বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

অরুণিমা চৌধুরী



দিনকাল 


কতকাল কিছুই লিখি না নিশানাথ!
মনে পড়ে কালি কলম, জলের মতো ধারাবাক্য

কী যেন নেই হয়ে গেছে... ভাল্লাগে না আর

আজকাল ব্যস্ত থাকি তেলমাখানো লাঠিতে বাঁদরের তৎপরতার মতো

আমাকে  পিছনে ফেলে সময় এগিয়ে যায়
হঠাৎ পিছু ফিরে  দেখি
সে তিমিরেই দাঁড়িয়ে রয়েছি

নিজেকে না দেখলে কী লিখব নিশানাথ!
আমার উচ্চকিত স্বর আমার ভাগ্য আমার অসুখ বৈচিত্র্যহীন  দিনলিপি...
আমি আমি... আমি ছাড়া যেন আর
কোত্থাও কিছুটি নেই

এই শোকগ্রস্ত মলিনতা ধোঁয়াটে কপাল,
সাদা হয়ে আসা রগের চারপাশ
আর একপো পথ হাঁটলেই পৌঁছে যাব কোনো একটা জায়গায়, কোথায় কে জানে!
তবু দ্যাখো একটা পুরনো
কবরখানার চারপাশে গা ঝাড়া দিতে দিতে
হেঁটে চলেছি

নৈ:শব্দ  একটা আড়াল, সমস্ত রাস্তা কোলাহলের দিক থেকে বেঁকে যায়...
আমি সেই চিরবিস্মিত ন্যাকা, বয়েস পেরিয়ে গিয়েও কিছু একটা নতুন ঘটার অপেক্ষায় থাকি,
অথচ হাতভর্তি তেপায়া শূন্য
সেটাই আঁকড়ে ধরে নিজের কাছে নিজে
আরো বেশি অপরিচিত হয়ে উঠি

কতদিন কিছুই লিখিনি, কবিতা ঈশ্বরের মতো, তেল না দিলে পাত্তাও দেয় না

আড়াই পা হেঁটে নিজেকে বলেছি আপদে বিপদে নিজের হাতে হাত রাখাই বাঞ্ছনীয়!

এতদিনেও যদি না বুঝি  নিশানাথ, কেনই বা কবিতার দিকে পিছন ফিরেছি!


জন্মদিন 


অনর্থক  ভয় কাজ করে
আর কতদিন হাবিজাবি জীবন
ফাঁকি দেবে মৃতের চোখ!

অসুখ আনন্দভুক
কে জানে কী তার ফন্দী!
সারাদিন পায়ে পায়ে এঁটো বিড়ালের মতো ঘোরে
 
এভাবে শুভেচ্ছাগুলো বাঁচাতে পারবে না আর
একথা ভাবলেই
লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে জন্মদিন

কী জানি কত ঋণ পূর্ণ হয়ে গেলো...

জন্মমাস এলে মনে পড়ে এক একটা বছর গাভীর চোখের মতো ঘন
এক একটা আয়ু ক্ষুদ্র পরিসর, শুধু আমিই কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি...

নিশানাথ! বয়েস হয়ে এলো, সংখ্যাগুলো বাড়তে বাড়তে কতটা আতঙ্কবাদী,  কীভাবে বোঝাব বলো তো!


চুপ  


কীভাবে আগুন হয়, কিসে বিষ থাকে!
একফুঁয়ে মোম নিভে গেলে পরিচিত অন্ধকার
স্বস্তি দেয় বেশ
এই ছাড়াছাড়া ঢেউ
ধুলো ওড়াউড়ি ভোর
আরেকটু তফাতে থমকে থাকা বিপদ সঙ্কেত...
এসবই প্রাপ্য ছিল

কে জানে জন্মটা জরুরি ছিল কি ছিল না

সে আমাকে যতটা মেরেছে, সেভাবে মারেনি ঈশ্বরও

সময় নেই শব্দ নেই এরচেয়ে মৃত্যু বড়!
কী যেন নেই বা ছিল না বলে
উৎসব ফিকে হয়ে গেছে

এই দ্যাখো সকালে উঠেই আমি মরে গেছি
এ মৃত্যু নিয়ত

চুপ করো, জন্মদিন বোলো না আমাকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন