হাতগুলো
হাত নামছে হাত উঠছে
ছুটছে হাত, ছুটতে ছুটতে ফুটছে
ফুল এবং বিস্ফোরক...
হাতগুলো কান, গান শুনছে
বুনছে স্বপ্নবীজ মগজে
বেজে ওঠে সশব্দ কম্পন
কাঁপছে অফিসপাড়া, রাজপথ, ফুটপাত, নতুন সংসার
চিৎকার – শীৎকারে জন্ম নিচ্ছে আরও
আরও অজস্র হাত
সংঘাত, প্রেম ও ঘৃণা হেঁটে যায়
সমান্তরাল রেখায়
শেখায় নতুন পাঠ, সৌহার্দ্য ও
সম্প্রীতি।
হাতগুলো চোখ, দৃষ্টি দৃশ্যবৃত্তের বাইরে
ঘাসের মাঠ থেকে ধূসর হিরোশিমা
জিরোসীমা থেকে ইনফিনিটি আকাশ-নীল ও নক্ষত্রমন্ডলী
ক’জন অণুবীক্ষণ, নভোমন্ডল থেকে
নামিয়ে আনছে অচেনা বৃক্ষের ফল,
ফেরি করছে আকাশ-হাটে প্রতি
এলিয়েনবারে;
ডোনাল্ট ট্রাম্প, দূর্গন্ধময় গোবর থেকে রবীন্দ্রনাথ
“আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে” ছুটছে
অযুত-নিযুত চোখ
ক্রল করছে গোয়েন্দাবিভাগের গোপন ঘরে,
ভাসমান অস্ত্রাগারে
পড়ছে, পুড়ছে ফাইল ও গ্রন্থ।
সন্ত সেজে বসে আছে পাঁচটি পাহাড়
আহার-নিদ্রা অন্যদের,
বন্যদের অথবা সুসভ্য চাটুকার ধুর্ত
প্রজাতির,
স্বজাতির গুহার ভেতরে নিরাপদ আশ্রয়।
মেরুপ্রান্তের জমাট বরফ খুঁড়ে খুঁড়ে
দম্ভের খনিজে হাঙরের হাঙরি চুমুক
প্রতিবাদ-গোঙানি, আত্মাহুতি সারি সারি জেয় পেঙ্গুইন
পরিবেশবাদী-চিৎকার
শীৎকারে ম্লান দাদাবাবুর হেরেমখানায়।
হাতগুলো ম্যানগ্রোভ, আঙুলেরা চিত্রাহরিণ
ছুটতে ছুটতে গোধুলিরেখা, দূরের কোনো হাইওয়ে-বিভ্রম
দ্রুতগামী কালো অ্যাম্বাসেডরের নিচে
হরিণস্রোত
মৃত্যুপ্রবাহ...
কালো কালো ধোয়ার কুণ্ডলী ঢেকে দেয় সবুজ,
অবুঝ প্রাণীদের নির্দোষ চোখ।
শোক?
ভরতনাট্যমের আনন্দমুদ্রায় মহাভারতের
পুত্রগণ,
গোলপাতা কেঁপে ওঠে ‘জয় শ্রীরাম’
ধ্বনি-ঝঙ্কারে
নেটিভ-কবরের ঘাস থেকে
ছাই সরিয়ে খোঁজেন ম্যানগ্রোভ সভ্যতা
ক’জন মার্কিন নৃতত্ববিদ।
হাত নামছে, হাত উঠছে, বিহ্বল চোখ কষ্ট বুনছে
শুনছে ভয়ঙ্কর প্রাণীদের প্রজনন সঙ্গীত।
অগ্নিদগ্ধ তিব্বত, মৌন পর্বত ফেটে পড়ে আর্তচিৎকারে
কমলারঙ-আর্তনাদ ভেঙে পড়ে দ্যাগ হ্যামারশোল্ড প্লাজায়,
গেরুয়াচক্ষু-নুন ধুয়ে ফেলে ইস্ট রিভার
ভাবলেশহীন নিয়মের স্রোতে।
হঠাৎ একদিন বৃক্ষ-সভাতে
হাতেরা ঢুকে পড়ে, ক’জন বনচারী ঝড়ের পিছু পিছু
হাজারো ডাল নেড়ে বৃক্ষদের সভা
জানায় প্রতিবাদ,
পাতারা নেচে ওঠে রুদ্র করতালি
ফাটছে বুনো রোষ
হাত কী প্রতিনিধি বৈরী সভ্যতার?
বুয়াকে থেকে মান, ওপারে আমাজান
পাখিরা গৃহহারা, মাছেরা কানকোতে...
ডাল পা মাথা কাটে বৃক্ষ সমাজের
বনের দস্যুরা।
কে নেবে দায় তার, অগ্রযাত্রা কি?
কাটছে প্রতিদিন একর কোটি তিন
মেটাতে কোন ক্ষুধা?
হাতগুলো নদী, আঙুলেরা শাখানদী, উপনদী,
ছুঁড়ে দিচ্ছে নখের ছোবল
ভেঙে পড়ে ইউরো-স্বপ্ন, নববধূর মেহদীর রঙ,
নদীগুলো গতিময় রাঙা স্রোতে
চাঁদপুর, শরীয়তপুর হামাগুড়ি দেয়
নদীদের নাভির ভেতর।
হাতগুলো আগুন, হাতগুলো পেট্রোল, হাতগুলো বোমা
দাঙ্গা গোত্র ও ধর্মের, সুজা ও পূজার
রেলকাটা দেহ,
ফেলানির মৃতদেহ ভারত-বাংলাদেশ-সীমান্ত-সৌহার্দ্যের
সর্বশেষ নিদর্শন;
ঝুলে আছে অনিবার্য কাঁটাতারে।
দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে সাঁওতাল গ্রাম, পুড়ছে রুখসানার বাবা-মা গুজরাটে
জীবন্ত পুড়ে যাচ্ছে সাঙ্গিয়ে খের সাংচুর
পাহাড়ে
পুড়ছে আজাওয়াদ, তুয়ারেগ বীর ওমর হামাহা
গোত্রদ্বন্দ্বরক্তস্রোতপ্লাজমা পুড়িয়ে
দিচ্ছে ভাটির ফসল
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে নাইল খরতপ্ত মরুপথে
ইতিহাসগ্রন্থ থেকে তুলে এনে কোন হাত
ছড়িয়ে দিয়েছে ইউফ্রেটিস গোল ভূ-গোলে?
বহুধারায় ইউফ্রেটিস-ঈর্ষা, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি।
এই দু’হাতে
সব,
হয়েছে সম্ভব
রেখাতে উজ্জ্বল
ছড়ানো নদী-জল
পথেরা হেঁটে যায়
বহুদূর অচেনায়
নখেরও খিদে পায়,
তাই সে খামচায়
আঙুলও নিশপিশ,
তালুতে ঢালে বিষ
মুষ্ঠি তুলে ধরে
হাতের অন্তরে
কব্জি লোহা লোহা
হাতেরা বেপরোয়া
বাহুতে বাজপাখি
তাকেও কাছে রাখি
আঙুলে আছে কর
গুনছে উত্তর
চন্দ্রে শিরোরেখা
প্রেমের মেলে দেখা
বৃহস্পতিযোগ
নেবে কী উদ্যোগ?
রবিকে টেনে দাও
ছন্দে নেচে যাও
আনন্দ বাজাও
রঙে রঙে সাজাও
হৃদয় বিভাজিত
প্রণয় আরো স্ফীত
শনির যোগ আছে,
ঝুঁকি ও রোগ আছে
বৃহস্পতিতলে
ভেল্কি-জাদুবলে
ত্রিশূল থাকে যদি
কল্যাণের নদী
সাপোর্ট-লাইন আছে
তুমি তো মাইনাসে
বুধের নিচে টান
স্বাস্থটা সটান
প্রখর রবি আছে
তোমার সবই আছে।
হাতগুলো জাদু, হাতগুলো ভেল্কি, খেল কী দেখায় টিভিস্ক্রিনে প্রতিদিন!
যতি দিন বলে গলায় রক্ত, মুখে ফেনা তোলে মানবাধিকার সংস্থা
অথচ ঈশ্বরের হাতের ইশারায় লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন থেকে
উড়াল সুন্দরী হাওয়া, ডানা মেলে ইসলামিক
স্টেটের আকাশে
কাকে দোষ দিচ্ছো সুশীল বিশ্ব? নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে কার কোল?
হাতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র, আঙুলগুলো ট্রিগার
স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে সশব্দে
বেজে ওঠে হাত-বিভীষিকা
উঁকি দেওয়া স্বপ্নের কুঁড়ি নিয়ে ভেঙে
পড়ে কানেক্টিকাট-নিউটাউন
রাঙা টিউলিপ-সারি ভস্ম, মুহুর্তেই সভ্যতার মহাশ্মশান,
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগুনে পুড়তে থাকে
ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি,
বিশ্বমিডিয়া,
তবু আরও আরও কালো হাত,
চাই আরও অধিক কালো হাত, ট্রিগারসমেত,
দাবী তোলে শ্বেতাঙ্গ দেশপ্রেমিক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ
মাতৃভূমি-রক্ষকদল।
ধর্মশালা থেকে পানশালা, স্ট্রিপটিজ-কন্যাদের
স্তনের নিরাপত্তায়
নিয়োজিত হয় আরো সহস্ত্র কালো হাত…
বাজলো অকস্মাৎ
কমলারঙের হাত
কাঁপিয়ে নগর, কাম ও ঘামের উষ্ণ প্রহর
সমুদ্রটা এফোঁড় –ওফোঁড়,
উঠছে জেগে সদম-প্রাসাদ
অধিকার-গৃহ।
নুনের দোহাই কেবলই কৌতুক;
বরং নুনের ভাস্কর্যে রঙ মাখে
স্বহস্তে নগরপিতাগণ।
রাত বাড়ে, অন্ধকার ঘন হয়ে আসে
পরবাসে সুখ খোঁজে আফ্রিকিয়-এশিয়-ল্যাটিনো চোখ
হঠাৎ জ্বলে ওঠে হাত, সংঘাত, আগস্টের বৃষ্টি
সৃষ্টি করে নতুন রক্তের নদী
যদি আবার ফিরে আসে ঊনিশ শো
তেষট্টি, লিবার্টি মনুমেন্ট বেজে ওঠে
“আই হ্যাভ এ ড্রিম” ঝঙ্কারে, মুহুর্মুহু ধ্বনিত হয় “কাজ ও স্বাধীনতা”
পনের ডলার শ্রমের দাবীতে ভেঙে পড়বে
কি রকফেলার সেন্টার
দুই হাজার সতের’র বসন্তে?
লুকাস, দিয়েগো, হোসে, ইব্রাহীম,
কোয়াদিও-র চোখ ভোরের সূর্য
হামাগুড়ি দিয়ে উঠে আসে
স্যাঁতস্যাঁতে বেইজমেন্ট থেকে।
হাতগুলো মানবিক তবু আনবিক ছোঁয়া
দানবিক চুমো সবুজ শিশুর চোখে
আদুরে ‘লিটল বয়’ দুষ্টু ‘ফ্যাট বয়’
হেলে দুলে মাঠে নামে
খেলতে খেলতে মুহূর্তেই হত্যা করে
দুই লক্ষ নিরীহ মানুষ,
ফানুশ ওড়ায় তবু উচ্চাকাঙ্ক্ষী একবিংশ
মানবতার নীল আকাশে;
বাঁকা সে বাঁশি এখনো যে রয়ে গেছে হন্তারক
ভ্রাতৃদ্বয়ের দাম্ভিক পিতার হাতেই।
হাতগুলো ধারালো শিশ্ন
অশ্লীল শীৎকার তোলে নানকিং শ্মশানে
ঊনিশ’শ সাইত্রিশ থেকে উঠে এসে
পাদ্রীর কোলে আশ্রয় খোঁজে সভ্যতা আজও
বাজো, বেজে ওঠো হাত-দিদজেরিদু
কম্পন তোলো সভ্যতার হৃদপিণ্ড
কাঁপিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ো লক্ষ্য স্থির করে মানব
ও দানবের কর্ণকুহরে।
হাতেরা হাতিয়ার ধারালো বল্লম
সাগরের ওপারে সাঁজোয়া মহড়ায়
আবার জেগে ওঠে এ কোন হিটলার?
লম্ফ দিয়ে দিয়ে করছে মার্চ পাস্ট
শাসিয়ে যায় কাকে অর্বাচিন শিশু?
জানে কী অর্থ সে শাসক কাকে বলে?
সাঁজোয়া ছুটে চলে, মৃত্যু-হাসি
দিয়ে
এ যেন সিনেমার দৃশ্য কোনো এক।
মুভিটা শেষ হলে পৃথিবী শান্ত কী?
বাইরে বাদুড়ের ছড়ানো ডানাতে
ঢেকেছে রোদ্দুর। তবুও জবুথুবু
জীর্ণ মানুষের, রোদেরই প্রার্থনা।
হাতগুলো পাঞ্জা, চলছে মহড়া।
দরোজায় নক নক, এ কোন অতিথি!
১৩ মে ২০১৭, ডব্লিউ ডব্লিউ থ্রি! হোরাশিও ভিলেগাস,
কী সুনিশ্চিত ধ্বংসের ঘোষণা।
ইস্রাফিলের শিঙ্গা ছোঁয় আকাশের
মেঘ, ভূ-পৃষ্ঠ প্রকম্পিত।
এপারে বুড়ো ওপারে গুড়ো,
দুই দর্জালের তাতানো মাথা বিভক্ত পৃথিবীর দুই খন্ড,
অসম অন্ডজোড়া ঝুলে আছে
কোনো এক বুনো ষাঁড়ের ক্রুদ্ধ উরুদ্বয়ের
মাঝখানে।
লাল বোতামে আঙুল, দুই শয়তান;
আপ পেহলে, আপ
পেহলে সৌজন্য প্রদর্শিত হচ্ছে টিভিস্ক্রিনে।
ওরা একে অন্যকে অতিক্রম করে
প্রশান্ত নীল জলে, শেষবারের মতো।
ধ্বসে যায় পশ্চিম তীর, পিয়ং ইয়ং;
কুম্পেং জাতীয় উদ্যান থেকে আনবিক
ছাই উড়ে উড়ে যায়
দক্ষিণে, সিউল অবধি। হেংজু-সাংহাই
গলাগলি বেঁধে ঝাপ দেয়
হলুদ সাগরে, বিভিষীকার ওপার থেকে
আতঙ্কের হাসি ছড়ায় ওসাকা। আসাদের
ভস্ম উড়তে থাকে
মধ্যপ্রাচ্যের বাতাশে, অন্ধকার আকাশে ঢুকে পড়ে অচেনা দ্রোণের ঝাঁক,
এক ফুঁয়ে উড়ে যায় ফিলিস্তিন, লেবানন,
জুইশ পতাকা ওড়ে পতপত ধ্বনি তুলে, জায়োনিজ-সভা
মিডিয়ার রাতজাগা চোখ ধুয়ে দেয় ত্বোরাশ্লোক-জলে।
খিদে নাকি নেংটি ইঁদুর ঝাঁপ দিয়েছে
নুনে
আবার কেন খিদে আসে বছর গুনে গুনে
সোমালিয়ায় খিদে আসে
নাইজেরিয়া কাঁপছে ত্রাসে
ইয়েমেনের শিশু কাঁদে
সাউথ সুদান বাদ-বিবাদে
যাচ্ছে মারা একুশ হাজার ক্ষুধার
দহনে
কোন কালো হাত জ্বালায় আগুন পেটের
গহনে?
হাতগুলো ফের চোখ হয়ে যায়
কান্না ঝরায় বৃক্ষ-নদীর
খরায় খরায় জল শুকিয়ে
উটপাখিদের বনমরুগ্রাম।
হাতকে তবু জানাই প্রণাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন