বিভাজন
ছোট মেয়েটা গানের মাঝখানে আচানক উঠে আসে আমার কাছে।
-বাবা আমি ডিপ্রেসড। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে
চলো।
এতটুকুন মেয়ে; ও ডিপ্রেশনের কী বোঝে! মনটা খারাপ লাগে। আমি বদমেজাজী মানুষ, তবুও মাথা ঠাণ্ডা
রেখে বলি;
-আমাকে বলো সব, মা!
মেয়েটা আমাকে কিছু বলল না। বলল সে একা ডাক্তারের সাথে কথা বলবে।
ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার আমাকে প্রশ্ন করলেন, মেয়েটার মা
কোথায়?
আমি বললাম, চলে গেছে।
ডাক্তার আর কিছু বললেন না। শুধু বললেন; তোমার মেয়ে তো
ডিপ্রেশনের ঔষধ খেতে চাইছে!
মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি। আজ সারাটা দিন বিষণ্ণ ভৈরবী।
বাইরে ছোট করে তুষার পড়ছে অনুপম করে। মেয়েটা জানালার কাচ
নামিয়ে দেয়। ঠাণ্ডা তুহিন তীর এসে লাগে গায়ে। ওকে একবার বলতে চাইলাম, কাচটা বন্ধ
করে দাও। আবার ভাবি, থাক না হয়। মেয়েটা চোখ মুদে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আছে।
একবার মৃদু করে বলল;
: বাবা তুমি চাইলে তোমার প্রিয় গান শুনতে পারো।
ও বাংলা বোঝে, কথাও বলতে পারে।
-মা তুই কি কিছু খাবি? খিদে আছে?
-খাব। স্মোকড মিট খাব।
অবাক হলাম। ও স্মোকড মিট পছন্দ করে না। ওটা আমার প্রিয়।
দুজনে একটা রেস্তোঁরায় মুখোমুখি বসি। বললাম;
-আমাকে খুশি করতে তুই স্মোকড মিট অর্ডার করলি?
ও জবাব দিল না। অল্প করে হাসে। ও খুব একটা খেলো না। আমি
আমারটা সহ ওরটাও খেলাম। এই জিনিষটা আমি রাজহাঁসের মতো খেতে পারি।
খাওয়া শেষ করে বের হই দুজন। গাড়ি স্টার্ট দিই। মেয়েটা আমার
চোখের দিকে তাকিয়ে রইল তিষ্ঠকাল। বুঝতে পারি কী যেন বলবে। সে বলল খুব স্পষ্ট করে;
-বাবা আমি চলে যাব।
চমকে উঠি।
-কোথায় যাবি?
-মায়ের কাছে চলে যাব। এখন থেকে মায়ের কাছে থাকব।
আমি কিছুই বললাম না। গাড়ি চলছে গতানুগতিক গতিতে। মেয়েটা
আবার বলল;
-বাবা তোমার গানটা শোনো।
বুকটা ছোট্ট করে চিনচিন করছে।
এন্টাসিড না খেলেই নয়। গানটা শুরু হলো:
এ আঁখি-জল মোছো পিয়া ভোলো ভোলো আমারে। মনে কে গো রাখে তারে
ঝরে যে ফুল আঁধারে।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হেসে দিলাম।
-এরকম করে তাকাবি না তো! তোকে দেখতে থাকলে আমি অ্যাকসিডেন্ট
করব তো!
তবু মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি নিরিবিলি একটা জায়গা
দেখে গাড়িটা থামাই।
-তুই কি জানিস তোর মা আরেক ভদ্রলোকের সাথে থাকে?
- জানি।
-আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি?
-আমি মা’র সাথে থাকব।
এন্টাসিড না খেলেই নয়। বুকটা চিনচিন করছেই।
-বাবা জানালার কাচ তুলে দিই?
-থাক।
আমাদের শহরে কী আজ তুষার পড়বার পূর্বাভাষ ছিল? আবহাওয়ার খবর
রাখা হয় না।
আমি মেয়েটাকে দেখতে থাকি।
এই মেয়েটা এত সুন্দর করে তাকাতে জানে!
হৃদয়ের ব্যথা ব্যবচ্ছেদেও ভ্রম হয়ে যায়, উপেক্ষায়।
উত্তরমুছুনশুধু এন্টাসিড খুঁজে খুঁজে হয়রান...
রক্তনালী ব্লক করে সেই কবে যে মেয়েটা ...
মেয়েটা এতো বাবার কেন
মেয়েটা এতো মায়েরই বা কেন!
মেয়েটা বিভাজিত
দু'কূল হাতড়ানো বিষন্ন বিষন্নতায়...
অনেক ধন্যবাদ মেরুনা :)
মুছুনbaah.... sundor
উত্তরমুছুনশুভেচ্ছা শুভলক্ষ্মী
মুছুন