শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

অর্ক চট্টোপাধ্যায়




বিষাদপ্রজন্ম


কবে কে যেন লিখে রেখেছিল, 'বিষাদপ্রজন্ম' শব্দটা। ওর জন্য? ওরই জন্য কি? নাকি ও নিজেই লিখল একদিন। প্রত্যেক শব্দের এক নিজস্ব সময় থাকে যার জন্য সে লিখিত হয়। হয়তো। যখন লিখিত হয়, তার বেশ কিছুটা পরে আসে তার সময়। পরে না আগে না তখনি? কে জানে?

ও আজকাল মানুষের থেকে বেশি কুকুরদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করে। রাস্তায় কুকুর দেখলেই হল! নিজেরই অজান্তে মুখ দিয়ে কোন না কোন একটা বাক্য বেরিয়ে আসে। আশেপাশে বা সঙ্গে অন্যান্য মানুষ থাকলে তারা কপাল কুঁচকোয়। এমন সময়ে অনেকে ওর দিকে যে দৃষ্টিতে তাকায়, তাতে উন্মাদনার অভিযোগ রেখায়িত হয়।

কী রে, আছিস কেমন?”
কী খবর তোর? অনেকদিন দেখছি না এপাড়ায়?”
ওরম ম্যাদা মেরে পড়ে আছিস যে? খেতে পাসনি?”
কে মারল তোকে?”
কাঁদছিস নাকি?”

ও আজ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি নেড়িরা কী চায়? খাবার না আদর? না দুটোই?  আচ্ছা আদরও তো একটা খাবার নাকি? যারা কুকুর ভয় পায় তারা হয়তো তাদের আবদারকে ভয় পায়। আদর করতে না পারলে কি ভয় আসে?

ভয় আসুক না আসুক ওকে দেখে লেজ নাড়ানো জুলজুলে একটা না একটা কুকুর ঠিকই আসে। বিস্কুট না থাকলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। খানিকক্ষণ ওর পাশে পাশে হাঁটে। তারপর চলে যায় নীরবে।

কুকুর কথা বলে না। খালি ডাকে, নানারকম শব্দ করে। তাই তো ওর কুকুরের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। মানুষের ভাষা ওকে কষ্ট দেয়। ও তাই কুকুরের ভাষায় উত্তর চায়। কুঁইকুঁই, গরর, ভুটভুট ইত্যাদি ক্রমশ ওর উত্তরের সামগ্রী হয়ে ওঠে। চোখ বন্ধ হয়ে আসা আরামে উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় ঠিক।

মানুষ কথা বলে যায়। অধিকারের কথা। সময়ের অধিকার। জায়গার অধিকার। ভয় পাওয়া আর না পাওয়ার অধিকার। তাদের মুখনিঃসৃত অবিরত শব্দ বহিষ্কারপথে হাঁটে। দেওয়াল ওঠে। কালো গাড়ি আসে। ও কুকুরদের সঙ্গে ঐ গাড়িতে উঠে পড়ে। বিষাদপ্রজন্ম। মানুষের ভাষায় এই শেষ শব্দ। বাকিটা আদর। যে আদর না এলে ভয় আসে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন