শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

সম্রাট সেনগুপ্ত




মৃতদেহ


"You talk about your nuclear capabilities, but ours are so massive that I pray to God they will never have to be used." কিম জন উনের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প

লিখেই পোস্টটাকে ডিলিট করে দিল সঞ্জয়।

Do I dare to disturb the universe? কাউকে আঘাত
দেবে না সে। এই সন্ধ্যেবেলা বসে অঙ্ক কষবে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। গালে একটা মাছি। গভীর প্রেমের চিন্তাটা ভিড় করে মগজে। কিছু একটা বলতে চায়। হাত মুঠো করে। হাতের ভিতর দোমরানো কাগজ। অনেকবার অনুশীলন করেছে। টাইপ করে ডিলিট করেছে।

পুলিশ মাথা নাড়ে – “কেউ হাত দেবেন না প্লিজ, কিপ ডিস্টেন্স!”

দেহটা উড়ালপুলের পেটের নিচে যুথবদ্ধ সাময়িক ঘর বাড়ির পাশে শুয়ে। এই সব ঝুপড়ি টেম্পোরারি গজিয়ে ওঠে। তাড়া খেতে খেতে মানুষ খাবার আর জীবিকার খোঁজে ভাঙা ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে যায় অন্যত্র। ভাসমান শহরকে জঙ্গম রাখে
ওরা। পুলিশ দেখে নিশ্বাস পড়ছে না। নিতান্তই একটা ডেডবডি। বেওয়ারিশ! ওয়াকি টকি বের করে মুর্দা গাড়িকে খবর দেয়। এখান থেকে ময়না তদন্ত, তারপর সরকারী নিয়মে শেষকৃত্য। বডিটা পুরুষের। পুরুষাঙ্গ দেখে আন্দাজ করা যেতে পারে ধর্ম। শরীরে তাগা, তাবিজ, মাদুলি কিসসু নেই। বৃষ্টি নামে। পুলিশ আর উৎসুক মানুষেরা হুড়মুড় করে ব্রিজের নিচে ঢুকে পড়ে। এ শহরে উড়ালপুলকে লোকে বলে ব্রিজ।

তাড়কাটা মালটাকে না বলে দে’। হাসে সুশান্ত। নীরা চুপচাপ নখ কামড়ায়। সে জানে একজন রোজ বোতাম টিপতে গিয়েও টেপে না। মেসেজ লিখেও ডিলিট করে। আড়াল থেকে বন্ধুরা দেখে। বোতাম টেপার জন্য চাই সাহস। জন্ম মৃত্যু - বোতাম টেপা। মেসেজ সেন্ড করা, এক লহমায় ডিলিট করা, আনফ্রেন্ড করা। নীরা তার তেরশ চব্বিশ নম্বর ভালবাসার মানুষকে একদিন এভাবেই না বলে দেয়। তারপর অনন্ত শূন্যতা, নতুন শুরুয়াৎ।

সঞ্জয় জানালার বাইরে তাকায়। উড়ালপুলের নিচে ভিড়। কিছু মানুষ এই শহরের রঙ্গকর্মী। কৌতূহল হয়। ওদিকে হাত নিশপিশ। আবার পুরো মেসেজটা টাইপ  করেছে। সেন্ড করতে যায়, তারপর সামলে নেয়। এক অমোঘ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে ভয় পায়। গোলাপের তোড়া হাতে কতবার ট্রামে উঠে পরের  স্টপেজে নেমে গেছে। গোলাপের মৃত্যু হয়। ফেলে দেয়া, মৃত গোলাপেরা অপরিচিত মেয়েদের ইস উস শব্দ শোনে। গোলাপের কান নেই।সঞ্জয় জামাটা গলিয়ে নেয়। বৃষ্টিটা কমেছে।

পুলিশেরা গোটা শহর সন্দেহের চোখে দেখে। জানা নে
কার হাতে আছে ট্রিগ্রারের বোতাম। ভুভুক্ষু শরীরটা কঙ্কালসার। তাকে কেউ চেনে না এখানে। ব্রিজের নিচের মানুষেদের চেয়েও সে অপরিচিত। দেহটার প্রায় কোনো ওজন নেই। দুজনের কাঁধে চেপে একটা গাড়িতে ওঠে বেওয়ারিশ।

পকেটে চলভাষ যন্ত্রটা বাজে। নীরার ফোন। থেমে যায়। শরীরে একটা ঠাণ্ডা স্রোত। নিজেরই অজান্তে টাইপ না করা মেসেজের ট্রিগার টিপেছে। ডেডবডি হাসছে। মৃত্যুর লক্ষণ। ক্ষয়াটে চোয়াল হাঁ হয়ে দাঁতগুলো বাইরে। মাথাটা দুলছে। গাড়ির দরজা বন্ধ হয়। স্টার্ট দেয় মৃতদেহ।

1 টি মন্তব্য:

  1. 'বোতাম'/'ট্রিগার' শব্দের বিবিধ প্রকরণ গল্পের মধ্যে তৈরি করেছে এক থ্রিলারী আবর্ত । মেট্রো/নেক্রোপলিসে প্রেম-সংশয়-অপঘাত-মৃত্যুর চোরাস্রোত ছেনালি করতে থাকে মুহুর্মুহু । এই অনিশ্চয়তার ছেনালিপনা 'জঙ্গম'রাখে এই ফাঁপা অন্তঃসারশূন্য শহরকে ।

    উত্তরমুছুন