আকাশবাণী
এম পি-র গভীর জঙ্গলে এক বিশাল বৃদ্ধবৃক্ষের প্রশস্থ শাখার
উপর গোপন পাতা ঘেরা পাখির বাসার ন্যায় কাঠকুটোর আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত এক হরিজন গর্ভবতী
প্রসবের দিন গুনছিলো। পার্থিব মাটি বিষাক্ত। আকাশে আর ঈশ্বরের দোয়া নেই। তবু তার
কাছে স্বপ্নাদেশ। না স্বপ্নাদেশ ঠিক নয়, আকাশবাণী।
‘মাটিতে নয়, নয় আকাশে / এ সন্তান জন্মাও বৃক্ষ শাখে’
বিগত নয়মাস ধরে তাই তার মনে কোনোরূপ আক্রোশ নেই। সে জানে, নারী নির্যাতনের এ যাবৎ যত পাপ
ধরাতলে জমা হয়েছে, সে সবের হরণকারী এই গর্ভে বাড়ছে। ঠিক নয়মাস
আগে সে ছিলো ভিলাই স্পেশ্যাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আণ্ডারে নেহাতই এক ওয়েজ লেবার।
একদিন পাঁচজন সাহিব পরপর দিনেদুপুরে সবার
সামনেই... । মুখিয়া চুপচাপ নির্বিকার। রক্তাক্ত কাপড়েই ছুটে গিয়েছিলো লোক্যাল
হরিজন পুলিশ স্টেশনে। উল্টে আরও গালিগালাজ। মধ্যপ্রদেশ সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার মিডিয়া সব দু’দিনেই নীরব। কোনও ফল হয়নি। সে তার দিনমজুরি থেকে একেবারেই বঞ্চিত হয়ে গেল। শিশু ও নারীকল্যাণ দপ্তর, মানব কল্যাণ শাখা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যেই সেই পাঁচজন এসে আবার
নির্যাতন করে গেছে। আবার সে গেছিল থানা। থানা থেকে ফিরতি পথে চৌমাথায় আলো আঁধারিতে
ওরা ফের ছেঁকে ধরল তাকে। টান মেরে তার কাপড় খুলে মাটিতে চিত্ করে পেড়ে ফেলতেই হঠাৎ
যেন তার শরীর থেকে এক তাপহীন আলোর তেজ নির্গত হতে লাগলো। যদিও বা ওরা নাকে কাপড়
ঢেকে ওর গায়ে থুতু ফেলতে ফেলতে ‘সড় গিয়া সড় গিয়া’ বলে চলে গেল, ওই মহিলাটি কিন্তু আশ্চর্য মনোরম স্নিগ্ধতা ও শান্তি অনুভব করল। আর সেই
সময় সে ওই আকাশবাণী শুনতে পেয়েছিল।
এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই তার পেট নড়ে উঠল। ছোট এক ডালের উপর
বসেছিল, হামাগুড়ি দিয়ে কাঠকুটো পাতা ঘেরা মহাবৃক্ষের
শাখা আশ্রয়ে ঢুকতেই পেটের ব্যথা তীব্র হলো। সন্ধের আমেজ। পাখিরা বাসায় ফিরছে। অন্ধকার
ঘনিয়ে এলো। এমন সময় তার জল খসল। তার বাসা থেকে ফোঁটাফোঁটা অদ্ভুত উজ্জ্বল তরল টুপটাপ ঝরে পড়তে লাগলো। অমানুষিক এক প্রসব
যন্ত্রণায় চিত্কার করতে লাগলো সে। সেই নিদারুণ গোঙানির সাথে সাথে একসময় এক বিকৃত মাংসপিন্ডের প্রসব হলো। অসম্ভব বিজাতীয় বর্ণচ্ছটায় আলোকিত হয়ে গেল জঙ্গল। উগ্র
গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। সে হাঁটু মুড়ে ঘুরে তাকাতেই তার শ্বাসকষ্ট ও হিক্কার শুরু হয়ে
গেল। সে দেখল, সেই মাংসপিণ্ডের না আছে মাথা, না পেট, না হাত পা ... একটি বৃহৎ পুরুষাঙ্গ... স্পষ্ট...
মাংসল। দেখা গেল চারপাশের গাছ থেকে পাখিরা সব ধুপধাপ পড়ে যাচ্ছে নিচে। সব গাছগুলো
থেকে সড়সড় করে পাতা ঝরে পড়ছে। জঙ্গলের সমস্ত পোকামাকড়ের আওয়াজ থেমে গেছে। এক সময়
গম্ভীর নিঃশব্দতা। সে দেখল মাংসপিণ্ড আস্তে আস্তে শুকিয়ে ছোট হয়ে অদৃশ্য হয়ে
যাচ্ছে।
এমন সময় আবার সে আকাশবাণী – ‘তোমার সন্তান লক্ষ কোটি অযুত
হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আর তোমার ভয় নেই। তোমার
এই সন্তান সমস্ত পুরুষের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধবে। ক্রূর মানসিকতা। গর্ভের নারী
ভ্রূণ হত্যার প্রবণতা। ক্রমে ক্রমে নিশ্চিহ্ন নারী’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন