শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

জয়তী দাশ




চরণ চিহ্ন


একটা অমানিশি কাটলে
পূবের উঠোনটায় একটা নবান্নের উৎসব,
ঝরা পাতারা যেন হেমন্তের নূপুর -
বর্ণমালা থেকে উঠে আসছে খইয়ের ঘ্রাণ...

এখনো তোমার ঢেঁকি পাড়ের শব্দ শুনি মা!
হাঁটুর নীচ অব্ধি খোলা চুল,
এক দেবী হেঁটে চলছে আলপথ ধরে
আজও আঙুলে আঙুলে তারিখ ছাপ রাখি...

পূর্ণিমার তাম্রপাত্র থেকে চন্দনের সুরভি ভাসে
গোলার্ধ থেকে গোলার্ধে যে চিহ্ন ছুঁইয়েছিলে -
যোজন দূরের নদী বিধৌত নারী যেন...
ক্যানভাসে শুধু আলতা পা টুকুই এঁকেছি ...


গোত্রহীন অধ্যায়


বহুদূর যাত্রা ছিলো আমার,
দেখো এখন ফিরছি...
কিন্তু তোমার জন্য তো কিছুই আনতে পারলাম না,
কমলা শাল তোমার কি ছিলো পছন্দ!
কিন্তু লালটা যে তোমাকে বেশি মানাতো...
ভাবতে ভাবতেই বিগত দিন চলে গেলো।

পাখি পোষার ভারে হাতের ভেতর পালকচিহ্ন,
তোমাকে কত'না উপহারে সাজাতে চেয়েছি রোজ-
সকালের পাশে কত রোদ্দুর মাখতো খোলা জানালাটা!
হাজার গল্প লিখে রাখতো নিয়ম গন্ডির বেপরোয়া খেয়ালে;
কয়েকটা খুনসুটি ছড়িয়ে দিতো বিকালের মেঘলা খই!

সেই উড়ে যাওয়া পাখি সেদিন রাখেনি ঠিকানা...
খুঁজতে চাওয়া ভুল, নামগোত্রহীন তার কূল
তবে সেই যে তোমার চাওয়া! আর আমি কেই'বা হলাম তোমার!
তোমায় দিয়েছি পথ'চলা এক সাঁতারুর সন্ধান...
অনাবশ্যক মেঘ রাজ্য, স্যাঁতসেঁতে আগুনের ঘ্রাণ,
খালবিল ভরে উঠলে আগাছায় ঘুমিয়ে পড়বে ছায়ারা অজান্তে-
অনেক অনেক  রাতে জেগে উঠবে গোত্রহীন কোনো, নক্ষত্রে।


চিহ্নের অন্তরাল


বৃষ্টি এলেই বাবাকে মনে পড়ে
বাবার পাঁচ আঙুলে আমার হাত জড়ানো বিকাল
দু’ একটা ধারাপাত ছুঁয়ে অংক ভুলে আজও হিসেবে কেমন গোলমেলে...
পাখির বাসা যে মাঝেমাঝেই বদলায় কোকিল বেশ জানে
তাই তো দেখো আজ সন্ধ্যাটায় তোমাকে ভীষণ খুঁজি...
একলা পথিকের ইউটার্ন কেউ দেখে না জানো!
সে তখন আপন মনে দেশের দিঘিটার কথা মনে করে,
জল সাঁতারে আঙুলে চুপসানো শীতল ত্বকে আজ কলম সাক্ষী
আমাজনের গভীর শিঁকড়ের নাম শৈশব ঠিক জানতো
বিস্মৃতিগুলোর চাতুরতায় মানচিত্র কেমন বদলায়!

কেউ কি আমাকে বলবে, সেই পাগলী মঙ্গলার খবর?
কালের গর্ভে কোন খাতে তাকে রাখা হয়েছে!
যখন অনেক মস্করা আর ছেঁড়া রুটিতে ওর ময়লা দাঁত দেখতাম!
একটা স্রোত, তবুও কি উৎস ছিলো না কোনো ঘাটে!
স্তরে স্তরে মাঙ্গলিক উচ্চারণগুলো সুতোয় বাঁধা একগুচ্ছ ভৌম সময়...
মুঠোর মধ্যে আলগা সেতুর বন্ধন জুড়ে একটা তাম্রলিপ্ত বন্দর!
পরিশ্রমী নাবিকের মতো আজও নোঙর বাঁধবে, স্থল খুঁজছে,
ব্যতিক্রমী বর্ষাতি আর বাবার আঙুলে পৌঁছাতে পারে না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন