রঙ্গমঞ্চ
পরপর
কতগুলো নাটক হিট হয়ে যাওয়াতে কিঙ্কিনি আজকাল বেশ নাম করে ফেলেছে। তা অভিনয়টা সে
করে ভাল। কিঙ্কিনিকে দেখতেও বেশ, বিশেষ করে চোখ দুটো। তাই দেখছিল সে গ্রীনরুমের বড়
আয়নাটার সামনে বসে। “এই, বলেছি না কাজলটা আর একটু গাঢ় করে দিবি...”
মেক-আপ-এর
মেয়ে পিঙ্কি কাজল-পেনসিলটা নিয়ে মনে মনে একটু হাসল। দিদি আজকাল একটু বেশি সেজে
স্টেজে নামছে। যে ছেলেটা নায়কের পার্ট করছে সেই অভ্রকুমারের সঙ্গে দিদির...
কিঙ্কিনিও
তাই ভাবছিল। কী যে হল কোথা থেকে, অভ্রকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছে সে। আজকাল মনেই হয় না
যে অভিনয় করছে – মনের ভেতর থেকে কথা, ভাব সব উঠে আসে আপনা থেকে। একটা দৃশ্য আছে
যেখানে আবছা অন্ধকারে অভ্র এসে হাত ধরে বলবে – কত জন্ম ধরে যে তোমার জন্য অপেক্ষা
করে আছি... আর তারপর আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরবে। অভ্র আজকাল একটু বেশি জোরে জড়িয়ে ধরছে, কিঙ্কিনি বুঝে গেছে তার ভালবাসা একতরফা
নয়। শনি, রবি আর বৃহষ্পতিবারে শো – পরের শো-এর জন্যে সে মনে মনে ছটফট করে। মাঝেমাঝে অদ্ভুত লাগে কিঙ্কিনির। মঞ্চে
অভ্রর সঙ্গে তাকে আর অভিনয় করতে হয় না, জীবনের সত্যিটাই যেন উঠে এসেছে মঞ্চে।
শো-এর
শেষে মেক-আপ তুলে বাড়ি ফিরতে সাড়ে বারোটা বাজল। গাড়ি থেকে নামতেই ওপর থেকে সাড়া এল – নিচের দরজা খোলা আছে।
প্রশান্ত, মানে তার বিয়ে করা বর এত রাতেও নিশাচর পাখির মত জেগে আছে। মানুষটার সব
দিকে খেয়াল। অভ্রর সঙ্গে যে খেলা সুরু হয়েছে, তার শেষ কোথায় কিঙ্কিনি জানে না। শেষ যেখানেই হোক তা হতে এখনো দেরি আছে। ব্যাগের
ভেতরের ভাঁজে লাগানো আয়নায় মুখটা দেখে নিল কিঙ্কিনি – পাউডার একটু মুছে ফেলল।
মুখেচোখে ক্লান্ত ভাব একটা রাখতে হবে। পরের শো আসা পর্যন্ত তাকে তার নিজের ঘরে
টানা অভিনয় চালিয়ে যেতে হবে, যেন কিছুই হয়নি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন