শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

রিয়া চক্রবর্তী




প্রেমের দিন


আজ পৃথিবীময় প্রেমের গন্ধ। আমার শহরে ভালোবাসার পুজোর আছে ছন্দ। তর্কে জানি হারবো আমি, ভালোবাসার দিন! সে আবার কী? তবে বাকিদিন সব মেকি নাকি? আজকের দিন আজই থাকে, কাল কি হবে জানিনা। অতো হিসেব বুঝিনা আমি, কোনো নিয়ম মানিনা। কিছু হিসেব না মিললেই ভীষণ  ভালো লাগে ! কিছুটা সময় মনের মাঝে এমনই দোলা লাগে।
মনের কোনে মেঘ জমেছে কদিন ধরেই বেশ, বর্ষনও হয়েছে অঝোর, চোখ জানলায় রেশ।সকাল থেকেই হিমেল হাওয়া, শিরশিরানি ঘাসে। খাটের পাশে জানলা খোলা বৃষ্টি যদি আসে!  কদিন ধরেই ,কেউ জানে না, চুপ থেকেছি, মেঘ মেখেছি আর, বরফ গন্ধ শিরায় শিরায়,ওরে  ফাগুন  একটুখানি স্বপ্ন দিবি ধার?
আমি কিন্তু হাসতে পারি,কষ্ট মেখে মুখে। চলতে পারি তালে তালে সুখে ও অসুখে। মাঝেমধ্যে রোদ ঝলমল আকাশের কোণে, বন্ধ রাখি মন জানালা, অতি সঙ্গোপনে। এখন আমার একলা আকাশ মেঘের সামিয়ানা ,আর আছে এক রূপকথার দেশ, কাউকে বলতে মানা। মেঘের পরে মেঘ জমে। মেঘ গুঁড়িয়ে নদী।পাহাড় চিরে নামতাম ঠিক, আগুন হতাম যদি!
আজ দিনটা প্রেমের।দিনটা ভালোবাসার। আজ দিনটা ভাঙা গড়ার,  দিনটা নাকি আশার।তাই আকাশ, নদী, মেঘ ফাগুনের প্লাবন দিলো ডাক।লবণ জলের চোখের পাতা ভেজাই না হয় থাক।


বৃষ্টি বিলাস


নিজের সাথে আমার নিজের ছিলো অনেক কথা, খুনসুটি, ঝগড়া, আবদার, মান, অভিমান।এতো কথার মধ্যেও আমি কিন্তু কোনোদিন কথা দিইনি গুছিয়ে সংসার, নিকানো উঠোন আর পরিপাটি আলনার অথবা, রান্নায় নিখুঁত টক-ঝাল-মিষ্টির মাপ।কিংবা নির্ভুল পুজোর আসন।  বড় বেশী দামাল ছিলাম আমি।সারাদিন দস্যিপনায় ভরপুর।দাদু ডাকতেন,আদুরে বিড়াল। খেতে বসেই বলতেন বিড়াল কিন্তু আমার পাশে বসবে। আমিও লেজ গুটিয়ে দাদুর পাশে। দাদুর গল্পের ঝুলি থেকে গল্পেরা তখন টুপ করে চলে আসতো আমার ঝুলিতে।
মাঝেমধ্যে বিকেলে ছাদে যেতাম আর আমার প্রিয় পায়রাগুলো পায়ের কাছে এসে ভীড় করতো। দুহাতের মুঠো ভর্তি থাকতো ওদের জন্য খাবার। ওদের সাথে বকম বকম করতে গিয়ে কখন যে সন্ধ্যে হয়ে যেতো খেয়ালই করতাম না। তারপর ঠাম্মা উঠতেন হাতে চিরুনি নিয়ে ছাদে উঠেই বকুনি । এই ভরসন্ধ্যে বেলায় চুল খুলে কেউ ছাদে ঘোরে! বেশ লম্বা চুল ছিলো আমার। ঠাম্মা বাঁধাতে গিয়ে হিমশিম খেতেন।আবার কখনো জানলার খড়খড়িতে লুকিয়ে থাকা চোখ।দুপুর বেলার এক্কাদোক্কার ছক। আমি তখন বড্ডো আলস। হাত ব্যথা হবার ভয়ে চুল খোলাই রাখতাম।আমার তখন এই আদুরেপনায় সুখ।
ঠাম্মা ডাকতো,রানী বলে। এই শব্দটায় কেমন যেনো দাম্ভিকতার ছোঁয়া। শব্দটায় তখনও কোন পেঁয়াজ, রসুন সাঁতলানো ফোড়ন  পড়েনি।রানী নামেই হয়তো অলক্ষ্যে হেসেছিলেন সেই সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার।
 যখন বৃষ্টি হতো। লুকিয়ে যেতাম ছাদে।  ভিজতাম ইচ্ছেমত। আর তারপর হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো। সারা সিঁড়ি ভিজিয়ে নেমে আসা নীচে। আবার কখনো রোদ পোহানো ছাদের রেলিং ধরা মন।আবার কখনো  মেঘবিলাসি ঠাকুরঘরের হাজার আলোর প্রদীপ। ঘরের কোনের খাঁজে খাঁজে চড়ুই পাখির পালক। আমি বড্ডো সেকেলে। হাতের রেখায়, পথ চিনেছি গহীন বনে তুমুল ঝড়ে। আলতা পাতা-কাজল লতা চোখের কোণের জল। তুলসি মঞ্চ, আকাশ প্রদীপ, হীমেল হাওয়ার রাত।একলা ছাদের, একলা দুপুর, একলা মনের সাথ।
 বড্ডো অনিয়মে চলি আমি। নিয়ম মেনে চলার নামতাই মুখস্থ নেই আমার। বদলে যাওয়া, নিয়মগুলোয় বদলে নেওয়া সহজ?তবুও রোজ বদলাই আমি, দিনের সাথে রাতের হাওয়া চাদরে রোজ বদলাই।রেখে দিই ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির ছোঁয়া।
এইতো, শুধু এই টুকুই, ভুল নামতার সাথ।তবুও হাসতে পারি যখন তখন সন্ধ্যে কিংবা রাত। কখনও মেঘ পেরিয়ে আসতে খুশির, মাস কয়েকের  আড়ি, মন খারাপের বাদলা দিনে বৃষ্টি বিলাস বাড়ি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন