নায়ক
চোখ বারংবার
সানগ্লাসে ঢেকে ফেলে। চোখ যে অভিনয় জানে না। তবু বাধ্যত আরও আরও ঢেকে রাখতে চায়। সিগনালে গাড়ি দাঁড়ালে অবচেতনস্বভাবে
মুখ ঢেকে ফেলে রুমালের আড়ালে। হায় তার অত্যধিক রুমাল ব্যবহার ম্যানিয়ায়
মায়া জাগে। যখন মুখ ঘেমে যায় প্রকৃতিজ ভাপে তখন সোপিসের সেই তোয়াজে
গাছ কিংকর্তব্য হয়ে পড়ে ছায়া(ছবি)হীনতায়। ঘামে মুখ থেকে মুখোশের আঠা খুলে শুকিয়ে
খসে পড়তে চায়।
নায়কের মুখ তার নিজের কাছেও
অচেনা ঠোকরায় যেন। চরিত্র থেকে চরিত্রে ভেসে ভেসে ভোঁতা হয়ে আমি হারানোর মহামারী। স্মৃতি বিট্রে করে নিজের
মূল পারসোনালিটি নিজের কাছেই অচেনা লাগে। এ এক এস্কেপিজম মাদকতা – সেলফ ইজ
ডিজায়ারিং টু সাপ্রেস ইটস ওন ডিজায়ার্স। আদারের থেকে কনশাসনেস কমিয়ে ফেলতে চেয়ে নিজের
প্রতি ওভারকনশাস হয়ে পড়ে।
এভাবে পারসোনার মানসিক অবস্থা
সেলফের জন্য চরম বিপদজনক হয়ে ওঠে – আত্মপ্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজেরই অজান্তে ভেঙে
খানখান হয়ে যেতে চায় এমত আকর্ষণ বিকর্ষণে। তখন এক বিবেকপরি রূপকথার নায়কের মুশকিল
আসান হয়ে আসে। তাকেও এমনকি সন্দেহবাতিকে দেখে চোখ – ও চোখ বারবার আয়নায় নিজের
চোখের সঙ্গে আইকনট্যাক্টে হেরে গিয়েও প্রাণপণ রুমালে খরগোশের মুখ মুখ সর্বনাশ খেলে যেতে চায়। গামস্পিরিটের নেশায় ইন্দ্রিয়মুগ্ধ মুখোশ মেকআপ বারবার পরখ করে দেখতে থাকে।
বিবেকপরিও
পরি-দেবী কিছু নন, এক সাধারণ মানুষী। অসাধারণভাবে সাধারণ। তার স্পর্শে সে জানতে পারে যে সে অবচেতনে যৌনঅতৃপ্ত – তার অতৃপ্তি তার বাহ্যিক ব্যক্তিত্বকাঠিন্য ও মধ্যবিত্ত
শিষ্টাচার অতিক্রম করে তার চেতনে দগদগে হয়ে ওঠে।
-
মিস সেনগুপ্তা, কলমটা ব্লাউজের এইখানে গোঁজা...
সে
সাকসেসফুল পাপেট বুঝে যায় অর্থ কীর্তি নয় – অমরত্বও নয় সর্বোত্তমের – বিপন্ন
বিষ্ময় উপলব্ধি করে বুঁদ হয়ে থাকাই শিল্পীর প্রকৃত পরমার্থ। নাহলে উত্তমেরও কদাপি
উচ্চতর সীমানার শেষ নেই। আর পরাজয় ব্যর্থতাই শতকরা বাস্তব – তা আছে তাই সাফল্য
বাঁচে। তার স্বাদ না পেলে বাস্তবের কাছেই হেরো হেরো দুয়ো।
ডাইসের চালে জরিপ সে সাফল্য মস্তিষ্কের পুষ্টিবিধান করে না যে, সে মদে প্রথম সিনান
করি মুড অল্টারের মেকি সাহসে ভর করে বলেছিল
বাংলা সিনেমার শ্রেষ্ঠ ডায়লগ – আই উইল... সে আজ মদ্যপানদোষে হারিয়ে ফেলেছে
রূপকথার নায়কের মুস্কিল আসান জ্ঞানবৃদ্ধ ও শিশু আর্কিটাইপের আশীর্বাদ ও সাহায্য।
এখন মদ তার মুকুন্দফুলের প্রারম্ভিক কুঁড়ি।
শেষে
নায়ক হেরে যায় – নায়ক তবে হেরেও যায় নায়ক নামাঙ্কিত সিনেমায়! তার দিকে হাঁ করে
তাকানো লক্ষ লক্ষ চোখগুলো তাকে বাধ্যত আত্মকেন্দ্রিক হতে শিখিয়েছে। কিন্তু আজ সে
বাহিরপানে চোখ মেলে খুঁজছে অন্য সাধারণ মানুষকে... যার সে নিজে ফ্যান হয়ে গেছে। এ
নায়ক আজ থেকে চোরাবালিতে যদি সত্যিই ডোবে তবে সাহায্যের হাত সে পেলেও পেতে পারে। অথবা নিজের হারিয়ে যাওয়া সাধারণত্বকে পুনরাবিষ্কার করে এখন সে সত্যিকারের
রাজ্য ও রাণী জয় করা রূপকথার উইশডমসম্পন্ন নায়ক। নায়ক থেকে শিল্পী হয়েছে। তার রুমালের দরকার এবার থেকে মেগ্যালোম্যানিয়ায় নয়, হৃদপিণ্ডকে সেঁক দিতে
লাগবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন