সুস্থ থাকা খুব জরুরী
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে ব্যস্ততা শব্দটা
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ
সবাই ছুটছি আমরা। ভোরের আলো ফুটতেই চায়ের দোকান থেকে বাড়ি সর্বত্র তোড়জোড় লেগে যায় দিনের আগমনীতে। একটি শিশুর ঢুলুঢুলু চোখে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে শুরু
হয় দিন। তারপর নিজের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে
চলে যায় স্কুলে। স্কুল বর্তমানে শিশুদের কাছে সংরক্ষণাগারের মত। সেখানে না হয় মানসিক বিকাশ উল্টে শারীরিক ব্যধির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। শিশুদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠ নেই মাতৃস্নেহ। মা, শিশু সবাই ছুটে চলেছে ব্যস্ততার মধ্যে। আর এই ব্যস্ততার থেকে তৈরী হচ্ছে হতাশা। আমাদের চাওয়া ও
পাওয়ার মধ্যে এত ফারাক থেকে যাচ্ছে যার থেকে তৈরী হয় টেনশন। টেনশন
বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এখন। টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন
ব্যাপার আজকাল। এই টেনশান হতাশার একটা মাধ্যম বলা
যেতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে।
নিউ ইয়র্কের রচেস্টার মেডিকল সেন্টারের ‘সেন্টার ফর মাইন্ড-বিডি রিসার্চ’ এর মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা
ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলেও সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।” স্লিম ফিগার করতে গিয়ে আমরা সুষম খাদ্যর দিকে ফিরেও তাকাই না । শরীর ঠিক না থাকলে
তার প্রভাব মনের উপর পড়ে। শরীরের যত্ন নিলেও
মনের যত্ন আমরা নিই না। অবসাদ বা হতাশা
কাটাতে কতগুলি পন্থা আমরা নিতেই পারি –
১) মেডিটেশন
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা
গেছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর
করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা
সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে
দেয়।” তাই বর্তমানে এই ইয়োগা করে অনেক মানুষ
সুস্থ জীবন ফিরে পাচ্ছে।
২) দিনে অন্তত ৬ - ৮ ঘন্টা ঘুম
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার
প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে
সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে (sound sleep)
ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ন। ঘুমানোর আগে সমস্ত ভাবনা চিন্তা দূরে
রাখা জরুরী ৷ ‘ঘুম’ থেকে ভালো Stress Looser আর কিছু হতে পারে
না। তাই যখন কোনোও কিছুই আর ভালো লাগবে না বা মনে হবে কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছেন
না, তখন একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে পাওয়ার ন্যাপ নেওয়া যেতে পারে। দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। এ কথা যেমন সত্যি যে, টেনশন মানুষের জীবনে
স্বচ্ছন্দ গতি এবং স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটায়, তেমনি এ কথাও
অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, জীবনে কিছু পরিমাণ
টেনশন থাকা প্রয়োজন। কেননা, এই টেনশন জীবনের কাজ
করার পেছনে উৎসাহ জোগায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কাজ করার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
৩) ডায়েরি
লেখা
ডায়েরি লিখলে মানসিক চাপ অনেক কমে
যায়। যে বিষয়টি কষ্ট দেয়, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি
ডায়রিতে লিখে রাখা জরুরী। পাশাপাশি আপনি
কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখে রাখা যায়। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ
কমাতে অনেকটা সাহায্য করে।
৪) প্রাণ
খুলে হাসা
২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার
বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক
কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা
এই সিদ্ধান্তে আসেন।
নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে
দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের
সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক
চিলতে হাসি র কিংবা মন খুলে হাসলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে
যায়।
মানসিক চাপ কমালে আমাদের গড় আয়ু অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের সবারই
জীবনকে মনের মত করে সাজিয়ে রাখা উচিত। মানসিক চাপ কমাতে
অনেকে অ্যালকোহলের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কিন্তু এই অ্যালকোহলের প্রভাবে শরীরে মধুমেহ, লিভার সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং এর আশ্রয়
না নেওয়াই ভালো।
(ক্রমশ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন