শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

অশোক তাঁতী

অপ্রকাশিত বেড়াল 


বেড়ালটা আর কখনো আসেনি।

পোষ্টমডার্নের ভেতর দিয়ে সমীর রায়চৌধুরী কয়েকটা বেড়াল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। ম্যাকাভিটি থেকে মা ষষ্ঠী সবার বেড়াল সেখানে ছিল। কিন্তু এই বেড়ালটা সেখানে ছিল না। এটা শুয়েছিল আমার পায়ের কাছে। রান্নাঘর, বারান্দা, বা অন্য যে কোনো জানালা থেকে বেড়াল ঢুকলেও আর কখনো বেডরুমের জানালা দিয়ে কোনো বেড়াল সোজা আমার বিছানায় আসেনি। এই বেড়ালের হদিশ সমীর পান নি। তখন সমীরের সাথে আমার আলাপ হয় নি। আলাপ হলে বেড়ালের স্মৃতিটা সমীরকে দিতাম কিনা ঠিক নেই। কত স্মৃতিই যে গা লেপটে একা একা পড়ে আছে, তার হদিশ আমার কাছেও নেই। সমীরের সাথে আমার একবারই দেখা  হয়েছে। তখন ওনার বাগানের নারকেল গাছের নীচে একটা বেড়াল রোদে নিজের থাবা শুকনো করছিল। নির্জন দুপুরে সমীরের মহাভাষ্য ওর থাবার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলযদিও বেড়ালটাকে আমি দেখতে পাইনি। তবুও সেটা স্মৃতিতে থেকে গেছে।

একতলা বিয়েবাড়ির এই ঘরে নতুন তাঁতের শাড়ি পরে আমি একা। বিশ্রী ভারী গয়নাগুলো গায়ে ফুটছে। জানালা টপকে তখন ও এসে বসল আমার কাছটাতে। এন্টার দ্য ড্রাগন সিনেমার কালো বেড়ালের মতো ও আমার কোলে আসে না। একটা সোনালী রেখার মতো বেড়ালটা আমার হাতের সীমার মধ্যে শুয়ে থাকে। নিশ্চিন্ত। যেন এমনি করেই ও রোজ এখানে আসে। সারা দুপুর শুয়ে শুয়ে সে আমার সাথে গল্প করল। সারা বিকেল শুয়ে শুয়ে আমার সাথে গল্প করল। সারা রাত শুয়ে শুয়ে সে আমার সাথে গল্প করল। আশ্বাস দেবার মতো করে আমার হাতের তালুতে সে নরম শরীর বুলিয়ে দিল। জাঁতিটা যত্ন করে বালিশের নীচে ঠেলে দিল। পরদিন বউভাত। পরদিন থেকে বেড়ালটা আর আসেনি।

এখন ভাবি, সত্যিই কি বেড়ালটা আমার পাশে বসেছিল? বিছানাতে ওর শরীরের  দাগ দেখার জন্য হাতড়ে বেড়াই। নতুন মাড়ের খসখসে গন্ধ নয়, ওখান থেকে আশাহত ম্যাড়ম্যাড়ে একাকীত্ব উঠে আসে। এই বিছানাটা সেটা নয়। বিছানার পাশে জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকাই। সেই ঘরের চারপাশটা এমন দমবন্ধ ছিল না। ভেতরটা মুচড়ে ওঠে। উঠে পড়ি। বাড়িটাকে খুঁজতে হবে। বেরিয়ে চারদিকে ছুটে বেড়াই। তেমন স্বপ্নের মতো বাড়িটা কোথাও নেই! বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। অদ্ভুত! বাড়িটা যেন কখনই ছিল না। বাড়িটাকে কি আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম!

বেড়ালটার জন্যে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঠিক যেমন আমার না জন্মানো বাচ্চাটার জন্য।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন