীবনের ক্লেদে শরীর ডুবিয়ে বলত না,
চমক চাই,
চাই উদ্দাম ফুটপাত
বেবাক উলঙ্গ ধোঁয়ার মতো
পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠা রাত
চাই হাততালি চাই আমোদের বশে
ছুঁড়ে ফেলা টুকরো টুকরো টাঙানো দৃশ্য
যার কোণে লেগে থাকবে আমাদের অকিঞ্চিৎ নাম
হুইলচেয়ারে দুনিয়া এখন
তৃতীয় বিশ্বে তার ছায়া এসে পড়ে
মানুষের জীবনে করুণাময় হয়ে ওঠেন সম্রাট
ভীষণই রোগা লিকলিকে এক অর্কেস্ট্রা যেন
একঘেয়ে সুরে বাজে আধখানা শরীর তার পশুর মতো
গোঙায়
বাকি আধখানা বসে থাকে
জিভের
ভাঁজে দীর্ঘায়ু কাঁচা বিষ নিয়ে
(৩)
কতদূর নগ্ন হতে পারো তুমি?
কতদূর নেমে যেতে পারো বাচ্চা হারামির মতো?
ভেবেছ অশ্লীলতাকে কাটবে অশ্লীলতা দিয়ে?
বেওকুফ,
এটুকুও জানো না
সমস্ত গরলই শেষপর্যন্ত গরল
যদি না তাকে ঢেকে ফেলা যায় অন্তিম ওষুধে?
ইতিহাস জটিল
মানুষ জটিল
বুকের ভিতর ধূর্ত হায়না
বহুমূল্য মিথ্যের বাগানে
বিষফুল হয়ে ফুটে আছে
চতুর্পাশে জ্বলন্ত চুল্লি খসিয়ে দিচ্ছে ছাল
তীক্ষ্ণ খড়্গে সতত বিচ্ছিন্ন করে চলেছে শৈলচূড়া
স্বৈরাচারী অপদার্থ খোজার দল
লাথি মারি অমন ঘেয়ো প্রজাতির মুখে
সর্বাঙ্গে যার দগদগে ঘা
নিত্য বিইয়ে চলেছে অসার মুহূর্ত
সভ্যতার খাস পঙ্গপাল
আমার রক্ত হাজার বছরের পুরনো নয়
যে শ্যাওলা ঢাকা পড়ে পড়ে কালচে দেখাবে
সুখে আছি দুঃখে আছি
তবু বেঁচে আছি নিষেধের লক্ষ পাক ভেঙেচুরে
সজ্ঞানে দরজায় দরজায় এখনো আমার নাম
ফুটে আছে
অতিকায় সূর্যের মতো
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন