জীবন–কথা
(১)
‘পাশে এসে বসো’ বলতেই
মুখ ভেটকে বলল,
‘সরাসরি দেখতে মুখোমুখি বসাই ভালো’
তার শান্ত চোখ আর উদভ্রান্ত চুল
মনে হল বুঝি প্রেমে পড়েছে
মাত্র একবার কী বড়জোর দু'বার
কর্কশ আঙুল বুলিয়ে
কপালে টেনে দিল তিনখানি কাঁটাতার
বলল,
‘যাও, আজ থেকে তুমি আমার হলে’
আমিও গদগদ, হাত বাড়াতেই
ঝট করে সরে গিয়ে বলল,
‘আগে সমর্থ হও’
(২)
তৃতীয়বার দেখা
চেনাশুনো এক প্রসূতি সদনে
দেখি তীরের ফলা নিয়ে
দৌড়ে আসছে
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর চোখ থেকে
ভয় তাড়াতে বললাম,
‘এ শিশু আমার
তুমি চলে যাও এখান থেকে’
ঘোলাটে মুখে তার ঈষৎ করুণা
তীরের ফলায় কপাল সেলাই
করতে করতে বলল,
‘এসো, আজ থেকে এক হই’
(৩)
একবার দেখলাম জানাজা কাঁধে
সর্বাঙ্গ সাদা পোশাকে ঢাকা
মাথা নত
বৃষ্টিতে আমাকে রাস্তায় দেখে বলল,
‘দাঁড়িয়ে থাকো’
বলেই চলে গেল
জানাজা কাঁধে
সাদা পোশাক
মাথা নত
মনে মনে বললাম,
‘শালা’
(৪)
‘কী ভাবো নিজেকে তুমি?’
চোখের আগুন দেখতে দেখতে বলল,
‘ঠিক তুমি আমাকে যা ভাবো’
বোঝা নামাতে গিয়ে দেখি
মিচকি মিচকি হাসছে
তারপর হঠাৎ গলা ছেড়ে গেয়ে উঠল,
‘রাগ যে তোমার...’
(৫)
মাছ কিনতে গেছি
দেখি হরিচাচার দোকানে
মাছ ওজন করছে
আড়াইশো মৌরলা
ওজন করতে করতে বলল,
‘এই হল তোমার ওজন
সামান্য বেশিও না কমও না’
দাম নিতে নিতে বলছে শুনি,
‘সাবধানে বাড়ি যেও’
(৫)
রান্না করছি মাংস
ইচ্ছে কষে রান্না করে অতিথিকে
খুশি করে দেওয়ার
কোথা থেকে নাক টানতে টানতে এসে
সোজা কড়াইতে উঁকি দিয়ে বলে,
‘এত তেল দাও কেন?’
‘তাতে তোমার কী?’
বলতে গিয়ে দেখি নিয়ে বসেছে একবাটি
ওই তেলফেল সুদ্ধই
চাখতে চাখতে বলল,
‘বেশি তেল দিলে অবশ্য সুখ্যাতি বেশি হয়’
(৬)
খুব ভোর
বাইরে অন্ধকার, বৃষ্টি হচ্ছে
বর্ষাতি গায়ে, পায়ে গামবুট
মাথায় ছাতা
দেখি কোথায় যেন যাচ্ছে
জিজ্ঞাসা করলাম,
‘যাচ্ছ কোথায়?’
উত্তর দিল,
‘চলে যাচ্ছি
আর জ্বালাব না’
সেই থেকে সেখানেই
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জ্বলছি
যদি ফেরে
দীর্ঘ দেহ, বর্ষাতি গায়ে
পায়ে গামবুট, ছাতা মাথায়...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন