সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

উমা মন্ডল




বুড়িগঙ্গা, একটি মাতৃ উপাখ্যান


(১)

বুড়িগঙ্গা মৃতগর্ভ এখন, শুকিয়ে গেছে ত্বক
বলিরেখা বেয়ে ঝুরি নেমে আসে
 
শিকড়ের হাত ধরে ধরে বিষাদ... প্রাচীর টপকাতে পারেনি ।

‘নিধুবনে আজ বাঁশি নেই
  
গোয়ালিনী দুধ দুয়ে যায়,
যমুনার চোখ কাঁদে সই
কালো মেঘে তাপ গিলে খায়’...

পড়ে থাকে ননী ভোর; দরজায় জল ঢালা
চৈতন্য ধারায় স্নান করে...
নিমের ছায়ায় শান্তি, রোদ দুই
ভয় পায়
অমৃতের ভান্ড কাপড়ে বেঁধেছে সদাগরী নৌকা
 
সে নৌকায় বিনতার আলতার ছাপ, ফণায় শুধুই বিষ
নদী জানে দাঁড়ে দাঁড়ে যমদূত বাসা বেঁধে আছে
 


(২)

কবেকার কথা, রানী নৌকা পাড়ে বাঁধা পড়ে আছে
হাতে থালা ফুল ফল, ঠাকুরের থানে পেন্নামের হুজুক লেগেছে, দলে দলে হাজির মানুষ
 
দু'মুঠোয় দান, দাত্রী রাসমণি... হাত ভরে যায়
 

পাথরের মূর্তি, কালী কথা, পাঁচালী অক্ষর
মিথ্যা ছিল না শ্লোকের তথ্য ....
শুধু পুরাণকে দোষে পাষন্ডের দল ।
হাঁড়িকাট দেখেছিল কিভাবে মনুষ্য বোধ অর্ঘ্য তুলে দেয় দেবতার পায়ে
  
সেইকালে কুরুক্ষেত্র ছিল না কোলকাতায়
রথরূপী নৌকা ঠিক হেঁটে যায় জলের ঠিকানা
খুঁজে খুঁজে ।


(৩)

চৈত্রের দুপুরে শ্মশানের মাটি ছুঁয়ে যায় ঢেউ
বুকের তৃষ্ণায় দুধ ঢেলে দেয় মাতৃরস

একটু একটু করে গড়ে তোলা খড় বাঁশ মাটি
কাঠামোয় জেগে ওঠে শিশু ইতিহাস, তারপর
লালন-পালনে বেলা যায়; ভৈরবের কাল আসে
 
বাহক পালকি তোলে, আচমন করে নেয় নত
মস্তক, মা'গো আবার এসো তাড়াতাড়ি...

বিচ্ছেদের জল চোখে, কাঠামোয় ভারি হয়ে আসে
তাল তাল মাটি; শুধু ধুয়ে যাওয়া আলেখ্যের শব্দ
বুকে টেনে নেয় নদী-রূপী মাতৃকোল
কাব্য লেখে জাতিস্মরের কলম নদীর অতলে...


(৪)

হাতে পেন, খাতার ওপর আঁকিবুকি অঙ্ক কষে গবেষণা গৃহের রসায়নের আগামীটি
জানালার পাশে শীর্ণকায়া বুড়িগঙ্গা
 
সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসে পাতার ওপর

বৌ-ঠাকুরানীর বজরার পাখিটি ডাক দেয়
 
গাণিতিক পরিখার শেষ ছকে দাঁড়িয়ে নির্বাণ,

কলিঙ্গ যুদ্ধের শেষ
 
শুধু রক্ত... ঢেউ নেই, সৃষ্টি নেই; ক্ষয়ে যাওয়া কোষ জল চায়
জীবন তুলে দেয় প্রার্থিত মোক্ষের জবাকুসুম

সম্রাটের পোশাক চাই না
 
আসুক বৈরাগী অন্তরীক্ষের আজান

ঋষি কবির বৌ-ঠাকুরানিহাটে নৌকা অপেক্ষায়
 
পদাতিক উঠে এসো...

                                        



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন