ঠাকুরবাড়ির রান্না
"আমসত্ত্ব দুধে ফেলি
তাহাতে কদলি দলি
সন্দেশ মাখিয়া..."
সন্দেশ মাখিয়া..."
শোনা যায় আমসত্ত্ব দুধ আর সন্দেশ রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয় ছিল। এছাড়াও খেতেন নিমপাতার সরবত। শুধু নিমপাতার সরবত
নয় আরো অনেক ধরনের বিদেশী সরবত ছিল তাঁর পছন্দের তালিকায়। সরবত পরিবেশন হত রকমারি গ্লাসে। ঠাকুরবাড়ির মানুষজন যে কাচের
সামগ্রী ব্যবহার করতেন তা অধিকাংশ পাশ্চত্য ঘরানার ছিল। বিভিন্ন
ধরনের সাহিত্যসৃষ্টি যেমন তাঁর নেশা ছিল, ঠিক তেমনই খাদ্যরসিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর৷ বিভিন্ন দেশ ঘুরে উল্লেখযোগ্য রান্না দেখলেই বা খেলেই তা লিখে রাখতেন একটি
খাতায়। রবীন্দ্রনাথ নিজেও
রান্না করতেন সেটি দেখে।
পরবর্তী সময়ে সেই খাতাটি তাঁর স্ত্রীর কাছে হস্তান্তরিত হয়।
কবিস্ত্রী মৃণালিনী দেবীর রান্না ঠাকুরবাড়ির
অন্দরমহলে খুব জনপ্রিয় ছিল। তাঁর হাতের রান্না খেতে সবাই খুব পছন্দ করতেন, বিশেষত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। শোনা যায় সেই রান্নার মধ্যে বিদেশী আদপ বেশী থাকত। রবীন্দ্রনাথও পছন্দ করতেন মৃণালিনী
দেবীর রান্না। তিনি নাকি টকের সঙ্গে
ঝাল মিশিয়ে বেশ নতুন পদ তৈরি করতেন।
ঠাকুরবাড়িতে প্রায়শই খামখেয়ালি সভা বসত। সেই সভায় কবি হতেন মধ্যমণি। সেই খামখেয়ালিপনা থেকেই হয়তো তিনি রাত দুটোর সময় মৃণালিনী দেবীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কিছু রান্না করে খাওয়াতে বলতেন। শোনা যায় এই ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। মাঝরাতে মৃণালিনী দেবী রান্না করে রবীন্দ্রনাথকে খাওয়াতেন।
কবি দেশি খাবারের মধ্যে পছন্দ করতেন কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল, নারকেল চিংড়ি। তিনি কাবাব খেতে খুব পছন্দ করতেন, যেমন - শ্রুতি মিঠা কাবাব, হিন্দুস্থানি তুর্কি কাবাব, চিকেন কাবাব নোসি।
এখানে কাঁচা ইলিশের ঝোলের রেসিপি দিলাম-
মাছ পরিষ্কার করে নুন ও ১/২ চা চামচ হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে।
তেল গরম হলে কালোজিরে ফোঁড়ন দিয়ে কড়াই আঁচ থেকে
নামিয়ে মাছ দিয়ে আবার কড়াই চাপাতে হবে। তারপর আন্দাজমতো জলে বাকি হলুদ গুঁড়ো এবং ১/২ চা চামচ লঙ্কার গুঁড়ো আগেই গুলে
রাখা দরকার। সেগুলো মাছের মধ্যে দিয়ে নুন আন্দাজমতো দিয়ে দিতে হবে।
৩/৪ মিনিট ফুটিয়ে কাঁচালঙ্কা দিয়ে ঢাকা দিলেই রান্না শেষ।
কলকাতার ঠাকুরবাড়িতে এখনও সযত্নে রক্ষিত আছে মৃণালিনী দেবীর পাকঘর।
সেখানে রয়েছে তার ব্যবহৃত একটি উনুন আর
বেশ কিছু চিনামাটির বাসন।
কবি কাঁচা আম খেতে ভালবাসতেন। আচারও খেতেন। কাদম্বরী দেবী কবিকে লুকিয়ে কাঁচা আম এনে দিতেন। আমের নানা পদ খেতে তিনি ভালবাসতেন। শুকনো কাঁচা আম বেশী পছন্দ করতেন।
কবি কাঁচা আম খেতে ভালবাসতেন। আচারও খেতেন। কাদম্বরী দেবী কবিকে লুকিয়ে কাঁচা আম এনে দিতেন। আমের নানা পদ খেতে তিনি ভালবাসতেন। শুকনো কাঁচা আম বেশী পছন্দ করতেন।
শুকনো কাঁচা আম প্রণালী-
কচি আমের খোলা ছাড়িয়ে সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। তাতে নুন, কাঁচা লঙ্কা, অল্প সরষে বাটা ও সরষের তেল মাখিয়ে রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তুলে একটা কাচের বয়ামে রাখলে
ভালো। এছাড়া আমের আচার
আছেই। ছোটবেলা থেকেই
কাদম্বরী দেবী অনেক রকমের কবিগুরুর বায়না মেটাতেন। শোনা যায় এক সময় কাদম্বরী দেবীর হাতে রান্না
ছাড়া অন্য কারোর হাতে রান্না খেতেন না। একই পদ রোজ তিনি খেতেন না। রকমারি
উপায়ে রান্না করে খাওয়াতে হত তাঁকে।
এখানেই শেষ নয়, কবিগুরু পানের ভক্ত ছিলেন। পানের সাথে সাযুয্য রেখে পানমশলা ব্যবহৃত হত। খাওয়ার পরে সুন্দর একখানি পান খেতে পছন্দ করতেন রবিঠাকুর। তাঁর নাতজামাই কৃষ্ণ কৃপালিনী তাঁকে একটি সুদৃশ্য পানদানি বা ডাবর উপহার দিয়েছিলেন, যা আজও ঠাকুরবাড়িতে রক্ষিত আছে।
ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বেশি করে মিষ্টি দেওয়ার প্রচলন
ছিল। গরম মশলা, লবঙ্গ, দারুচিনি
বেশি পরিমানে ব্যবহৃত হত। রান্নার তালিকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ পদ থাকত। আর তাতে অবশ্যই
থাকত শুক্তো আর দইমাছ নিয়মিত।
বিভিন্ন ধরনের মাছ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রান্নার প্রচলন ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন