শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

অশোক তাঁতী




জিনাত বেড়ালের সোনালী চোখ


X- অক্ষের ধনাত্মক দিকে ১১৫ ডিগ্রি আর জিনাতের ডানদিকে ২৭.৫ ডিগ্রিতে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে, তার ঠিক পেছনে বেড়ালটা দাঁড়িয়ে ছিল একমাত্র ফটোগ্রাফারই দেখেছিল বেড়ালটাকে হঠাৎ করে ফ্রেমের ভেতরে ঢুকে আসতে, বেড়ালের চোখ থেকে একটা পরিষ্কার সোনালী আলো ছিটকে উঠতে আলোর ওই কণাটা তারপর অনির্দিষ্ট শূন্যতায় ভেসে গেছে শূন্যে এমনি কত অস্ত্বিত্ব থেকেও অজানা থেকে যায় অজানা অস্ত্বিত্ব আর অনস্ত্বিত্ব একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ

ফটো তোলা হয়ে যেতে সবাই যখন কিছুটা অনির্দিষ্টভাবে ছড়িয়ে গেল তখন আর বেড়ালটাকে দেখা যায় নি অথচ ভিউ ফাইন্ডারের ভেতর দিয়ে সোনালী আলোটা তখনো তার চোখে ছিটকে আসছিলো বেড়ালটাকে আর কেউ দেখতে পায়নি এটা নিশ্চিত, ফটো তোলার সময়ে কেউই চমকায়নি, পেছন ফিরে তাকায় নি সুতরাং যে বেড়ালটা কিছু আগে ফ্রেমের মধ্যে পড়ল তার অস্ত্বিত্ব ফটোর মানুষগুলোর কাছে নেই, ক্যামেরার কাছে নেইযদিও ভিউ ফাইন্ডার চমকেছে, যেমন চমকেছে ক্যামেরার পেছনের মানুষটা

ক্যামেরা গুটিয়ে সে বেড়াল খুঁজতে বের হয় যদিও তখনো তার মাথায় জিনাতের মিষ্টি হাসিটা আটকে থাকে মেয়েদের দাঁতের দিকে তকিয়ে সে প্রেমে পড়ে যায় জিনাতের দাঁতগুলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনে হয় 

মাটির দিকে তাকিয়ে সে চিন্তিত ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখে জিনাত তাকে প্রশ্ন করে তোমার কিছু হারিয়ে গেছে?
সে জিনাতের দাঁতের দিকে তাকিয়ে বললআলো ভিউ ফাইন্ডারে
জিনাত ঘটমান অন্ধকারের কথা ভেবে তার মোবাইল বের করে টর্চ জ্বালায় আপাত অন্ধকারের মধ্যে সেও খুঁজতে থাকে সে মাটি ছেড়ে জিনাতের মুখের দিকে তাকায় জিনাত হাসছে না হাসিটা মুখের মধ্যে থেকেও একটা উদ্বেগ ফুটে ওঠে তার মনে হয় মুখবন্ধ ওই দাঁতে লেগে থাকা মাংসের কুচি থেকে মানুষের ধর্ম নির্ধারিত হয় - জিনাত, তুমি রসুন খাও?
জিনাত প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারে না অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেকী ?
ফটোগ্রাফার দেখল তখনো তার সামনের দুটো দাঁত আসন্ন সূর্যাস্তের আলোয় জ্বলজ্বলে দেখাচ্ছে সে আবার বললতোমরা রসুন খাও?

জিনাতের মুখটাও লাল আভায় ভরে ওঠে বহুবচনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট কিছু লুকিয়ে আছে এটা সে বুঝতে পারে - কেন, ফুলকপি ওলকপি পুদিনা পাতা ছেড়ে হঠাৎ তুমি রসুন নিয়ে পড়লে কেন?
-জেরুজালেমের ধর্মগুলো বড় বেশি রসুন খায়

সন্ধ্যের এই সুন্দর পরিবেশে কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ ধর্ম ঢুকে পড়তে তার মুখে বিস্ময়ের কালো কিছু রেখা জেগে ওঠে  তার চোখ ছোট হয়ে আসে মোবাইলের আলো নিভিয়ে তবুও কিছু বলতে হবে বলে সে বলেতাঁরাই তো পৃথিবীর সত্তর শতাংশ মানুষ
এই বলে সে আসন্ন সূর্যাস্তের ভালো লাগা থেকে দূরে সরে যায় ঘোলাটে রক্তের মতো আকাশে সাদাসাদা বকের কোয়া উড়ে যাচ্ছে

লালের ওপর সাদা কোয়া ছিটিয়ে অদ্ভুত দৃশ্য এমনি করেই পৃথিবীর সব খাবার, পোশাক, শিল্পের নির্মাণ হয় সাদার ওপর লাল ছিটিয়ে অবিশ্বাস আর অত্যাচার সে বুঝতে পারে জিনাতের সাদা চোখ লাল হয়ে আসছিল যে জলবিন্দুটা নেমে আসছিল সেটা নিয়ে সে দূরে কোথাও চলে গেল

হঠাৎ লাফিয়ে আসা বেড়ালটার মতো কেন তার মনে ধর্মের কথা এলো সে বুঝতে পারে না তবুও অন্ধকারে খুঁজে চলে বেড়ালটাকে 
যদিও বেড়ালের সন্দেহজনক তাৎক্ষণিক ইতিহাসটুকু ছাড়া সে বেড়ালের কোনো অস্ত্বিত্বই খুঁজে পেলো না শুধু মনের মধ্যে অবিশ্বাসটা খেলা করতে থাকে     

২টি মন্তব্য: