উলটো জোয়ার
মোনালীর বিয়েতে বরযাত্রীরা ধুতি পাঞ্জাবি পরে
এসেছিল। এটি মোনালীর ইচ্ছে। ওর কাছে গীতবিতান বই ধর্মগ্ৰন্থ। রবি ঠাকুরের মেডেল
চুরির সংবাদে সে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। রূপোলী ক্যান্ডেলস্টিক চুরি যাবার গল্পের
ফাদারের মতো চোরকে ক্ষমা করে দিল দেশের লোক।
আজকাল লোকে যেমন অমিতাভ বচ্চনের টুইটকে মহামূল্যবান
মনে করে। শিক্ষিত চোরের উপদ্রব বেড়েছে। মেহুল টেহুলরাই আসল চাণক্য।
তেতো গ্ৰিন টির নাম সবুজকলি রাখলে কেমন হয়। জিভে
মিষ্টি লাগে তারিয়ে তারিয়ে খেলে। কিন্তু মোনালীর বৃদ্ধা শাশুড়ি গ্ৰিনটিতে আরো জল মিশিয়ে ঢক ঢক
করে খায়। বৌ হয়ে এসে শাশুড়িকে দেখে
মনে হয়েছিল পু বাদ দিয়ে শাড়ি পরা শি - ক্যাট।
মোনালীর বর সঙ্গীতশিল্পী। গানের স্কুল আছে। সিডি
এলবাম ইত্যাদি আছে। একজন শিষ্যা ছিল তার অধরা মাধুরী প্রেমিকা। 'নিদ নাহি আঁখি পাতে'র উপর ভরসা করে তরতর করে 'একা মোর গানের তরী' অনেকটাই ভেসে যেতে যেতে আটকে
গিয়েছিল চড়ায় অথবা চরে। ওই চরটি মোনালী বরের সঙ্গে রূপনারায়ণ নদীর তীরে গিয়ে
দেখে এসেছে। সদ্য গজিয়ে ওঠা একটি রিসোর্ট এই ওরা এসেছিল 'মধু
যিমিনী রে'র সঙ্গে 'দুজনে দেখা হল'
ঝালিয়ে নিতে।
চিরাচরিত ঈর্ষা থেকে দূরে ওরা হাঁটাহাঁটি করতে অভ্যস্ত।
মোনালী হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওর বরের টুথব্রাশ করার দিকে। ব্রাশও চালায় মাথা
নাড়ায় দ্রুত।
দেয়ালের ছায়া দেখে অবস্থান বোঝা যায় নক্ষত্রর।
ফটোর কাঁচে বার বার পড়ে দৈনন্দিনতার প্রতিফলন। কত শত মানুষ উঠোনের কুয়ো থেকে উঠে
আসে আঙুল নাড়ায় নেমে যায়। মিষ্টি হাসে। বলে করে দেবো কাজ। তারপর হারিয়ে যায়।
অচল জীবনে সচল একমাত্র টিভি। চোখ নাচিয়ে নাচিয়ে বক্তৃতা দেয় নতুন বিপ্লবী
মন্ত্রী। আফশোস পাপোশে মুছে কারা যেন কলা খায় রান্নাঘরে জাঁকিয়ে বসে। ঘোর লাগে।
বাথরুমে মরা প্রজাপতিকে প্রণাম করে মোনালী। ঘন্টা বাজে পুরোহিতের ভুল মন্ত্রে
দীক্ষিত জীবনকে সম্মান জানাতে।
মাঝে মাঝে মহামতি ট্রাম্পের স্ত্রীর স্বপ্নে ঢুকে
যায় মোনালী। তাদের শয্যাদৃশ্য আঁকে মনে মনে। কোন খবরের কাগজ কোন ঘটনাকে বড়ো
করে দেখাবে কোনটাকে ছোট্ট লিলি করে ফোটাবে সেটা তাদের ব্যাপার। বাড়িতে তিন চারটি
খবরের কাগজ। আর ক্লিপিংস কাটার অভ্যেস বাপের বাড়ি থেকে বয়ে এনেছে মোনালী।
শাশুড়ি আবার এসব কাজে উৎসাহ দেয়। শাশুড়ি আর বৌয়ে মিলে ফাইল জমায়। কর্তা
চেঁচান। সব কেজি দরে- বিক্রি করার নির্দেশ
দেন। মোনালী জানে জীবনের সাফল্য সব পুরনো খবরকাগজওয়ালার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
মোনালীর বর পুরোনো প্রেমিকার ডাকে ছুটে গিয়েছিল
একবার। প্রেমিকা এখনও নাকি স্বপ্নে দেখে শপিংমলে তারা একসঙ্গে হাত ধরে ঘুরে
বেড়াচ্ছে। সেই প্রেমিকা ওর গানের সিডি কিনে কিনে কিনে... কেন ডেকেছিল ঠিক না
বুঝতে পারলেও মোনালীর বর গিয়েছিল। প্রশ্ন করেছিল একমাথা পাকা চুল পাকা গোঁফ দাড়ি
ঝাঁকিয়ে। সামনের দিকে উপরের একপাটি দাঁত পড়ে গেছে।
কী ব্যাপার? কেন তলব?
আমি আবার গান শিখব মঙ্গলদা।
মধুমঙ্গল অপাঙ্গে ওর প্রেমিকার পাখোয়াজ সাইজের
ভুঁড়ির দিকে তাকায়। ধ্যাবড়ানো স্তনের দিকে তাকায়। মোনালীর সঙ্গে মনে মনে তুলনা টানে। ওর চকিত তরঙ্গকে বোঝার চেষ্টা করে।
বিস্কুট চা নিঃশব্দে গলা দিয়ে নামে। প্রেমিকার বর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। খুব
অসুবিধায় না পড়লে ঘোড়া বশম্বদ আছে কিনা দেখানোর প্রয়োজন হবেই বা কেন!
প্রেমিকাকে জেতানোর জন্য মোনালীর বর খুব হা হা হাসে। গলা ছেড়ে গান গায়। ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প
বলে। প্রেমিকাও মাঝে মাঝে ডুয়েট গায়।। হোন্ডা বাইক কীভাবে কিনল তার গল্প বলে।
বলে আসলে বেঁচে থাকা পরকীয়া স্বকীয়া সব
সঙ্গীতের স্বার্থে। ইঞ্জিনিয়ার সাবের সামনে তালশাঁস সন্দেশের বাক্স রাখে। রবিবারে আকাশ আট চ্যানেল দেখে
মোনালীরা। মধুমঙ্গলের গান থাকে মাঝে মধ্যে। গৌতমের পরিবারও দেখে।
মোনালী জানে মধুমঙ্গল সাগরের ঢেউ গুনতে ভালোবাসে।
দ্বৈত কণ্ঠের এলবাম কোনোদিন হবে না জেনেই মোনালীর সাহায্য চায় একদিন।
মোনালী আজ গৌতমের সঙ্গে কথা বলতে যাবে। খোঁজ খবর করতে
করতে বেরিয়ে এসেছে গৌতমের এক কোলিগের মেয়ে ছাত্রী মঙ্গলের। খবরকাগজে ষাঁড়াষাঁড়ির
বান কখোন আসবে গঙ্গায় লেখা আছে। মোনালীর
সব দিন তাই হাতে পঞ্জিকা মঙ্গলবারের মধ্যে আটকানো থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন