শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

সুমনা পাল ভট্টাচার্য




বুভুক্ষিত  


অন্ধের চোখে চোখ রেখে আলো খুঁটে খুঁটে দেখেছি বুভুক্ষু সূর্যের তেজ কী তীব্র!

ডোম-চামড়ার গায়ে ফুটে উঠেছে অস্পৃশ্য অক্ষরলিপি, পড়তে পড়তে ঝিমধরা নেশায় ঘুমিয়ে পড়েছি কতবার চিতার উপর
পুড়ে গেছে তলতলে মাংস, উবে গেছে জল, জমাট বেঁধেছে রক্ত
 কঙ্কালের  সিঁড়ি বেয়ে দুটো আলোর কুঠুরি দাউদাউ করে উঠেছে জ্বলে
 
অন্ত:সত্ত্বা সময়ের জিভে তবু লেগে থেকেছে এক আগ্রাসী আগুন  খিদে...

                

জন্মান্তর


আমায় মৃত ঘোষণা করার পরেই চনমনে হয়ে উঠলো শিথিল পেশীগুলি, কালশিটের রঙ তামাটে হয়ে উঠতেই চামড়ার কুঞ্চন হলো উধাও

যেভাবে কৈশোরে প্রেমিকের গোপন চিরকুট অন্তর্বাসের গুহায় স্তনের উষ্ণস্রাবে মাখামাখি হয়ে নরম কাদা হয়ে যেত, ঠিক সেইভাবেই এক তেজহীন নিমজ্জিত প্রার্থনা অসাড় জিভে রোজ জেগে উঠতে চেয়েও ঘুমিয়ে পড়ে ক্লান্তিতে

আলো নিভিয়ে দেওয়ার পর, শ্রবণশক্তি আরো তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, ভেজা কাঠের মত ফুলে ওঠে পথভ্রষ্ট সংলাপ

এক উষ্ণতা চুমুকে, হাজার তীব্র দংশন


নৈবেদ্য


পুজোর সব সামগ্রী রেখে এসেছি তোমার ঘরে
প্রার্থনার আদলে এঁকেছি দগ্ধতার কাঠামো, গলিত মাংসে রেখেছি মৃত্যুর তূণ, তবু করজোড়ে বলিকাঠে মাথা দিয়ে বলেছি এই উৎসর্গীকৃত কাঙালপনা গ্রহণ করো প্রভু...

পাষাণের চোখ জ্বলে উঠেছে, একে একে তার ধারালো নখ, দাঁত, লেলিহান জিহ্বা সব স্বজাগ হয়ে উঠেছে।
তারপর চারপাশের বাতাসে ফেটে পড়েছে হুলুধ্বনি...

সময়ের উন্মত্ত খড়গের পবিত্র স্নান সারা হলে, নদীর রঙ হয়েছে লাল, আর দেবতার ঘটে খচিত হয়েছে তোমার নাম।

হে আমার ঈশ্বর, আমার ভিখিরি-যাপন স্বার্থক হলো তবে...
                                                              
                                                               


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন