রাখাল রাজা
জয়লাল রোজ একবার করে দেখতে আসে যুগল মূর্তিটাকে। একজন নিগার বংশীবাদক তাঁকে ছুঁয়ে এক শ্বেতাঙ্গিনী। জয়লাল এই পিতৃপুরুষের মূর্তিটিকে রাধাকিষণ বলে মানে। জয়লাল একজন বংশীবাদক। নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়। আর সেটা তো এই স্থানমাহাত্ম্যে সম্ভব হয়েছে। কে বলে একলব্যরা হারিয়ে গিয়েছে! তখনো এই মূর্তি এবং ঐ তীব্র জেদী ঘোড়াটার উন্মত্ত রূপটি ভাস্করের হাতে গড়ে ওঠে নি। ছোটো থেকেই জয়লাল এই পাহাড়ের নির্জনতায় বসে বাঁশি বাজাতো। রক্তে বাঁশির সুর তো ঐ গোষ্ঠ ফ্রান্সিসের। স্থানীয় ভাস্কর ব্রজমোহন ওনাদেরকে জীবন্ত করে তুলেছে নিজের হাতে।
খাদের পাড়ে বসে এই শিল্পী দুজন দিনের পর দিন আলোচনা করেছে আত্মহননেচ্ছু মালকিন আর তার ঘোড়ার মানসিক অবস্থাটি কীরকম ছিল। মালকিন ম্যাগনোলিয়ার যাবতীয় ক্রোধ ঘোড়াটাকেই বহন করতে হবে। ছুঁড়ে দিতে হবে আমীরলোগের প্রতি ঘৃণা। ঘোড়াটার নাম হেনরি। এই ভাবনাতে ওরা হা হা করে হাসত। সে হাসির প্রতিধ্বনি পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে পড়ত। হেনরিও কি জানতো কবি শিল্পীরা আসলে ঘোড়া মুখো হয়েই জন্মায়! সেইই তো সাক্ষী ছিল ওদের প্রেমের। ম্যাগনোলিয়ার কাঁটা ফুটে যাওয়া আঙুলের রক্ত গোষ্ঠ ফ্রান্সিস চুষে নিচ্ছে। ফ্রান্সিসকে চকোলেট কেক চিজ খাইয়ে দিচ্ছে মিস ম্যাগনোলিয়া। পাইন অরণ্যে গাছের গায়ে হেলান দেওয়া চুম্বন আর চুম্বন মানুষ মানুষীর। সূর্যাস্তের অস্তরাগে সূর্যোদয়ের সোনালী রঙে হৃদয় গভীর হয় তাদের।
তাহলে হেনরি শুনতে পেয়েছিল বাতাসে সেদিন পাইনের শনশন আওয়াজে মিশছে চাবুকের শনশনানি আর কাঁটা বুটের দাপট। তার মনে পড়ছে মালকিন শুধু নয় গোষ্ঠও তাকে আদর করত। গোষ্ঠ ধরম পাল্টিয়ে ফ্রান্সিস হলেও একজন ইংরেজ রাজপুরুষের জামাই হবে কী করে! স্বাধীনতার অপব্যবহার অফিসার সহ্য করতে পারেন নি। পাকড়াও করো ফ্রান্সিসকে। ওর পিঠে চাবুক পড়া দরকার। ম্যাগনোলিয়ার সতর্কতায় ফ্রান্সিস আগেই পালিয়েছিল। কথা ছিল অফিসারের রাগ পড়লে আবার ফিরবে। কিন্তু ম্যাগনোলিয়াকে দিল্লি নিয়ে যাবার তোড়জোর শুরু হল। প্রকৃতির নিজস্ব এই কুঁড়েঘর ছেড়ে সে যাবে না। প্রচন্ড দ্বন্দ্ব বাঁধল বাপ আর মেয়েতে। যে দিন যাবার কথা তার আগের দিনে সে তার পোষ্যকে তীব্রগতিতে ছুটিয়ে ঐ সূর্যাস্ত নামা খাদে লাফিয়ে পড়েছিল। সেই অজানা অতলে। অনেক দূরে কোনো নদীর ঝোপে নেকড়ের দল হঠাৎ হাউ হাউ করে ডেকে ওঠে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন