লিটিল ম্যাগাজিনের একাল সেকাল
লিটল ম্যাগাজিনের
আলোচনা আসলেই বাংলাভাষার অন্যতম খ্যাতিমান লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু’র নামটিও
অবিচ্ছেদ্যভাবেই চলে আসে। লিটল ম্যাগাজিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কী হবে এ ব্যাপারে
তাঁর ব্যাখ্যাকেই সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে
বিবেচনা করা হয়। ‘দেশ’ পত্রিকর
১৯৫৩ সালের মে মাসের সংখ্যায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব
বসু লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লেখেন- “এক রকমের পত্রিকা আছে যা আমরা
রেলগাড়িতে সময় কাটাবার জন্য কিনি, আর গন্তব্য স্টেশনে নামার সময় ইচ্ছে করে গাড়িতে ফেলে যাই - যদি না কোনো সতর্ক সহযাত্রী সেটি আবার
আমাদের হাতে তুলে দিয়ে বাধিত এবং বিব্রত করেন। আর এক রকমের পত্রিকা আছে যা স্টেশনে
পাওয়া যায় না, ফুটপাতে কিনতে হলেও
বিস্তর ঘুরতে হয়, কিন্তু যা একবার হাতে এলে আমরা চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখি না, চেয়ে চেয়ে আস্তে আস্তে পড়ি, আর পড়া হয়ে গেলে গরম কাপড়ের ভাঁজের
মধ্যে ন্যাপথলিন-গন্ধী তোরঙ্গে তুলে রাখি - জল, পোকা আর অপহারকের আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য।
যেসব পত্রিকা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত হতে চায় - কৃতিত্ব যেটুকুই হোক, অন্ততপক্ষে নজরটা যাদের উঁচুর দিকে, তাদের জন্য নতুন একটা নাম বেরিয়েছে
মার্কিন দেশে; চলতি কালের ইংরেজি
বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিন।”
সম্প্রতি লিটিল ম্যাগাজিন ২০০ বছর হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে
মানুষের মধ্যে পড়ার আগ্রহ। লিটিল ম্যাগাজিন
এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে মানুষ ইচ্ছা
করলে একে সংগ্রহ করতে পারবে কিন্তু খুব সহজে একে পাবে না।
লিটিল ম্যাগাজিন যেহেতু বাণিজ্যিক ধারার বিপরীতে কাজ করে, সেহেতু
পেশাদারিত্ব নেই, কিন্তু সে যেতে চায় পাঠকের
কাছে। পাঠককে দিকদর্শিত করতে চায়, দাসত্ব করতে চায় না। মূলত স্টলের মধ্য
দিয়ে, মেলার মধ্য দিয়ে লিটিল ম্যাগাজিনের
বিস্তার হয়েছে বৃহত্তর ভাবে। তবে একথা ঠিক যে
লিটিল ম্যাগাজিন কাকে বলে তার কোন ধারণা ছিল না মানুষের কাছে। যে কোন সাহিত্যপত্র
মানেই লিটিল ম্যাগাজিন মনে করতেন অনেকে। তা যে নয় তা এখন
মানুষ বুঝতে শিখেছে। লিটিল ম্যাগাজিনের
পাঠক খুব সীমিত।
বর্তমানে অনেক লিটিল ম্যাগাজিন প্রকাশনার জগতে এসেছে। লিটিল ম্যাগাজিন
নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে কলকাতা
লিটিল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী ও গবেষণা কেন্দ্র। কলকাতা লিটিল
ম্যাগাজিন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ দত্ত। ১৯৭৮ সালে ২৩ জুন
লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা হয়। তাঁর ডায়েরীর
পাতায় ‘To do Something constructive’ লিখে লাইব্রেরী সূচনা হয়। সেই থেকে তার পথ চলা শুরু, আজ ও থামেনি কিংবা থামবেও না কোনদিন। লাইব্রেরী এখন
বইয়ের সংখ্যা ৮০,০০০ বেশী। সাময়িকপত্রে ২০০
বছর উপলক্ষ্যে লাইব্রেরী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। লিটিল ম্যাগাজিন পুরস্কার লিটিল ম্যাগাজিনকে
একটা মাত্রা দিয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে এই পুরস্কার চালু হয়।
২০০৬ সাল পর্যন্ত একটি পত্রিকা এই
পুরস্কার পেত। ২০০৭ সাল থেকে বছরে দু'টি পত্রিকাকে এই
পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তাই বর্তমান সময়কে লিটিল ম্যাগাজিনের যুগ বলা চলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন