শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

দেবযানী বসু




চেরিফুল


সারাক্ষণ দেরি হয়ে যাচ্ছে ভাবনাটা সদ্য মিসেস হওয়া শুভানয়না ঘোষালিয়াকে তাড়া করে বেড়ায়। মহিলা ধাত্রীবিদ্যা চিকিৎসককে দেখিয়ে শুভা দ্রুত ওলাক্যাব ঠিক করতে করতে সিঁড়ি ভাঙে। আজকাল আল্ট্রা সোনোগ্ৰাফি ছাড়া মা ও ভ্রূণের একপাও এগোনো সম্ভব নয়। এমনিতেই ভীষণ বিরক্তি লাগছে অবাঞ্ছিত ভ্রূণ এসে যাওয়াতে। এতো কম বয়সে কর্পোরেট অফিসে জয়েন করে পায়াভারী অ্যাসিস্ট্যান্ট পদগুলো আলোকিত করে বসেছে স্বামী স্ত্রী দুজনেই। কাজেরও অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাইরে! ছুটির দিন কম্পিউটার আর মোবাইলের ভিতর  কেটে যায়। এর উপর আত্মীয়স্বজনের  সঙ্গে মেলামেশা কম পড়ে যায়। বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গ বেড়ে যায়। একই বিছানায় ওরা অনেক সময় বিভিন্ন সময়ে শোয় আর মোবাইলেই চুম্বনমন্ত্র লিখে রাখে। তাও কোনো ফাঁক ফোকর দিয়ে ফিটাস গজিয়ে উঠল কে জানে! শুভার মুখ বেশির ভাগ সময়েই এখন মালদার ফজলি আমের মতো ভারি হয়ে থাকে। 

বিয়ের প্রায় একবছর হল কিন্তু ওদের মনে হয় এই তো সেদিন।  নতুনবৌ সেজে থাকতে শুভার ভালো লাগে। ডেনিম জিন্সের সঙ্গে সিঁদুর আলতা পলা চুড়ি দিয়ে নিজেকে জমজমাট করে রাখে। যদিও ওর শরীরে মেদস্তর আর পুঞ্জমেঘস্তরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

ওদের হানিমুন করা হয়ে ওঠেনি। মাস তিনেক ধরে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে ছুটিটা একসঙ্গে মেলাতে পেরেছে। ক্লাব মাহিন্দ্রার দেওয়া রিসর্টের প্যাকেজটা সুদে-আসলে উশুল করে নিতে চায়। এখন  ডাক্তার বললেন, ভ্রণের হার্ট বিট এসে গেলে কোত্থাও যাওয়া যাবে না। কারণ  খাদ্যবিলাসী শুভা অস্বাভাবিক ওজনধারী। 

পরের দিন শুভা চেম্বার থেকে বেরোলো আলট্রাসোনোগ্ৰাফি করিয়ে। ননদের মুখের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে ফেলল। ননদ বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,  ওয়েট এন্ড সি। বেড়াতে যাওয়ার জন্য কবে-এএ থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিস শুভা... বাচ্চার জন্যও যখন প্রস্তুতি নিবি তখন... 

বন্ধ চোখে ও দেখতে পায় নার্সিং হোমের কর্মী একজন এগিয়ে আসছে রিপোর্ট হাতে তার থেকে ঝরছে অজস্র NO লেখা চেরিফুল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন