বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

দেবলীনা চক্রবর্তী




জন্মঘর


দূরে চলে যাওয়া মানুষগুলো কেমন
ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায় -
বুঝি না, এ দোষ কার
দূরত্ব নাকি ভিজে দুপাতার!

প্রতি সন্ধ্যায় ঈশ্বর আসে জানি,
বুঝি,আমার জন্মঘরে চুপি চুপি
রূপালি থালায় বৈকালিক নিবেদন করেছি
কী করিনি  
দূর থেকে এসে আমার রঙ্গ দেখে
ফাঁকি দিয়ে যায়, অন্য কারো দোরে
সে নৈবেদ্যে হয়তো বেশি নিবেদন আছে!
সব বুঝি - তবু অপেক্ষায় থাকি

 একদিন ঠিক ফিরে আসবে জানি
 ফেরার পথ তো একটাই
 হাঁটতে হাঁটতে, ঘুরে ফিরে
 সেই শুরু আর শেষের প্রান্ত
 একই গিঁটে বাঁধা! জানি!

দুদিকেই আসা-যাওয়া, টানাপোড়েন
তবু ফিরে আসতেই হবে কোনো না কোনো জন্মে
হয়তো আমারই এই জন্মঘরে


একটু খেয়ালিপনা


ভেবেছিলাম লিখব কিছু দুএক লাইন
শব্দগুলো ফুটছিলো যেন ইন্ডাকসন টপে বসানো এক সসপ্যান ফুটন্ত জল,
দরকার এক চামচ ভাবনা, এক চা-চামচ তাড়না
আর এক চামচ ছন্দের যাদুকরী রঙ!
তৈরি হল এক পেয়ালা উষ্ণ কবিতার সুখটান।

এখন সন্ধ্যের বিন ব্যাগে হেলান দিয়েছে মিটমিটে তারারা,
পরস্পরের মধ্যে আছে বেশ একটা গুপচুপ ভাব, গোপন আঁতাত

চোখের খোলা জানালায় ওদের দেখছি আর ভাবছি-  
আজকের বাদামী সভ্যতায় সম্পর্কগুলো সব মডিউলার কিচেনের ক্যবিনেটে রাখা
পোর্শেলিনের সেট
সাজানো-গোছানো, ঝকঝকে, মসৃণ,
টানটান সমঝোতা আর একটু স্পেশ মেইন্টেন

কিন্তু ভীষণ পলকা, একটু অসাবধানী ছোঁয়াতেই
 ঠুকঠাক – দুমদাম, শেষে ভেঙে খানখান।  

 হাতে তুলে ব্যবহার করতে বেশ ভয় হয়
 একটা ডিশ্ওয়াসারের এখন খুব দরকার


ঘুম ভাঙার পরে


পূর্বাহ্নে সবে ফুটছে কৌণিক আলো
গমরঙা শীষে জড়ানো হিম শিশিরের তৃপ্তি তখনও।

শোনা যায় ঢং ঢং ঘন্টাধ্বনি
নাদ ব্রহ্মের মঙ্গলারতি, সন্ধিক্ষণ
চন্দন আর ধূপের গন্ধ,
যেন মায়া সভ্যতার এক আদি রাজ্য
ঘুমোনো যায় না, ঘুম ভেঙে যায়!

চোখের চাহনি ঘিরে উঁচু উঁচু ইমারতের পাহারা
মাঝে তার ব্যবিলনীয় ঝুলন্ত উদ্যান
একঝাঁক পায়রার বকবকম আর শিশুপাখিদের হরবোলা হরদম
ঘুম ভেঙে যায়, ঘুমোতে দেয় না!

শুধু দূরে দূরে থাকা এ শুভেচ্ছাবার্তা নয়
আর নেব না এমন রঙিন উপহার ভিনদেশীয়
যদি কিছু দিতে চাও তবে
দু’মুঠো শান্তি, বাটিভরা সম্ভ্রম আর
টুকরো জিওল মাছ পাতে তুলে দিও,
খুব তৃপ্তি পাবো জেনো
নিশ্চিতির ভাতঘুমে দেখবো সুবিশাল
গৌরীয় আকাশ,
আর চলতি হাওয়ায় ডানা ঝাপটানো সেই নীলপাখি
বয়ে আনবে তোমার কুশল সংবাদ 
হে আর্যস্বামী!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন