ঢালাই রাতের কবিতা
প্রহর
বেজে যাচ্ছে ন'টা দশটা; ছাপ ছাপ আঁকিবুঁকি কাটা
ঢালাই রাস্তার ধারে খিস্তি দিচ্ছে তেলেভাজা দোকানদার
গুঁড়ো গুঁড়ো মসলার টুকরোগুলো ছড়িয়ে
দিচ্ছে রাস্তায়
কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে নিদ্রাভাঙা ঝিঁঝিঁ
গানের সুর-
বাতাসে আর্দ্রতার কারণে ঘামের ছাপ ফুটে উঠছে
টিশার্টের গায়ে, ভেজা রাতের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে-
বিউটি পার্লারের মাথায় চাঁদটা মেঘে ঢাকতেই ছনছন শব্দ
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে যৌনতার
প্রলেপ দেওয়া মুখ
কতদূর মাঠ, কতদূর ফুল, অফুরান আবছা শরীর
কী দেব রাত্রিকে - নির্জনের পথটাই স্রোত
নেয়
জ্বালাময় বিশ্বের দু-চোখ!
প্রতিষ্ঠা
জল ভেসে যায় বাল্বের ভাঙা ভাঙা ইলেকট্রিক নিয়ে
দাদু বলতেন - এর নাম শিয়াল তাড়ানো বৃষ্টি
যদিও প্রচন্ড অন্ধকার থাকে মেঘ ঢাকা সন্ধে
আর আমাকে অনুসরণ করে খোকনদার লিকার চা
ছিঁচকাটা বেঞ্চি থেকে পিঠে
পড়া গুঁড়ো বৃষ্টি ঝাড়তে ঝাড়তে
হাত ভিজোচ্ছি, ভেজা মতবাদগুলি মনে আসছে কিছুতেই-
কোন পায়ের ছাপ নেই - গড়িয়ে যাওয়া ঘোলা জলে কংক্রিট ভাইরাস
অথবা আমি কীই বা ধারণ করতে পারি নিজের নগ্ন শরীরে, তবে
কি
গড়িয়ে যাবার কাল এসে দাঁড়িয়েছ ইলেকট্রিক পোস্টের নিচে
এসব এগিয়ে যাবার কাল - সমস্ত
নোংরামো নিয়ে কাদা মুছে দিতে
চুমুক দিতে থাকি সুতীব্র আত্মহননের!
বসবাস
একটি নিবিড় সম্পর্কের কাছে
অপেক্ষা করছে চৌমাথার রাত
সদ্য উৎকোচ দিয়ে যে কয়েকটা বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে
তাদের মাথায় কালো মেঘ, দুরান্তের কলঙ্কবাহ বাদুড়েরা উৎসুক,
ঝাপটাচ্ছে আবছা ডানায় ছুঁয়ে থাকা বাতাসের কান্নাকাটি
আমি তার নাইট বাল্বের দিকে তাকাই, সেখানে নীল
স্বপ্নেরা
বিছিয়ে দিয়েছে শিরা উপশিরার কেবললাইন-
পার্টি অফিসে পৌঁছে যায় নেশাখোর কাঁপনের অবাধ্য প্রলাপ
কোথায় পৌঁছবে মৃত্যুঞ্জয়; কোন বীজের ভিতর স্থায়ী যন্ত্রণার হাত
সীমিত জীবনের সঠিক দৃষ্টিপথে তৈরি থাকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি
মিলনের নির্জন কালো পিচরাস্তাটি নির্বাক নদী হয়ে যায়-
একা জেগে থাকা গাছটা আমায় চেনে না - আমি তারই নামে
শিমুল হয়ে যাই
যন্ত্রণা
চলো হে, এবার না হয় ফেরা যাক সাটার বন্ধ মায়াবী
আলো পেরিয়ে
এই রাস্তা শেষে নাবালের ব্যাপক কাদা
চটকে চটকে গান গাই জাজ্,
ফেরা যাক রাতের ডেরায় - বাস
এসে থামলে ভাড়া করা রমণীরা
হাঁটতে থাকুক কামুক রাস্তায়; ঝটপট করা রাতের পাখিরা
প্রচণ্ড ধ্রুপদ,
বিষাক্ত জোনাকির
সাথে ফিরে আসছে শান্ত আঁধার, ভূমিকার পাতা খুলে
শারীরিক হওয়ার আর্তিটুকু জলজ
মাঠের ধানগাছে মিশে যাক-
বুনোফুল হত্যাকারীদের সামগ্রিকতায় হয়তো এ হন্যমান শরীর
আর দেরী নয়, আমরা তো এখনো বিপন্ন হইনি মৃত্যুঞ্জয়;
চেতনার ভিতরে জ্বলন্ত আগুন দখল,
খসে পড়ে অকাল ফুটন্তফুল-
হাতের আঙুলগুলোয় অচেনা হাওয়ার ভিড়ে অবিশ্বাসের ডানা-
বৃষ্টি পড়তে থাকে নীরব রাতের বুকে - এত সব পার হতে গিয়ে দেখি
লুপ্তপ্রায় কাঙালদের হাতে কয়েক কিলোমিটার ক্ষতিপূরণ, নাকি
ঢালাই রাস্তা।
নিরাময়
অবসর নেই, তবুও মেঘলা দুপুরের
ভিতর দিয়ে
চলে যায় বিষণ্নতা অথচ শুকনো বাঁশপাতায়
তখনও লেগে আছে শিশির, ঝাড়ু দিতে চেয়ে
দহনের এক পর্বে চিবুক ছুঁয়ে দেয় রোদ–
অনিবার্য এই বেড়ে ওঠা পথের ধারে অপাপ সুর,
কোন নিশ্চয়তা নেই - কেবল মুঠো ভর্তি পার্থিব ঘাম
সারাদিন এক ঝলক আগুনের জন্য
বিহ্বল, অতীত থেকে
ভাসতে ভাসতে সীমানা ছিঁড়তে থাকে অপরাজিতার তরঙ্গ-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন