রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

অভিজিৎ মিত্র




রবিবার


অফিসপাড়ার ঠিক বাইরে। শহর থেকে একটু দূরে, শহরে ঢোকার মেন রাস্তায়। পরপর সাতখানা সাইনবোর্ড, প্রতিটা ঠিক ১০০ মিটার দূরত্বেপ্রত্যেকটার ওপরে একটাই শব্দ, ‘রবিবার’যাতায়াতের পথে সবাই একে একে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে।  কেউ কফি হাতে গল্পচ্ছলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। গাড়ি থামিয়ে কেউ ছবি তুলছে। হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক ভরে উঠছে কমেন্টে। 

কেউ জানে না ওগুলো আমাদের। আমরা, মানে আমরা সাত ভাই, রবিবার। আমাদের প্রত্যেকের নাম। বাপ-মায়ের দেওয়া নাম। আসলে কেউ জানেই না আমরা সাতজন। চোখ তুলে কেউ কোনদিন আমাদের দিকে তাকায় নি, জিজ্ঞেস করে নি – তোমার নাম কি? কোন স্কুলে পড়? তোমার আর তোমার ভায়ের নাম এক কেন? আমরা সমাজের একটা কোণে ধূলোর মত পড়ে, আজো। ছোটলোকের বাচ্চার নামে কিই বা আসে যায়? তাই হয়তো বাবা-মা একটাই নাম রেখেছে আমাদের সবার, সাতটা আলাদা নাম বাহুল্য হতে পারে ভেবে।

কিন্তু আজ নয়। আজ সবাই সাতটা আলাদা রবিবার কেন, কী কারণে, জানতে  চাইছে। নিউজ চ্যানেল, নিউজ পেপার, পুলিশ, মেয়র, ডিএম, আদালত, দমকল এমনকি আবহাওয়া দপ্তর অব্ধি খবর পৌঁছেছে। সাইনবোর্ড অফিসে ঘনঘন ফোন যাচ্ছে। কেউ এটাকে জেহাদ হিসেবে দেখছে, কেউ ঝড়ের পূর্বাভাষ। সবাই এটা অন্তত বুঝেছে, এগুলো কোন সাধারণ সাইনবোর্ড নয়।
‘সত্যিটা আমাদের দেখতেই হবে। চোখ হবার পর আমরা আলো থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি কি?’ কোন এক নিউজ চ্যানেল রিপোর্ট করল। এক নিউজ পেপারের প্রথম পাতায় – ‘মানুষ এই পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যার ডিএনএ-র প্রতি কণায় লেখা আছে অবিশ্বাস আর সন্দেহ। সে যে কোন মূল্যে অন্যের ক্ষতি করেও নিজের সাফল্য চায়। তাই আজ আমাদের সামনে পরপর সাত রবিবার।’ মেয়র অফিস থেকে জানানো হল, অনিচ্ছাকৃত ভুল, ঐ সাতখানা সাইনবোর্ড খুব শিগগির সরিয়ে ফেলা হবে।

সেই থেকে শুধু আমরা সাতজন রবিবার, রোজ দু’বেলা, সোমবার থেকে রবিবার,  একসঙ্গে বসে গ্লাসে গ্লাসে ছলকে উঠছি। চিয়ার্স শানাচ্ছি। কেউ জানে না আমরা কী  বা কারা। রোজ টস করার চেষ্টা করছি কবে আমরা সবার সামনে আসব, কবে বলব ওগুলো কী! এখনো পারি নি। আমাদের চোদ্দটা হাত, মদের ঘোরে, এমনভাবে  জুড়ে গেছে যে, এখনো কয়েনটা রবিবারের ওপরেই পড়ে আছে।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন