সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট
এক প্রচন্ড ঝড় উঠলো। ধুলোর। যেখানে যা কিছু ছিল স্থির, সব ছিটকে সরে গেল এখান থেকে ওখানে। লন্ডভন্ড।
ল্যাম্পপোস্টের গায়ে লেপ্টে থাকা মৃত প্রজাপতির চোখে তখনো সরব হয়ে ছিল এক বিস্মিততীব্র জিজ্ঞাসা--আলোর কাছাকাছি গেলেই পুড়তে হবে কেন! কিছুক্ষণের ভেতরই মৃতমাংস সন্ধানী পিঁপড়ারা ভীড় করবে এখানে। আত্মাহুতি দেবে আরো কিছু ক্ষুদ্রকায় প্রাণ। প্রখর তাপে পতঙ্গ পুড়ে পুড়ে খাদ্যসন্ধানী পিপীলিকা এবং যে তীব্রতাপ পুড়ায় পতঙ্গ, সেই খরদহন কখনো কখনো মানুষের নরম হাতগুলোতে ছড়িয়ে দেয় ফোসকার দাগ। আজীবনের।
এই যে মানুষ, পতঙ্গ অথবা পিঁপড়া যারা সন্ধান করে আলো অথবা মাংসের তাদের পরিণতিগুলো, একই সুতোয় বাঁধা। অবসান।
তার চাইতে এই প্রখর উত্তাপের উৎস থেকে দূরেই থাক্ ক্ষীণজীবী কীট-পতঙ্গ কাছিমলতাগুলো। আগুনের কাছা থাকুক কেবল অগ্নিপ্রতিরোধক ধাতব কাঠিন্য। ‘সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট’।
শন শন দমকা হাওয়ায় ইতিউতি উড়ে যাচ্ছে শুকনো জীর্ণ ডালপালা, পাতা, খড়কুটো।
বাতাসের দুর্ণিবার আলোড়নে শূন্যে উঠে যাওয়া ঝরা পাতাগুলো পাখি নয়—এই কথাটা কখনো ভুলে যায় আত্মমগ্নতার গভীরে ডুবে যাওয়া কিছু মানুষ। ধূসর বর্ণের বিচ্ছিন্ন ঘুর্ণিতে তারা ভুগতে থাকে উড়ে যাওয়া ডানাবিভ্রমে। অহেতুক। ঝড় থেমে গেলে এসব ঝরে পড়া ছাইপাশ আবার নেমে আসবে মাটির মাধ্যাকর্ষণের টানে। জায়গা হবে ডাস্টবিনে। মিউনিসিপ্যালিটির আবর্জনার গাড়িতে।
প্রবলবর্ষণের তোড়ে ছাদ উপচে পড়া অবিরাম জলধারাও তো মাঝে মাঝে ঝর্ণার বিভ্রম তৈরি করে ফেলে এক নিমেষে। পাহাড়, ঝর্ণা এবং নদী পিয়াসী মানুষের কাছে এও এক তৃপ্তিদায়ক সান্ত্বনা। উঠোনে মিছেমিছি তৈরি হওয়া এক নদীতে মানুষ ভাসিয়ে দেয় নানা রঙের কাগজের নৌকা আর কপোলকল্পনায় ভাবে-- ‘সপ্তডিঙ্গা মধুকর দিয়েছি ভাসায়ে’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন