শেষ বিকেলের হাতছানি...
(১)
বাহির ডাকছে।
বুলেট গতিতে দুপুরের চিবুক বেয়ে নামছে নিকেল করা বিকেল।
একদল ছেলেমেয়ে ধুলাবালি মেখে খেলায় মত্ত। দুনিয়ায় যে কত রঙের খেলা আছে! নিজের ভেতর গুটিয়ে যাওয়াও এক প্রকার খেলা। বালিকা, অতো নির্দয় হয়ো না। নেমে
যাও অথবা সিঁড়ি ধরে আকাশপানে। জেনে রাখ, জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যবর্তী স্থান দোযখের চেয়েও ভয়ঙ্কর। ঐ স্থানে বেশিক্ষণ
আটকে থাকতে নেই। শেকড় গজালেই বিপদ।
এমন মল্লিকা দিনে, গৃহে অবস্থান করা
নিতান্ত পাপ। বাহিরপানে না তাকালে
কী করে বুঝবে, বেঁচে আছ।
চল, আজ না হয় সীমানা ছাড়াই। একে অপরকে অতিক্রম করি। সমর্পণ করি, অতীতের যত উপেক্ষা, উপহাস এবং রক্তপাত। ভেসে যাই। অন্ধকার পৃথিবীতে ভেসে
যাওয়া সুন্দর।
মাতালেরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সম্পদশালী। তাদের সমাজ নেই। রাষ্ট্র নেই।
অপরকে নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরাও ঐ পথে পা ফেলতে পারি। এক আধ বিকেলে প্রকৃতির
আহ্লাদ দেখতে ক্ষতি কী! ভোরের সৌন্দর্যের চেয়ে শেষবেলার রোদ্দুর বেশি সর্বনাশে। যারা ঘাসবনে ঘুমোয়
তারাও হাসে। কদাচিৎ মৃত নদী ডেকে বলে, জল
চাই।
দেখ, বালিকা দেখ, চোখ মেলে, ঐ জলরঙা শাড়ি পরা কিশোরী মেয়ে। ভেসে যায়। নেচে যায়। বাধা-বিপত্তি মানে না। কেউ বলেনি বুঝি, চলার নাম জীবন। ওভাবে
থামতে নেই। খড়কুটোর বাহু আঁকড়ে ধরে হলেও দাঁড়াতে হয়। এই ক্ষুদ্র জীবনে অতোটা ভার নিয়ে চারদেয়ালে বন্দী
থাকা কোন কাজের কথা নয়। ঐ দেখ, দুটি
টুনটুনি। ওড়ে। এদিক-সেদিক চায়। ছোটে। গণ্ডি পার হয়।
হাত ধর। প্রথমে এক পা। তারপর
দু’পা।
এখনো বিকেল দাড়িয়ে আছে। ধূসর খেলার মাঠ। আফ্রিকান হাতছানি। কোমল বাতাস। ওড়াতে চায়। ওই ওড়না উড়ছে।
যেন মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত গণিকারা। বালিকা, থেমে যেও না। পাহাড়ের
ওপর দাঁড়িয়ে দেখ, এতখানি বেলা কেবলি অপচয়। হরিণ মাংসের লোভে
যারা শরীরবিদ্যা শিখেছিল তারা পালিয়ে গেছে।
জাগো। মনসমুদ্র দোলা দিলে এক্টুখানি জল মাখতে হয় আঙুলে।
(২)
অত রাতে, তৃষ্ণার খনি থেকে কে জল তোলে? কে হাসে গোপনে? এই স্তব্ধ উচাটনের ভেতর
কে নামায় কাঠের সিঁড়ি? কে
মাপতে চায় ভাটার জল? জীবনের চেয়ে শৃঙ্খলার মূল্য অনেক বেশি।
উৎসবের দেখা মেলে না। যাও বা দেখা মেলে, তাতে মাত্রাতিরিক্ত
সন্দেহবীজ। একদিন ভালোবাসা খেয়েছে, এখন সন্দেহ পোড়ায় অধিক
পরিমাণে।
(৩)
তুমি এলে। জানলাম, জল নেই আগুন আছে। ভারি নিঃশব্দে জেগে ওঠা প্রণয়ের
বকুল ফুল আবার কোন নাশকতার গল্প শোনায়! চল, ফিরে যাই। যেখান থেকে
শুরু করেছি ঠিক সেখানে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়াই মানবজন্মের। তারপর সযতনে মুছে ফেলি যত অনুরাগ। এই নষ্ট সমাজে শত শত শান্তীকামী মানুষের লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়। তাদের শোকসভায় আমার কিছু বলার থাকে। কিন্তু শূন্যতার চেয়ে ভারী এক
বিকেলের তাপে আমি মরতে বসেছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন