শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

অচিন্ত্য দাস




রোবোটিনা


লোকালে ঝাড়া একঘণ্টা লাগে অফিস পৌঁছতে জানালার ধারে জায়গা পেয়ে গেলামআজ আবার হাফ্-ইয়ারলি স্টেটমেন্ট বার করার দিন, ফিরতে রাত হয়ে যাবে
আপিসে নিজের সীটে গিয়ে হকচকিয়ে গেলাম সীটে বছর পঁচিশের একটি অতি-সুন্দরী মেয়ে বসে আছে আমাকে দেখেই বললসুপ্রভাত আমার নাম শকুন্তলা রোবোটিনা মিশ্র।
আমি তো হাঁ এ কে? আমার জায়গায় কেন?
-আমাকে হেডঅফিস পাঠিয়েছে আপনার কাজ করার জন্য।
-মানে? আমার এখন মেলা কাজ পরে কথা বলব, আপনি বরং এখন...
আমি নিজের চেয়ারের দিকে এগোলাম। চেয়ার ছাড়ার কোন চেষ্টাই নেই সুন্দরীর। মিষ্টি গলায় বলল – জানি, হাফ্-ইয়ারলি স্টেটমেন্ট তো? এই দেখুন...
সুন্দরী কম্পিউটার পর্দার সামনে আঙ্গুল দিয়ে হাওয়ায় কী সব লিখল, অনেকটা  নাচের মুদ্রার মত। ব্যস্, পর্দার ওপর হু হু করে গত ছ-মাসের হিসেব-নিকেশ  আসতে লাগল। তারপর লাল-অক্ষরে এলো – চেকড্, ও কে।
-এই তো হয়ে গেল। সব কাজ আমি সামলে দেব।
একি অন্যায়! আমার চেয়ার, আমার চাকরি? ছুটলাম বড়-সাহেবের ঘরে। সেখানে দেখি একই ব্যাপার। বড় সাহেব দাঁড়িয়ে, চেয়ারে বসে আছে আর এক সুন্দরী মহিলা। নাম বলছে  প্রিয়ংবদা রোবোটিনা গুপ্তা। সেও চেয়ার ছাড়বে না। ও নাকি পুরো আপিস ম্যানেজ করবে।
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল – এ ও রোবোটিনা?
-হ্যাঁ, আমরা সবাই রোবোটিনা অটোমেশনস্, ইউ এস এ-তে তৈরি রোবোট।
কী একটা বলতে যাচ্ছিলাম, আমার অফিসের বন্ধু সুজয় ফটাস করে পেনসিল দিয়ে মাথায় মেরে আমাকে চুপ করিয়ে দিল।
পেনসিলে তো অত জোর লাগে না, ওটা ছিল ট্রেনের জানালার শিক। ঢুলছিলাম।  জেগে মনে হল – এসব সত্যি, না স্বপ্ন? কামরার ভেতরে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি  লোক, সাধারণ আটপৌরে মানুষজন। মোবাইল ফোনের মায়াদর্পণ এদের পকেটে পকেটে এসে গেছে ঠিকই, কিন্তু টেকনোলজির টানে দুনিয়ার ট্রেন এদের নিয়ে কোন অজানা জায়গায় যে চলেছে, তার কোনো আন্দাজ এদের আছে কি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন