রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

তমাল রায়




অমিত্রাক্ষর


গাছটার নাম অমিত্রাক্ষর সে বলেছিল বহুদিনের শখ ছিলো, চলন্ত ট্রেনে কারও কাঁধে মাথা রাখবে সে অবশ্য জানতো, পৃথিবী বামনের সাম্রাজ্য!

সে রেখেওছিলো মাথা, আর কাঁধ কী করেই যেন হয়ে গেছিল দেওয়াল দেওয়াল  প্রথমে দুলতে শুরু করেছিলো, পরে সে চলতে শুরু করেছিল, কেন কে জানে!

সেটা মার্চ মাস হলুদ, লাল, নীল কত রঙ! তারপর চিঠিও এসেছিলো, সেই তখনও চিঠি আসতো নীল সমুদ্ররঙা চিঠি ঢেউএর মত অক্ষরমালা যে যায় আর ফেরে না, এ কথা ভুল বলতেই নির্মাণ হয়েছিল ডাক বাক্সের বালি রঙের ডাকবাক্স অপেক্ষাতেই কাটিয়ে দিতে পারতো একটা গোটা জীবন রাতে নক্ষত্র জন্মাতো কারণ, যারা জন্মাচ্ছে তারা জন্মানোদের সাহায্য চায় তাই, ওই এক আকাশে পতিত উল্কা থমকে গেছিলো কিয়ৎকাল! তারপর যা হয়, দর্পণ দর্পণই থাকলো, অভিভাবক অভিভাবক মধুধৈব কুটুম্বকম! অমিত্রাক্ষর!

রাত বাড়লে ক্যানাল পাড়ে জলোচ্ছাস! আর দিনে সোনাঝুরি জুড়ে টক ঝাল মিষ্টি

ট্রেনটার নাম ছিল অমিত্রাক্ষর গাছের সাথে ট্রেনের সম্পর্ক, আপেক্ষিক কেউ যায়,  স্থির আর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব মেনেই কেউ স্থির কেউ গতিশীল কাঁধটা কেবল দেওয়াল হয়ে যেত দেওয়াল অদৃশ্য হতে হতে বাষ্প ছায়ারা লম্বা হলে  পৃথিবীতে অপরাহ্ণ আসতো গাল বেয়ে নেমে আসা জল, তা আবার ফ্রিজড এসব সময়েই সারাটা রাত কোকিল ডাকে কেউ ভাস্কর হয়ে যেত, লম্বা সিগারেটের মত দীর্ঘশ্বাসে কেউ বা সন্দীপন অথবা কৃত্তিবাসের মত কেউ লিখে চলতো মহাকাব্য! মহাকাব্যে প্রেম এক গরিমামিশ্রিত ত্যাগ লীলা! বেদনা, নিয়তি নির্ধারিত পরিহাস! আর কী করে যেন আমাদের ছোট নদীর নাম হয়ে যেত অমিত্রাক্ষর কাঁধ, দেওয়াল আর চলমানতার বুকে ছুরি মেরে বিষণ্ণ বাতাসেরই মত জেগে থাকতো অক্ষরমালা, পর্যাবৃত্তে যা অনিশ্চিত কিন্তু প্রেম?

প্রতিটি ট্রেন বিপরীতমুখী ট্রেনকে ‘মিট’ করতো কোনো এক অসতর্ক জাংশনে  হকার, যাত্রী অথবা সন্দেহশীল পরীক্ষককে উপেক্ষা করেই সে চলে যেত গন্তব্যের দিকে গন্তব্যও এক আপেক্ষিকতা তবু প্রেম! পর্বান্তরে সেও অমিত্রাক্ষর!

আর উপক্রমণিকা জুড়ে কাঁধ দেওয়াল, দেওয়াল বাষ্প, কেবল ছায়া গভীর হত সাগরদাঁড়ি, কপোতাক্ষ নদীর উপর এমিলিয়া হেনরিয়েটা নামে তখন শান্ত বা অমিত্রাক্ষর সন্ধ্যা নামছে...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন