রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

অশোক তাঁতী




ডানাবিহীন


তার ডানাদুটোর খোঁজ পাচ্ছে না। ঘুমের আগে মাথার ঠিক পাশটাতে পরিপাটি করে খুলে রেখেছিল। অন্ধকার ঘরে জ্যোৎস্না ঢুকছিল না, শুধু জ্যোৎস্নার আভা। আবছায়া রক্তবর্ণ আবরণ খুলে চাঁদ এসে পড়বে কিছু পরে, এক পরিপূর্ণ গ্রহণ উৎযাপন। জোৎস্না বিছিয়ে যাবে ঘুমন্ত মুখের ওপর। রোমকূপ বেয়ে সেই স্পর্শ মিশবে রক্তে, মিশে যাবে হৃদয়ের প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে। তারপর সে জাগবে চোখের পাতায় আলোর মৃদু কম্পনে। জাগবে তার সমস্ত অস্তিত্ব। আর ডানাদুটো পরে নিয়ে নিস্তব্ধ শহরের ছায়ার ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াবে। মায়াবী জোৎস্না বয়ে যাবে শিরা ধমনী ডানা পালকে। উড়ে এসে ফুলে মোড়া সিংহাসনের সামনে ডানা মুড়ে দাঁড়াবে। ম ম করবে শিউলির গন্ধ। প্রাক বসন্তের হাওয়ার মৃদু কম্পনে সিংহাসনে বসা মুখ কাঁপবে মায়াবী তিরতির করে, সে বলবে ভালবাসি। তোকে।

চোখটা খুলল। সে দেখল চারপাশ অচেনা, স্বপ্নের ভেতর অদৃশ্য থাকা দৃশ্যাবলী। ভিড়। অযুত নিযুত শব্দ। শব্দের রাগ, ঘৃণা, রিরংসা। সিংহাসন নেই, কিলবিল করছে অতীত, মানুষ, স্বার্থ এমনকি নশ্বর কিছু কবিতা। অথচ কবিতার এমন হবার কথা ছিল না। কবিতার শব্দগুলো তার পায়ে জড়িয়ে যায়। উঠতে গিয়ে আছাড় খায়। তন্নতন্ন করে একটা ব্যথাভরা শব্দচিহ্নও খুঁজে পায় না। শব্দগুলো অতীতের মতো মানুষের গায়ে জড়িয়ে থাকে, শব্দের চারপাশে শক্ত আবরণ।

সে তীব্র খোঁজে, দুটো ডানা ! লালচাঁদ থেকে একটু একটু করে জ্যোৎস্না নামছে, দূরে কোথাও একটা অনুচ্চারিত শিউলির গন্ধ।

সে খোঁজে। চমকে ওঠে ডানার স্পর্শে। ন্যাপথলিনের গন্ধ ওঠে ভাঁজ করা কাপড়ের ডানা থেকে। ওড়ার সামর্থ নেই সে দুটোর।

বুকের দুপাশে ডানার অবস্থানে যন্ত্রণা নিম্নচাপ হয়। দুটো হাত দুপাশে ঝুলে পড়ে। 
শহরে কোথাও ছায়া নেই। হাহাকারের মতো তীব্র হয় জ্যোৎস্না।


২টি মন্তব্য: